ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ উদ্বোধনকালে মাহবুব তালুকদার

ইসি নির্বাচনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে দিতে পারে না

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮

ইসি নির্বাচনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে দিতে পারে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের ইতিহাসে কখনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, কখনও সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে আবার কখনও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। ফলে নির্বাচনী সংস্কৃতিতে কোন ধারাবাহিকতা গড়ে ওঠেনি। এবার একটি পূর্ণাঙ্গ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে ধারাবাহিকতার ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এ জন্য নির্বাচনকে ইসি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে দিতে পারে না বলে মন্তব্য করেছে কমিশনার মাহবুব তালুকদার। সোমবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি নির্বাচন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অতি সামান্য। তারা শুধু চান, ভোটের দিন যেন কেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘেœ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। নির্বাচন সামনে রেখে তাদের এই সামান্য চাওয়াই বিশাল কর্মযজ্ঞে রূপান্তরিত হয়েছে ভোটের মাঠে। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছেন। ভোটকেন্দ্রের সকল অনিময় রোধ, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা আপনাদের দেয়া হয়েছে। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচন সম্পর্কে জনমনে আস্থার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থী যেন আপনাদের দিকে তাকিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে। আপনাদের সর্বোচ্চ শক্তি পুলিশ ও সেনাবাহিনীর চেয়ে কোন অংশে কম নয়। দায়িত্ব পালনে শিথিলতা কখনও বরদাশত করা হবে না। যুদ্ধক্ষেত্রে সম্মুখ সমরে সাফল্যের কোন বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন মাহবুব তালুকদার। বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে, আইন যদি নিজস্ব গতিতে না চলে তাহলে কোন কার্যক্রম আইনানুগ হতে পারে না। সবার জন্য সমভাবে আইন প্রয়োগ না করলে তা আইন নয়, আইনের অপলাপ মাত্র। আইনসিদ্ধ না হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে আমরা নিজেদের প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাই না। ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন ইতিহাসে এক সোনালি অধ্যায়ের রচনা করতে হবে। সেই সোনালি অধ্যায়ের রূপকার আপনারা। জাতির ক্রান্তিলগ্নে মহান দায়িত্ব লাভ করেছেন। আপনাদের অবদান জাতির ইতিহাসে গৌরবগাথা হয়ে থাকবে। উত্তরাধিকার গৌরবগাথায় উদ্দীপ্ত হবে, অনুপ্রাণিত হবে। তিনি বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর নির্বাচন। আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখার নির্বাচন। বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর নির্বাচন। কাজেই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে আমরা কিছুতেই আমাদের সম্ভ্রম খোয়াতে পারি না। কর্মকর্তাদের সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা ব্যর্থ হলে নির্বাচনও ব্যর্থ হবে। সফল হলে সমগ্র জাতি সাফল্যে উদ্ভাসিত হবে। তিনি বলেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ২৬ দিন বাকি। নির্বাচনের মূল দায়িত্ব পালন করেন প্রিসাইডিং অফিসার। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একজন করে প্রিসাইডিং অফিসার থাকেন। সার্বিক বিবেচনায় তিনিই সঞ্চালক। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরও নতুন সঞ্চালক তৈরির কারিগর আপনারা। শুধু দেশবাসী নয়, বিশ্ববাসীর নজরদারির সামনে। ইসির প্রতিটি কার্যকলাপ, পদক্ষেপ সবাই প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। সেদিক থেকে এই নির্বাচন আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখার নির্বাচন। একটি মর্যাদাবান জাতি হিসেবে বিশ্বসভায় আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল। স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা ছিল একটি গণতান্ত্রিক দেশ প্রতিষ্ঠা। গণতন্ত্রের মূল কথা আইনের শাসন এবং সবার প্রতি সমভাবে আইনের প্রয়োগ। স্বাধীনতার মাধ্যমে সেদিন ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুন্দর ও সুখী বাংলাদেশের স্বপ্ন রচিত হয়েছিল। শুদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে সেই স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিয়ে সবাই মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে সোমবার ১৩ জেলার ৪০৮ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
×