ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত জনযোদ্ধাদের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি ॥ মোজাম্মেল হক

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮

মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত জনযোদ্ধাদের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি ॥ মোজাম্মেল হক

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত জনযোদ্ধাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি বলে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সরকারে থেকে এসব বীর জনযোদ্ধার খেতাব নিয়ে কাজ করতে চাইলেও তিনি তা পারেননি। এটি তার একটি কষ্ট বলে স্বীকার করেছেন। এ সময় রাজাকার তালিকার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশে দুই ধরনের রাজাকার আছে- সক্রিয় রাজাকার ও নিষ্ক্রিয় রাজাকার। সোমবার নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়াউদ্দিন স্মৃতি পরিষদ’ আয়োজিত ‘একাত্তরে সুন্দরবন’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদে বার বার আমি চেষ্টা করেছি মুক্তিযুদ্ধে খেতাবের বিষয়ে নতুন উদ্যোগ নিতে কিন্তু গত পাঁচ বছরে সেটা পারিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা দেখলে ভবিষ্যতে মানুষ মনে করবে-এটি ছিল মূলত সামরিক যুদ্ধ, কারণ প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ খেতাব সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা পেয়েছেন। কিন্তু প্রকৃত অর্থে মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ। এ যুদ্ধে দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছর আমি অনেক চেষ্টা করেছি এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারিনি। এটা আমার একটা কষ্ট। কারণ মেজর জিয়াউদ্দিনের মতো সামনের সারির বীরযোদ্ধাও কোন খেতাব পাননি। এ সময় জনযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ও সাহসী যোদ্ধাদের খেতাব দিয়ে স্বীকৃতি দান না করা অবিচার উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমি সরকারে থাকলেও সরকারের কাছে দাবি থাকবে-এ বিষয়ে যে অবিচার হয়েছে সে বিষয়ে যেন উদ্যোগ নেয়া হয়। যারা স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদানের জন্য ইতোমধ্যে খেতাব পেয়েছেন তাদের বিষয়ে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু খেতাব পাওয়ার মতো আরও যোগ্যতা যাদের আছে তাদের মূল্যায়ন করা দরকার। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী বলেন, খেতাব দেয়ার জন্য গঠিত কমিটির অন্যতম ছিলেন সাবেক বিমান বাহিনীর প্রধান ও মন্ত্রী এ কে খন্দকার। তিনি মুক্তিযুদ্ধে কী ভূমিকা পালন করেছেন, আর মেজর জিয়াউদ্দিনরা কী করেছেন তা জাতি জানে। তাই জিয়াউদ্দিনের মতো মাঠে থেকে যারা যুদ্ধ করেছেন তাদেরকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হোক। বইটি নিজের কাজের জন্য উপকারে আসবে জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বলেন, আমরা রাজাকারের তালিকা করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এ বইয়ে বেশকিছু রাজাকারের তালিকা আছে, এটা আমাদের মন্ত্রণালয়ের কাজে আসবে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নিজামী- মুজাহিদরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রাজাকারদের তালিকা সরিয়ে নষ্ট করে গেছে। এ কারণে আমাদের তালিকা পেতে সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, ’৭১ সালে রাজাকারদের ভাতা দেয়া হতো। সেই ভাতাপ্রাপ্ত রাজাকাররাই প্রকৃত রাজাকার। মন্ত্রী বলেন, রাজাকার দুই প্রকারের- সক্রিয় রাজাকার ও নিষ্ক্রিয় রাজাকার। পাকি শাসকদের হুকুমে অনেক স্থানীয় নেতা বিভিন্ন জনের নামের তালিকা বানিয়ে জমা দিয়েছেন। এদের অনেকে জানতেনও না যে তাদের নাম রাজাকারের তালিকায় আছে, এরা নিষ্ক্রিয় রাজাকার। আর সক্রিয় রাজাকার পাকিস্তানের দোসরদের হুকুম তালিম করে বাংলাদেশের মানুষকে অবর্ণনীয় নির্যাতন করেছে। মন্ত্রী বলেন, আমি কাউকে বাঁচানোর জন্য এসব কথা বলছি না। একাত্তরে আমার নামও রাজাকারের তালিকায় তুলে দেয়া হয়েছিল। আমরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এসব ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর অনেক মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারদের সঙ্গে মিশে গেছেন। কিন্তু কোন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেনি, পারবেও না। মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ অর্জন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর অনেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে ভয় পেতেন, কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেয়ায় নির্যাতিত পর্যন্ত হয়েছেন। ’৭৫ সালের পরও যারা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে মাথা উঁচু করে কথা বলেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মেজর জিয়াউদ্দিন। ১৯৭১ সালে মেজর জিয়াউদ্দিন যেমন কাউকে ভয় পাননি তেমনি ৭৫ সালেও তার নীতি আদর্শের মধ্যে কোন পার্থক্য হয়নি। আমি যতদূর জানি মেজর জিয়াউদ্দিন মৃত্যুর সময় কষ্ট করেছেন। কিন্তু তিনি কারও কাছে সাহায্য চাননি। এটাই মেজর জিয়াউদ্দিনের বৈশিষ্ট্য। মেজর জিয়াউদ্দিনের কর্মের কথা জাতিকে যত বেশি জানাতে পারব ততই নতুন প্রজন্ম লাভবান হবে। এ ছাড়া ওয়ার হিরো হিসেবে জিয়াউদ্দিনের নামে ঢাকায় সড়কের নামকরণের বিষয়েও আশ্বাস দেন মন্ত্রী। বইটির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, মেজর জিয়াউদ্দিনের অবদান ‘একাত্তরে সুন্দরবন’বইয়ে উঠে এসেছে। যিনি অনেক পরিশ্রম করে বইটি লিখেছেন তাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই।
×