ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম দিনে আপীল করেছেন ৮২ জন

প্রার্র্থিতা ফিরে পেতে সংক্ষুব্ধদের ভিড় নির্বাচন কমিশনে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮

প্রার্র্থিতা ফিরে পেতে সংক্ষুব্ধদের ভিড় নির্বাচন কমিশনে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাতিল হওয়ার পর প্রার্থিতা ফিরে পেতে এবার নির্বাচন কমিশনে ভিড় করছেন তারা। রবিবার বাছাইয়ে সারাদেশে তিন শ’ আসনে ৭৮৬ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এর মধ্যে যেমন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া রয়েছেন তেমনি দলের হেভিওয়েট প্রার্থীও রয়েছেন। রয়েছেন আলোচিতরাও। প্রার্থিতা ফিরে পেতে শেষ ভরসা হিসেবে আদালতে যাওয়ার আগে কমিশনে গিয়ে আপীল দায়ের করছেন বাতিল হাওয়ারা। সোমবার প্রথম দিনে মীর মোহাম্মাদ নাসির, রেজা কিবরিয়া, গোলাম মাওলা রনিসহ বিভিন্ন দলের ৮২ সম্ভাব্য প্রার্থী কমিশনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপীল করেছেন। এদিকে কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বাছাইয়ে সারাদেশে তিন শ’ আসনের মধ্যে বিএনপির ১৪১ এবং আওয়ামী লীগের ৩ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তিন শ’ আসনের মধ্যে ২৯৫ আসনে বিএনপি ৬৯৬ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করে। অপরদিকে ২৬৪ আসনে আওয়ামী লীগের ২৮১ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। বাছাইয়ে সারাদেশে তিন শ’ আসনে ৩ হাজার ৬৫ প্রার্থীর মধ্যে ৭৮৬ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। সংক্ষুব্ধ প্রার্থীরা এখন রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে আপীল শুরু করেছেন। সোমবার সকাল থেকে নির্বাচন কমিশনে বাতিল হওয়া প্রার্থীদের আপীল আবেদন গ্রহণ শুরু হয়। আগামী বুধবার পর্যন্ত এই আপীলের সুযোগ থাকছে। সকাল দশটা থেকে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনের অভ্যর্থনায় আবেদন নেয়া শুরু হয় প্রার্থীদের। আগেই সেখানে বিপুল প্রার্থী ও তাদের অনুসারি ভিড় শুরু করেন। তথ্য-প্রমাণসহ ইসিতে অভিযোগ দায়ের করছেন। ইসি কর্মকর্তারা জানান, সংক্ষুব্ধরা বুধবারের মধ্যে অভিযোগ করতে পারবেন। পরে তাদের আবেদনের ওপর ৬ থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুনানি করে সিদ্ধান্ত দেবে ইসি। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রিটার্নিং কর্মকর্তার মনোপুত না হলে সংক্ষুব্ধরা কর্তৃপক্ষের কাছে আপীল করতে পারবেন। সেখানেও যদি তিনি সন্তুষ্ট না হন তাহলে আদালতে যেতে পারবেন। এদিকে প্রথম দিনেই রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে আপীল করেছেন বগুড়ার একটি আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল হওয়া হিরো আলমও। কমিশনে আপীল শেষে পটুয়াখালী-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী গোলাম মাওলা রনি বলেন, তিনি কমিশনের কাছে ন্যায়বিচার পাবেন। বিশ্বাস করি, এই নির্বাচন কমিশনের মেরুদ- আছে। তারা সরকারের তল্পিবাহক নয়। নির্বাচন কমিশন জুডিসিয়ারি বোর্ড। আমি এখানে বিচারপ্রার্থী। আশা করছি সুবিচার পাব। হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে গোলাম মাওলা রনির মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন, তাতে ভুল করে স্বাক্ষর দেয়া হয়নি বলেও উল্লেখ করেন রনি। বলেন, প্রথমত এটা একটা সাধারণ ভুল ছিল। সাধারণ এ ভুলের কারণে অতীতে কখনও কোন মনোনয়ন বাতিল হয়নি। আইনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, গুরুতর নয়, এমন ত্রুটি ধরা পড়লে আমি সংশোধনের সুযোগ পাব- আইনে বলা রয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছিলাম ভুল সংশোধনের জন্য। কিন্তু আমাকে সে সুযোগ দেয়া হয়নি। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সোমবার সকাল দশটা থেকেই সংক্ষুব্ধ প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন জানাতে শুরু করেন। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলে প্রার্থীদের আপীল গ্রহণ। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন সংক্ষুব্ধ প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোন ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ইসিতে আপীল করতে পারবেন। যাদের মনোননয়নপত্র বৈধ করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা, সে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও আপীল করা যাবে। একটি মূল কপিসহ সাতটি কপি স্মারকলিপি আকারে নির্বাচন কমিশন সচিব বরাবর আপীল করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। প্রতিদিন বিকেল পাঁচটার মধ্যে আপীল দায়ের করতে হবে। আগামী ৬ ডিসেম্বর থেকে এসব আপীল আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হবে। এজন্য যেসব প্রার্থীর ঋণখেলাপীর দায়ে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে, সেসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে কমিশনে আবেদনের জন্য বলা হয়েছে। আগামী ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে আপীল শুনানি করে নিষ্পত্তি করবে কমিশন। কমিশনে আপীলে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হলে শেষ ভরসা হিসেবে প্রার্থীরা আদালতে রিট দাখিল করতে পারবেন। আদালত থেকে প্রার্থিতা বৈধ হিসেবে ঘোষণা করলে সেই প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। আদালতে কোন প্রার্থি অবৈধ হলে তিনি আর নির্বাচন করতে পারবেন না। গত ৮ নবেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। ১২ নম্বেরের পুনর্তফসিল অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর হবে এই নির্বাচন। ইতোমধ্যে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল ও বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতে পারবেন। ১০ ডিসেম্বর থেকে ভোটযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে প্রার্থীদের মধ্যে। আচরণবিধি অনুযায়ী ২১ দিন প্রচারের সুযোগ পাচ্ছেন। দলীয় প্রার্থীরা দলের প্রতীকে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ইসির দেয়া প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেবেন।
×