ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খেলাপী ঋণের কারণে বাদ পড়েছেন শতাধিক প্রার্থী

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮

খেলাপী ঋণের কারণে বাদ পড়েছেন শতাধিক প্রার্থী

রহিম শেখ ॥ খেলাপী ঋণের কারণে নির্বাচন থেকে বাদ পড়েছেন অন্তত শতাধিক প্রার্থী। এ তালিকায় কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থীও রয়েছেন। এরমধ্যে রয়েছেন- জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, বিএনপির মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া, চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার ছেলে সামির কাদের চৌধুরী, আসলাম চৌধুরীসহ আরও অনেক প্রার্থী। সংশ্লিষ্ট জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা এসব প্রার্থীকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেন। নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন ছিল গত ২৮ নবেম্বর। ওই সময়ের মধ্যে যেসব প্রার্থী ঋণ নিয়মিত করেননি তারা নির্বাচনে অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-৯ আসনে আফরোজা আব্বাসের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকে ঋণখেলাপী হওয়ার কারণে। ডাচ্ব্যাংকে গ্যারান্টার হিসেবেও তিনি খেলাপী বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) জানিয়েছে। সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ঢাকা-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনের মনোনয়নপত্রও এক লাখ টাকা ঋণ খেলাপের কারণে বাতিল হয়েছে। ঋণ খেলাপীর কারণে ঢাকা-২০ আসনে ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজউদ্দিন ও জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহম্মেদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। বিএনপির প্রয়াত নেতা নাসিরউদ্দিন পিন্টুর স্ত্রী ঢাকার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার নাসিমা আক্তার কল্পনা ঢাকা-৭ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পেলেও তার প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে খেলাপী ঋণের কারণে। ঢাকা-৫ আসনে বিএনপির সেলিম ভূঁইয়ার মনোনয়ন বাতিল হয়েছে একই কারণে। এছাড়া ঢাকা-৪ আসনে বিকল্পধারার কবির হোসেন (ব্র্যাক ব্যাংকে ঋণখেলাপী), স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মালেক (ঋণ-সংক্রান্ত তথ্য দেননি, সিটি ব্যাংকে ঋণখেলাপী), স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ নজরুল ইসলাম (সোনালী ব্যাংকে ঋণখেলাপী)। একই অভিযোগে ঢাকা-১০ আসনে গণফোরামের খন্দকার ফরিদুল আলম; ঢাকা-১৪ আসনে বিএনপির সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক ও জাকের পার্টির কায়সার হামিদ ও জাকির হোসেন; ঢাকা-১৭ আসনে বিএনএফের প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদা বাদ পড়েছেন। বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার ছেলে সামির কাদের চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ঋণখেলাপী হওয়ার কারণে। গিয়াস উদ্দিন চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) ও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) এবং সামির কাদের চট্টগ্রাম-৭ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়া বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ভাই গিয়াস কাদের চৌধুরী। বছর তিনেক আগে পুঁজি সঙ্কটের কারণে ঢাকা ডায়িং নামে গিয়াস উদ্দিনের শিল্পকারখানাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ছেলে সামির চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটি চেকের মামলায় ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর ছয় মাসের কারাদ- ও ৪০ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছিল আদালত। মামলাটি করেছিল চট্টগ্রামের বায়েজিদ স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম-৪ আসনে বিএনপির আসলাম চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এবি ব্যাংকসহ ২৭টি ব্যাংকে তার খেলাপী ঋণ থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব। ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’র সঙ্গে ভারতের দিল্লীতে ‘সরকার উৎখাতে বৈঠকের অভিযোগে ২০১৬ সালের ১৫ মে ঢাকা থেকে গ্রেফতার হন তিনি। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে মীর মোঃ হেলাল উদ্দিনের, চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও- বোয়ালখালী) আসনে এম মোরশেদ খানের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে এলডিপির এম এয়াকুব আলী ঋণখেলাপীর দায়ে বাদ পড়েছেন। তিনি এলডিপির দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক। ঋণখেলাপীর অভিযোগে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকীর। তিনি টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) ও টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। অগ্রণী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকে তার খেলাপী ঋণ ছিল। জানা গেছে, খেলাপীঋণ নিয়মিত করতে কাদের সিদ্দিকীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি আবেদন করা হলেও নানা অসঙ্গতি থাকায় শেষ পর্যন্ত তা নিয়মিত করার অনুমতি মেলেনি। ঋণখেলাপীর কারণে টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে বিএনপির প্রার্থী ফকির মাহবুব আনাম স্বপন, টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী নুর মোহাম্মদ খানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। হবিগঞ্জ-১ (বাহুবল-নবীগঞ্জ) আসনে গণফোরামের প্রার্থী অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। সিটি ব্যাংক থেকে নেয়া ক্রেডিট কার্ডের কিস্তি অপরিশোধিত থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। রেজা কিবরিয়া সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে। সম্পপ্রতি তিনি গণফোরামে যোগ দেন। ভোলা-১ আসনে বিএনপির গোলাম নবী আলমগীরের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান এ রহমান সন্সের ঋণ অনাদায়ী থাকায় এ ব্যবস্থা নেয়া হয়। তার আইনজীবী ২৭ নবেম্বর ঋণের কিস্তি দিলেও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পরিশোধ দেখানো হয়নি বলে তিনি দাবি করেছেন। খেলাপীঋণের কারণে পটুয়াখালী-১ আসনের বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। তিনি সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের গুলশান শাখার ঋণখেলাপী। পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপির শাহজাহান খান, ভোলা-১ আসনে বিএনপির গোলাম নবী আলমগীরের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। বাগেরহাট-১ আসনে জাতীয় পার্টির আহমেদ জোবায়ের, সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বিশ্বজিৎ সাধু, শেরপুর-১ (সদর) আসনে বিএনপির হযরত আলীর, ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে ইয়াসমিন আক্তার পপির প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। কুড়িগ্রাম-৩ আসনে বিএনপির আবদুল খালেকের, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির মেজর (অব) আখতারুজ্জামানের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। ঋণখেলাপী হওয়ায় রাজশাহী-৫ আসনে নাদিম মোস্তফার মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। তিনি বিএনপির সাবেক সাংসদ ছিলেন। ঋণখেলাপীর কারণে গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী) আসনে বিএনপির রফিকুল ইসলাম, গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনে বিএনপি মনোনীত নাজমুল ইসলাম প্রধান, গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক সরকারের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এছাড়া একই অভিযোগে জামালপুর-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী নঈম জাহাঙ্গীর, বগুড়া-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী টিপু সুলতান, বগুড়া-৫ আসনে বিকল্পধারার মাহাবুব আলীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। ঋণখেলাপী হওয়ায় নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনে জাতীয় পার্টির আলাউদ্দিন মৃধার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে জাসদের (ইনু) প্রার্থী রোকনুজ্জামান ৩১ হাজার টাকার ঋণখেলাপী হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। একই অভিযোগে কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (বাদল গ্রুপ) মনোনীত রেজাউল হকের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এছাড়া কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মেহেদী হাসানের, জাকের পার্টির তসির উদ্দিনের ও সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের রোকনুজ্জামান রোকনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। খেলাপীঋণের কারণে মনোনয়ন বাতিল হয়েছে ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনে বিএনপির আবুল বাশার আকন্দের। এছাড়া লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে লায়ন এম আউয়াল (জাকের পার্টি), একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুব আলম; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে বিএনপির আখতার হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির দেলোয়ার হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে বিএনপির কাজী নাজমুল হোসেন, মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিবুল কাদির চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।
×