ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাওলাদারেরটা বাতিল হলো কিভাবে?

মনোনয়ন বাতিল সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার ॥ ও. কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮

মনোনয়ন বাতিল সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার ॥ ও. কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আসন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিলে সরকারের সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ বিএনপির পক্ষ থেকে তোলা হয়েছে, তা নাকচ করে দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, মনোনয়ন বাতিলের বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। এখানে সরকারের কিছুই করার নেই। পাল্টা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সরকারের সম্পৃক্ততা থাকলে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল হলো কীভাবে? তিনি বলেন, আমরা একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চাই। কোন অবস্থাতেই নির্বাচনের পরিবেশ ক্ষুণœ হোক তা চাই না। কোন অবস্থাতেই একতরফা অবস্থা তৈরি করে নির্বাচন করতে চাই না। অপজিশন একটি চাকা। মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা ফাঁকা মাঠে গোল দেব, প্রধানমন্ত্রী কোনভাবেই এ ধরনের ইচ্ছে পোষণ করেন না। তবে গতবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে যে অবস্থা তৈরি হয়েছিল, সেটা এবার হবে না। সোমবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ পাল্টা প্রশ্ন রাখেন। মনোনয়ন বাতিল নিয়ে বিএনপির নানা অভিযোগের জবাব দিতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের আইন আছে বাতিল করার। সরকার কোনভাবেই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত না। যদি তাই হতো, তাহলে আমাদের সবচেয়ে বড় শরিক দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব বাদ পড়বেন, এটা কি আমরা চাইব? ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার বিষয়টি তো আদালত আগেই সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছে। দুই বছরের বেশি যারা কারাদ-ে দ-িত, তারা নির্বাচন করতে পারবেন না। এটা উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত, এ বিষয়ে আমাদের তো কিছু করণীয় নেই। আমাদেরও তো অনেকে বাদ গেছে, সেখানে আমাদের কি করার আছে? মনোনয়নপত্র যেসব কারণে বাতিল হয়, সেগুলো তো নির্বাচন কমিশন সবসময় আমলে নেয়। নতুন করে তো কোন আইন করা হয়নি। হাজী সেলিমের মনোনয়ন কেন বাদ হল না এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, হাজী সেলিমের বিষয়ে যদি বলেন, তাহলে আমরা সেখানে দুজন কেন প্রার্থী দিলাম? আমাদের সন্দেহ ছিল হাজী সেলিম বাদ যেতে পারেন। সেজন্য আমরা আমাদের মহানগর দক্ষিণের সভাপতির নাম দুই নম্বরে রেখেছিলাম। যেসব জায়গায় আমাদের সংশয় ছিল যে প্রার্থী নির্বাচনী আইনে টিকবে কিনা, সেক্ষেত্রে আমরা কিন্তু দুইজন প্রার্থী দিয়েছি। আমরা ধরে নিয়েছিলাম হয়তো হাজী সেলিম টিকবেন না। কিন্তু তিনি আইনে টিকে গেছেন, এখানে তো আমাদের কিছু করার নেই। আওয়ামী লীগের জয়ের পথ প্রশস্ত করতেই নামীদামী প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে বলে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মওদুদ সাহেব। খুব বিশ্বস্ত মাধ্যম থেকে জানানো হয়েছিল যে তাঁর মনোনয়নপত্রে কিছু কিছু ত্রুটি আছে। আমি তখন মন্তব্য করেছিলাম মওদুদ আহমদ সাহেব নির্বাচন না করলে আমি খুব কষ্ট পাব। তা নাহলে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন সেখানে হবে না। আমার মধ্যে কিন্তু এই মানসিকতা কাজ করে না। মনোনয়নপত্র বাতিলের প্রতিক্রিয়ায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক অলি আহমেদের অভিযোগেরও জবাব দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, অলি আহমেদ সাহেব আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি কিছু কিছু সমস্যা তুলে ধরেছিলেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ব্যাপারে। আমি তখনই তাঁকে বলেছি, এখন তো প্রশাসন, পুলিশ- সব নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তারপরও আমি দলের সেক্রেটারি হিসেবে চেষ্টা করব যাতে আপনার এলাকায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কোনভাবে ক্ষুণœ না হয়। আমি সেখানে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি, আমরা কোন অবস্থাতেই একতরফা কোন কিছু সৃষ্টি করে নির্বাচনে লড়াই করতে চাই না। তিনি বলেন, গণতন্ত্র দুই চাকার একটি সাইকেল। এক চাকা ক্ষমতাসীন দল এবং আরেক চাকা বিরোধী দল। কোন চাকায় কে থাকবে এটা জনগণই সিদ্ধান্ত নিবে। ফাঁকা মাঠে গোল দিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ধরনের ইচ্ছা কখনই পোষণ করেন না। ফাঁকা বুলি দিতে চাই না, আমরা একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। বিএনপির নির্বাচন বর্জনের হুমকির মধ্যে বাস্তবতা কতটুকু এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর যে হুমকি দিচ্ছে, দেশের জনগণের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। এটাই আমি তাদের কাছে প্রত্যাশা করি। ২০ দলীয় জোটের বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে অনেক নির্বাচন দেখেছি। নির্বাচনের আগে জনমত যেদিকে প্রবল হয় তখন যারা জনমতে পিছিয়ে থাকেন তারা এক ধরনের হতাশায় ভোগেন। তারা (২০ দল) দেখছেন যে তাদের আসলে জেতার সম্ভাবনা কম এবং জনগণ তেমনি সাড়া দিচ্ছে। এমতাবস্থায় তারা অভিযোগ করবে, নালিশ করবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, জনমত কিন্তু একদিকে হেলবেই। একদিকে জোয়ার বইবেই। দুটো জোয়ার তো এক সঙ্গে চলবে না। দুটো গণজোয়ার তো এক সঙ্গে চলবে না। সিডিউল ঘোষণা পর আস্তে আস্তে পরিষ্কার হতে থাকে কারা পরবর্তী নির্বাচনে বিজয়ী হতে যাচ্ছে। কাদের সিদ্দিকীর মন্তব্যের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জয়-পরাজয় নিয়ে অহমিকা প্রকাশ করতে চাই না। যদিও প্রতিপক্ষ জোটের সাজে না। যেমন কাদের সিদ্দিকী সাহেব এমন অহংবোধ করছেন। এই অহংকার কিন্তু পতনের কারণ। কাদের সিদ্দিকী সাহেব আমাদের ১০ থেকে ১৫টা সিট দিচ্ছেন। এখন নিজের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর হতাশায় কত কথাই না বলছেন। তবে আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, কোন অবস্থাতেই নির্বাচনের পরিবেশ ক্ষুণœ হোক এটা আমরা চাই না। আওয়ামী লীগ জোটের শরিকদের ৭০টির বেশি আসন ছাড়ছে না জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বরেন, আমাদের জোটগত ও দলীয়গত প্রার্থী মোটামুটি চূড়ান্ত হয়ে আছে। তালিকা না দিলেও মৌখিকভাবে চূড়ান্ত করে বলা আছে। কিছু কিছু আসনে প্রত্যাহারের শেষ দিনেও হয়তো দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ভোটের দৌড়ে থাকতে চাইবেন। তাদের বিষয়ে আমাদের কঠোর বার্তা দেয়া আছে। আমরা প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করব। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি, করব। আওয়ামী লীগাররা সময়মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবে। তবে প্রত্যাহারের শেষ দিনের পর আর নরম থাকার সুযোগ নেই। আমরা আগেও বলেছি আজীবন বহিষ্কার করা হবে। ২০ দলীয় জোটের নেতা ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ তাঁর নির্বাচনী এলাকায় নিজ খরচে ইভিএম ব্যবহারের আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা ঐক্যফ্রন্টকে জিজ্ঞেস করুন, তাদের উদীয়মান তরুণ মেধাবী নেতা ইভিএম চান। তাহলে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা কেন ইভিএম ব্যবহারের এত বিরোধিতা করলেন? সংবাদ সম্মেলনে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে কোটা আন্দোলনের নেতারা ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা তুলে ধরতে ধানম-িস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে গিয়েছিলেন কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। সেখানে গিয়ে তরুণদের বিভিন্ন ভাবনাসহ চিঠিটি দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হাতে তুলে দেন তারা। এ সময় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ নূর, নুরুল হক নুরু, লুৎফুন নাহার লুমা, সোহেল ইসলাম, মশিউর রহমান, পাভেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, যৌক্তিক দাবি থাকলে আমরা সেটা বিবেচনা করব। শিক্ষার্থীরা এ সময় তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যারা হামলা করেছিল তাদের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে। এরপরও যদি কারও বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা হয়ে থাকে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।
×