ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তানভির আহমেদ

বেশি হাসুন, সুস্থ থাকুন

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮

 বেশি হাসুন, সুস্থ থাকুন

‘সবচেয়ে ব্যর্থ দিনটি হলো সেইদিন, যেদিন কোন হাসি ছিল না।’ হাসি একটা জন্মগত উপহার আমাদের জন্য। হাসি হলো একটি প্রাকৃতিক ওষুধ। এটি আমাদের স্পৃহাকে বাড়ায় এবং সুখ অনুভব করতে দেয়। হাসি এমন একটি জিনিস যা আমাদের আবেগকে সহজে স্পর্শ করতে এবং প্রকাশ করতে দেয়। হাসি নিজেকে এবং নিজের আশপাশের জগৎকে সবচেয়ে বেশি বুঝতে দেয়। আমরা যখন হাসি, তখন পৃথিবীর কোন চিন্তাই আমাদের স্পর্শ করতে পারে না। আমাদের জীবনকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে এবং আমাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তোলে। মাত্র কয়েক মিনিট হাসার পর আমরা হয়ত কয়েক ঘণ্টা স্বস্তি অনুভব করতে পারি। দেখে নেয়া যাক, হাসি আমাদের কি কি শারীরিক ও মানসিক দিকগুলো বদলাতে সাহায্য করে- -রক্তচাপকে কমাতে সাহায্য করে। -শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। -শরীরের ডায়াফ্রাম এবং এবডমিনালসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের পেশির কার্যক্ষমতা বাড়ায়। -শরীরের কিছু টেনশনজনিত হরমোন যেমন- করটিসউল, এড্রেনালিন (cortisol and adrenaline) কমাতে সাহায্য করে। -শরীরের রোগ ধ্বংসকারী কোষগুলো যেমন- Gamma-interferon and T-cells এর কার্যক্ষমতা বাড়ায়। -স্মৃতিশক্তি এবং জানার আগ্রহ বাড়ায়। -কাজে বা পড়ায় মনোযোগী হতে সাহায্য করে, সৃজনশীলতা এবং স্মৃতি বৃদ্ধি করে। -অধিকতর আরাম অনুভব এবং চিন্তামুক্তভাবে ঘুমাতে সাহায্য করে। -ভাইরাসজনিত সংক্রমণকে বাঁধা দেয় যেমন- ঠান্ডা, জ্বর, নাক-মুখ-গলা ব্যথা ইত্যাদি। -খাদ্য হজমে সাহায্য করে এবং পেটের পীড়া কমায়। -আশ্চর্যজনক ব্যাপার, আমরা কল্পনা বা অনুভব করতে পারব না হাসি যে কত উপকারী। বর্তমানে অনেকে মনে করেন ক্যান্সারের চিকিৎসার প্রক্রিয়ায় হাসি থেরাপি খুব সাহায্য করে। -Attitude এ উন্নতি আনে এবং শ্রেয়তর জীবন নির্বাহে সাহায্য করে। -সামাজিক বন্ধন ও সম্পর্ক দৃঢ় করে এবং ভাল মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে সাহায্য করে। কিভাবে হাসি তৈরি হয় আমরা যখন কোন একটা জোকস বা কমিকস বা হাস্যকর কথা বা কাজ দেখি বা শুনি, তখন খুব দ্রুত কিছু ঘটনা ঘটে আমাদের মস্তিষ্কে এবং সেটা কৌতুকটা দেখার বা শোনার আধা সেকেন্ডেরও কম সময়ে ঘটে। কৌতুকটা শোনার পর একটা তড়িত তরঙ্গ তৈরি হয় এবং সেটা আমাদের মস্তিষ্কের সিলেব্রাল করটেক্স নামক নিউরাল টিস্যুর মাধ্যমে বাম হেমিস্ফেয়ার (left hemisphere) পৌঁছায়, বাম হেমিস্ফেয়ার কৌতুকটার শব্দ এবং এর গঠন বিশ্লেষণ করে ডান হেমিস্ফেয়ার এ দেয়, ডান হেমিস্ফেয়ার জোকসটা বুঝতে পারে এবং অসসিপিটাল লবের ভিজ্যুয়াল সেন্সর এরিয়া কৌতুকটার একটা ছবি তৈরি করে, লিম্বিক সিস্টেম তখন আমাদের মজা দেয় বা খুশি করে এবং সেটা বুঝে মস্তিষ্কের মোটর সেকশন আমাদের মিষ্টি হাসি বা অট্ট হাসি হাসায়। হাসির জন্য কি কি করতে পারেন হাসির এতই যদি গুণাবলী থাকে, আসুন আমরা হাসার অভ্যাস করি প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে। চলতে ফিরতে কাজের মধ্যে সব সময় খুঁজতে থাকুন মজার কথা, কাজ বা ঘটনা। সব সময় লজিক দিয়ে না ভেবে একটু লজিক ছাড়াই ভাবুন সবকিছু, দেখবেন সেটা হাসির যোগ্য হয়ে গিয়েছে। চেষ্টা করুন সব সময় কমেডি বই পড়তে, কমেডি ফিল্ম দেখতে, কৌতুকের ক্যাসেট শুনতে। নিজের হাসি না পেলে অন্যের হাসি দেখেও হাসতে পারেন, একজনের ছোট্ট হাসিই হতে পারে আরেকজনের অট্টহাসির কারণ। প্রতিদিন পত্রিকায় কমিকসের পাতায় চোখ রাখুন বা অনলাইনে পড়ু ন কৌতুক। এখনকার দিনে চাইলেই অনলাইনে অসংখ্য কৌতুকের পেজ পাওয়া যাবে। চেষ্টা করতে পারেন হাসির মেডিটেশন করতে। যোগ দিতে পারেন এলাকায় যদি হাসির ক্লাব থাকে, করতে পারেন ইয়োগা ক্লাস। বন্ধুদের নিয়ে প্রতিদিন কিছু সময় আড্ডা দিতে পারেন প্রতিদিনের কর্মক্লান্তিকে ভুলে গলা ফাটিয়ে হাসার জন্য। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে হাসানোর চেষ্টা করুন প্রতিটি কথা বা কাজের মাঝে, এতে দুজনের সম্পর্ক যেমন মধুর হবে, তেমনি হাসি-তামাশার কথা শোনার মাধ্যমে অনেক সময় একজনের ওপর আরেকজনের অভিমান বা রাগ, মুহূর্তের মধ্যে দূর হয়ে যেতে পারে। সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে যাবে, সঙ্গে হাসির ব্যায়ামও হয়ে যাবে। বেশি বেশি হাসুন, সুস্থ থাকুন।
×