স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার টঙ্গী এজতেমার মাঠে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তবলীগ জামাতের সাদবিরোধী ও জামায়াত পন্থীরা। কেবল তাই নয়, তারা দেশের প্রখ্যাত আলেম শোলাকিয়ার ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসুদের বিরুদ্ধেও উস্কানিকমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। এদিকে আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ জানান, ইসলাম কখনই এ ধরনের লাঠালাঠি, মারমুখী তবলীগের কাজ সমর্থন করে না। এটা কখনও তবলীগের কাজই হতে পারে না। শনিবার বিশ্ব এজতেমা ময়দানের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, রবিবার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে টঙ্গী এজতেমার মাঠে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তবলীগ জামাতের সাদবিরোধীরা। তারা সংবাদ সম্মেলনে সাদপন্থী ওয়াসিফুল ইসলাম ও শাহাবুদ্দিন নাসিমকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়াসহ ৬ দফা দাবি জানান। এ ছাড়া আজ সোমবার সারাদেশে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভিক্টোরিয়া পার্ক মসজিদের ইমাম ও তবলীগের মুরব্বি মাওলানা আমানুল হক। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি এজতেমার ১ম পর্ব অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। এজতেমাকে কামিয়াব করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মাঠে প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে হয়। এ কাজ বিভিন্ন কারণে দেরি হয়েছে। ফলে তবলীগের সাথী ও ঢাকার বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্ররা তিন দিনের জামায়াত করে মাঠে কাজ করছিল। সাদপন্থী ওয়াসিফুল ইসলাম ও নাসিমের অনুসারীরা নিরস্ত্র নিরীহ তবলীগের সাথী ও মাদ্রাসার ছাত্রদের ওপর লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র, ইট-পাটকেল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ অবস্থায় প্রশাসনের ভূমিকা ছিল নীরব ও রহস্যজনক। পুলিশ দাঁড়িয়ে দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। লিখিত বক্তব্যে আমানুল হক বলেন, হামলায় নিহত হয়েছে মুন্সীগঞ্জের ইসমাইল ম-ল ও আহত হয়েছে পাঁচ শতাধিক মুসল্লি। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বেশ কিছু মাদ্রাসার শিশু ছাত্রদের চিত্র দেখানো হয়েছে। তারা টঙ্গী মাঠের ভেতরে অবস্থিত মাদ্রাসার ছাত্র। তারা সেখানে থেকে পড়াশোনা করে। বাইরে থেকে কেউ প্রবেশ করেনি। হামলাকারীরা মাদ্রাসা ভবন, মুরব্বিদের আসবাবপত্র ভেঙ্গে তছনছ করেছে।
সাদবিরোধীদের অন্য দাবিগুলো হচ্ছে, আহত-নিহতদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, টঙ্গী ময়দান শূরাভিত্তিক পরিচালিত তবলীগে সাথী ও আলেমদের কাছে হস্তান্তর করা, কাকরাইলের সব কার্যকলাপ থেকে ওয়াসিফ ও নাসিমকে বহিষ্কার করা, সারাদেশে তবলীগের সাথীদের ওপর হামলা-মামলা বন্ধ করা এবং আগামী ১৮, ১৯, ২০ জানুয়ারি এজতেমার করার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তবলীগের সাদবিরোধী অংশের শূরা সদস্য মাওলানা জুবায়ের আহমদ ও মাওলানা ওমর ফারুক। এছাড়া বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতা ঢাকা মহানগর হেফাজতের সভাপতি নূর হুসাইন কাসেমী, হেফাজতের নেতা মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা আবদুল কুদ্দস, মাওলানা নুরুল ইসলাম, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা মামুনুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রবিবার আড়াইটায় নয়াপল্টনে একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন মাওলানা জুবায়ের। এই সংবাদ সম্মেলন উপলক্ষে হোটেলের বাইরে দুপুরে থেকে তবলীগ জামাতের সদস্যরা জড়ো হতে থাকেন। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সংবাদ সম্মেলন শেষ হতে হতে শত শত মুসল্লি নয়াপল্টনে হোটেল জাফরানের সামনে জড়ো হন।
পুলিশের নিয়ন্ত্রণে টঙ্গী এজতেমা ময়দান ॥ স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতা গাজীপুর ও টঙ্গী থেকে জানান, বিশ্ব এজতেমা ময়দানে জোড় এজতেমাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও একজন নিহতের ঘটনায় রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টঙ্গী পশ্চিম থানায় কোন মামলা রুজু হয়নি। তবে ইসমাইল মন্ডল নিহতের ঘটনায় শনিবার রাতে টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক রেজাউল করিম একটি সাধারণ ডায়েরি (নং-০৯) দায়ের করেন। এদিকে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনার পর মুসল্লিদের ফেলে যাওয়া মালপত্র বিতরণে নয় সদস্যের এক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: