ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরাজয়ের ভয়ে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন থেকে সরে যেতে পারে ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮

 পরাজয়ের ভয়ে  ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন থেকে সরে যেতে পারে ॥  কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের আগেই তাদের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করতে না পারা সবচেয়ে বড় পরাজয়। তাদের পরাজয়ের আগাম ইঙ্গিতই হচ্ছে তাদের প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণায় ব্যর্থতা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা থাকলেও মাথা নেই। তাদের এমন কোন ফেস (নেতা) নেই যিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। আর দিন যতই যাবে আগামী নির্বাচনে কারা ক্ষমতায় আসবে তা আরও স্পষ্ট হবে। রবিবার ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘নির্বাচনের মধ্যেও বিএনপি আন্দোলন কর্মসূচী দিতে চাইছে’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বার বার একই কথা বলছি, যারা নির্বাচনের এক মাস আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পরিবর্তন চায়, তারা আসলে নির্বাচন থেকে সরে যেতে চায়। পরাজয়ের ভয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। ‘ড. কামাল হোসেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা, কিন্তু মাথা নন’ উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপিও ইঙ্গিত দিয়েছিল ড. কামাল হোসেন ঐক্যফ্রন্টের নেতা। কিন্তু কামাল হোসেন তো আর দৃশ্যপটে নেই। তিনি নির্বাচন করছেন না। বিএনপি মাথা ছাড়া নির্বাচন করছে। তিনি বলেন, একজনকে ঘিরেই যেকোন দেশেরই নির্বাচন আবর্তিত হয়। আর সেটি হলো যিনি দলের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন তাকে ঘিরেই নির্বাচন হয়। এখানেই তো তাদের (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) ফল হয়ে গেছে। তাদের কোন নেতৃত্ব নেই। রাজনৈতিক দৃশ্যপটের কোন পরিবর্তন আসতে পারে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচনটা হবে। তবে আগামী নির্বাচনে কারা জিতবে সেটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার হবে। নির্বাচন কমিশনে বিএনপির গণগ্রেফতারের অভিযোগ প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোথাও কোন খারাপ আভাস নেই। রাজধানীর কোথাও কোন ভায়োলেন্স হয়েছে? অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে কিংবা ক্ষোভ-দুঃখ নিয়ে ছিটেফোঁটা সমস্যা কিছু কিছু জায়গায় হয়েছে, কিন্তু নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে সুনির্দিষ্টভাবে মির্জা ফখরুলকে বলত হবে, সিডিউল ঘোষণার পর কারা কারা গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়বেন, এটা কী বিশ্বাস করতে হবে? পল্টনের ঘটনায় যারা ভায়োলেন্স করেছে তাদের বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা নিতেই হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনের ২৬ দিন আগে আন্দোলনের ঘোষণা দুঃস্বপ্নের নামান্তর। নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট করতে বিএনপি অনেক উস্কানি দেয়ার চেষ্টা করছে। তবে দেশের জনগণ এখন নির্বাচনের আমেজে রয়েছে। তারা এখন আন্দোলনের মুডে নেই। বিএনপি যতই আন্দোলনের কথা বলুক, জনগণ এখন আর সে মুডে নেই। কিন্তু পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে নানাভাবে উস্কানি দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক মেরুকরণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির নেতৃত্বে রয়েছে বিএনপি এবং অসাম্প্রদায়িক শুভ শক্তির নেতৃত্বে রয়েছে আওয়ামী লীগ। জনগণ আসন্ন নির্বাচনে অসাম্প্রদায়িক শক্তির পক্ষে আওয়ামী লীগকেই বিজয়ী করবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তির ওপর নির্ভরশীল। আর বিএনপি গুজবের ওপর নির্ভরশীল। বিএনপির জনগণের ওপর আস্থা কম। যাদের জনগণের ওপর আস্থা কম তারাই গুজবের ওপর নির্ভর করে। রাজধানীর নয়া পল্টনের বিএনপি কার্যালয় মিথ্যাচার আর গুজবের কারখানা। মনোনয়ন নিয়ে এবার অন্যান্যবারের মতো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া অনেক কমে যাবে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শেষ পর্যন্ত যারা (বিদ্রোহী প্রার্থী) মনোনয়ন প্রত্যাহার করবে না তাদের ক্ষেত্রে আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে বহিষ্কার। যে জোর করবে তার বিরুদ্ধেই এমন ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলের কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করলে তাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। এখনও আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন, এলাকায় কাজ করতে পারছেন না, এটা কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মনোনয়ন তো ঢাকায় হবে, কাজেই যারা প্রার্থী তাকে ঢাকায় থাকতেই হবে। তবে এই মুহূর্তে ঢাকা আছেন এমন প্রার্থীর সংখ্যা বেশি নেই। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছায়ের শেষদিন দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন কেমন হবে এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, যাদের মনোনয়ন নিশ্চিত তারা দল থেকে তেমন ইঙ্গিত পেয়েছেন। আমরা দলীয়ভাবে কিছু কিছু প্রার্থীকে ইঙ্গিত তো দিয়েছি। তারা এলাকায় রয়েছেন, কাজ করছেন। জোট ছাড়া প্রার্থী এমন অনেকেই আছেন তাদেরও কিন্তু আমরা ইঙ্গিত, ইশারা দিয়েছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দন্ডিত ব্যক্তির নির্বাচন না করাটাই ভাল। নৈতিকতার প্রশ্নে আওয়ামী লীগ এটাকে সমর্থন করে। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
×