ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফৌজদারি আদালতে দুই বছরের বেশি দন্ডিত নির্বাচনে সুযোগ পাবে না

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮

  ফৌজদারি আদালতে দুই বছরের বেশি দন্ডিত নির্বাচনে সুযোগ পাবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাবিরা সুলতানার দন্ড স্থগিত করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেছে আপীল বিভাগ। সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের এই সিদ্ধান্তের ফলে সংসদ নির্বাচনে সাবিরা সুলতানার অংশ নেয়ার সুযোগ থাকল না। একই সঙ্গে যারা দুই বছরের বেশি দন্ডিত তাদের জন্যও নির্বাচনের দরজা আটকে গেল। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্য বিশিষ্ট আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এ্যাাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সাবিরা সুলতানার পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী ও আমিনুল ইসলাম। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। আদেশের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, দন্ডিত ব্যক্তিদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে আপীল বিভাগের রায় জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদদের জন্য একটি ‘মেসেজ’। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, এখন তো আর দন্ডিতদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ হবে না। অন্যদিকে সাবিরা সুলতানার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেছেন , সিদ্ধান্ত এখন নির্বাচন কমিশনের । এর আগে গত শনিবার সাবিরা সুলতানার কারাদন্ডের স্থগিত করে দেয়া হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে চেম্বার জজ আদালত। গত ২৯ নবেম্বর যশোর-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাবিরা সুলতানাকে বিচারিক আদালতের দেয়া ছয় বছরের সাজা ও দন্ড স্থগিত করেন বিচারপতি মোহাম্মদ রইস উদ্দিনের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরে সাবিরা সুলতানার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম জানান, বিচারিক আদালতের দেয়া সাবিরা সুলতানার সাজা ও দন্ড স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। এর ফলে এই আদেশের পর থেকে যারা নির্বাচনে অংশ নিতে চান তারা হাইকোর্টে সাজা বা দন্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন করে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তবে গত ২৯ নবেম্বর সুপ্রীমকোর্টের নিজ কার্যালয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘সংবিধান অনুসারে দুই বছরের অধিক সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে অযোগ্য হবেন। তাই হাইকোর্টের এই একক বেঞ্চের আদেশের বিরুদ্ধে আমরা আপীলে যাব।’ এদিকে এর আগে হাইকোর্টে দুটি বেঞ্চ ২৬ ও ২৭ নবেম্বর এ বিষয়ে আদেশ প্রদান করেছে। ২৬ নবেম্বর সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর রায় ফাঁসের মামলায় তার আইনজীবী দন্ডপ্রাপ্ত ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের দন্ড স্থগিত চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ পর্যবেক্ষণসহ আদেশ দেন। সেখানে বলা হয় ,বিচারিক ( নিম্ন ) আদালতের দন্ডের বিরুদ্ধে করা আপীল আবেদন বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দন্ড স্থগিতের বিধান নেই। চাইলে আবেদনকারী আপীল বিভাগে যেতে পারে। আপীল বিভাগ এ বিষয়ে একটি প্রিন্সিপাল সেটেল (নীতি নিষ্পত্তি) করতে পারে। পরবর্তীতে হাইকোর্ট তা অনুসরণ করতে পারে। অন্যদিকে ২৭ নবেম্বর বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমানসহ ৫ নেতা বিচারিক আদালতের দেয়া দন্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে আবেদন করলে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম পর্যবেক্ষণ দিয়ে আবেদন খারিজ করে দেন। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে বিচারিক আদালতে কোন ব্যক্তির দুই বছর বা তার বেশি মেয়াদে সাজা হলে ওই দন্ডের বিরুদ্ধে আপীল চলাকালে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আপীলে সেই দন্ড বাতিল বা স্থগিত হলেই কেবল সাজাপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বলেও জানিয়েছে আদালত। হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন আপীল করেন। ২৮ নবেম্বর বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ‘নো অর্ডার’ প্রদান করেন। আপীল বিভাগের ওই আদেশের ফলে হাইকোর্টের আদেশই বহাল থাকে। রবিবার আপীল বিভাগের রায়ের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি বলেন, দন্ডিত ব্যক্তিদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে আপীল বিভাগের রায় জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদদের জন্য একটি ‘মেসেজ’। দুর্নীতির মামলায় দন্ডিত বিএনপির ৫ নেতার এক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগ বলেন, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে দুই বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য সাজা ও দন্ড হলে কোন ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। ওই রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপীলে গেলে আদালত ‘নো অর্ডার‘ দেয়। যশোর-২ আসনে বিএনপি প্রার্থী সাবিরা সুলতানা বিচারিক আদালতের দেয়া দন্ড ও সাজা বাতিল চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করেন। আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করলে চেম্বার আদালতে যায় রাষ্ট্রপক্ষ। হাইকোর্ট বিভাগের ওই আদেশ স্থগিত করে চেম্বার আদালত। এরপর আপীল বিভাগ চেম্বার আদালতের আদেশ বহাল রাখে। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, যারা নির্বাচন করবেন, রাজনীতি করবেন, তারা নিজেদের সততা বজায় রাখবেন। জনপ্রতিনিধিরা যেন মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত না হন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। এই আদেশে এমন একটি মেসেজ যাবে। আজকের এই আদেশকে একটি সতর্ক বার্তা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, জনগণের প্রতিনিধি হতে হলে নিজেকে সৎ রাখতে হবে। কোন রকম দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে না। এতে তারা নিজেরাই এখন হুঁশিয়ার হয়ে যাবেন। দুর্নীতির দায়ে দন্ডপ্রাপ্তদের একটি স্থগিতাদেশ দিয়ে নির্বাচনের সুযোগ দেয়া সংবিধানের অবমাননা। সংসদ সদস্য পদে থাকাকালে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে তার সদস্য পদ চলে যাবে- এ বিষয়ে এরশাদের মামলা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। সাবিরা সুলতানার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ইতিপূর্বে অনেকেই সাজাপ্রাপ্ত হয়েও আপীল করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। সে সময় তাতে কোন হস্তক্ষেপ করা হয়নি। অথচ আমার মক্কেল তার পক্ষে আদেশ পাওয়ার পর এ্যাটর্নি জেনারেল শনিবার অস্বাভাবিকভাবে চেম্বার আদালত বসান। সেখানে তারা আবেদন করে স্থগিতাদেশ নিয়ে যান। সরকার একদিকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ব্যবস্থার কথা বলছে, অন্যদিকে সরকার আদালতকে ব্যবহার করে একতরফা একটি নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। বিএনপির জনপ্রিয় প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে নানা কৌশলে এগোচ্ছে।
×