ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গোটা দেশকে উন্নত করতে কাজ করছে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮

 গোটা দেশকে উন্নত করতে  কাজ করছে সরকার

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে আমরা একটা সিস্টেমে নিয়ে এসেছি। যেই আসুক, আর কেউ কোন বাধা দিতে পারবে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে। এই এগিয়ে যাওয়া আর কেউ থামাতে পারবে না। আর আমার প্রতিজ্ঞাই ছিল বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলব, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের একটি মানুষ গেলেও যেন তারা অবাক হয়ে তাকায়। ইনশাল্লাহ, আমরা তা করতে পেরেছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশকে আর কেউ অবহেলার চোখে দেখে না। গোটা বাংলাদেশ যেন উন্নত হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। রবিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ‘জাতীয় রফতানি ট্রফি’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নতুন নতুন রফতানি বাজার খোঁজার আহ্বান জানিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা দেশ-বিদেশে ঘোরেন। আপনারাও খুঁজে বের করেন কোন্ দেশের কোন্ কোন্ পণ্যটা আমাদের দেশে উৎপাদন করে সেটা রফতানি করতে পারি। বাজারকে খুঁজে নেয়া এবং পণ্যটা তৈরি করা, সেটাও কিন্তু আপনাদের একটা দায়িত্ব। ব্যবসায়ীদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, যদি কোন রকম সহযোগিতা লাগে অবশ্যই সরকার হিসেবে আমরা তা করব। যদিও সময় এখন সীমিত। আগামীতে নির্বাচন, কি হবে বলতে পারি না। তবে যতক্ষণ আছি ততক্ষণ যা যা প্রয়োজন সেটা করে দিতে পারব, সেটুকু কথা দিতে পারি। আর ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের যে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছি, সেটা কাজে লাগিয়ে আপনারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এফবিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মফিজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য ও খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ রফতানি আয়ের জন্য ৫৬টি প্রতিষ্ঠানকে ‘জাতীয় রফতানি ট্রফি’ প্রদান করা হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যে রফতানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে দক্ষিণ আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সব সময় চাই, আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক। এ লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইপিজেড তৈরি করে দেই। গোটা বাংলাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দেয়ার কথাও পুনর্ব্যক্ত এবং শিল্পায়নের ওপর সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিল্পায়ন ছাড়া কোন জাতির অর্থনৈতিক উন্নতি হয় না। আর আমাদের সরকার ব্যবসা-বাণিজ্য করতে ক্ষমতায় আসে না। আর আমি তো ব্যবসাটা বুঝিও না। আমরা সরকারে এসে ব্যবসা-বাণিজ্যটা যাতে ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ হয় সেই ব্যবস্থাটা করে দিয়েছি। এ বিষয়ে সরকারের টানা ১০ বছর মেয়াদে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে অনেকে আমাদের শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে, জিএসপি সুবিধা দিয়েছে। অন্তত আমি এটুকু দাবি করতে পারি, যেখানেই আলাপ করেছি সঙ্গে সঙ্গে এই সুযোগ পেয়ে গেছি। কিন্তু আমাদের রফতানিযোগ্য পণ্য বাড়াতে হবে। জিএসপি সুবিধা পাওয়ার পর থেকে বহু দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে এবং পণ্য যাচ্ছে। অন্যান্য দেশ যারা দেয়নি তাদের সঙ্গেও আমরা শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশের ফলে সমগ্র বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্মুক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমাদের দেশের সার্বিকভাবে উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। আর সেই সঙ্গে আমাদের যারা কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী, এটা শুধু ছেলেই নয়, ছেলেমেয়ে উভয়েই আমাদের শিল্পে শ্রম দিচ্ছে। বিশেষ করে মেয়েরা তো এখন বেশি এগিয়ে এসেছে। তাই এই জনগোষ্ঠীকে আরও ভালভাবে শিক্ষিত করে ট্রেনিং দিয়ে একটা শক্তিশালী জনগোষ্ঠীতে সৃষ্টি করে তাদের শ্রম ও মেধা কাজে লাগিয়ে দেশকে আরও উন্নত করতে পারব। সে লক্ষ্যে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আগে আমাদের বিদ্যুত ও গ্যাসের সমস্যা ছিল। ইতোমধ্যে আপনারা জানেন আমরা এলএনজি আমদানি শুরু করে দিয়েছি। ফ্লোটিং এলএনজি টার্মিনাল করা হয়েছে। প্রথমটার পর দ্বিতীয়টাও আসবে। আমরা এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি ল্যান্ড বেজ এলএনজি টার্মিনাল করে দেব, যাতে গ্যাসের আর কোন সমস্যা কোথাও না থাকে। সেটার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। যাতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের আরও সুবিধা হয়। একটা শিল্প করতে গেলে যে সমস্ত চাহিদা দরকার হয় তা যাতে পূরণ করা যায় তার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি। সেই সঙ্গে নতুন নতুন বাজার খুঁজে নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির চেষ্টা করে যাচ্ছি। আর ভারতের অসম কুমারীগড় থেকে পাইপলাইনে আমরা ডিজেল, তেল আমদানি করছি। উত্তরবঙ্গে এই তেল আমদানির সঙ্গে সঙ্গে আমরা পাওয়ার প্লান্ট করারও পরিকল্পনা নিয়েছি। সেই সঙ্গে আমরা অন্যান্য অঞ্চল থেকেও যেমন ভারত থেকে বিদ্যুত কিনতে শুরু করেছি। নেপাল ও ভুটান থেকেও আমরা বিদ্যুত নেব বলে আলোচনা হচ্ছে। অর্থাৎ সেখানেও আমরা ইনভেস্টমেন্ট করতে পারব। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, আজকে আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট মজবুত। আমাদের যে উন্নয়ন প্রকল্প তার নব্বই ভাগই নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা অর্জন করেছি এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বিদেশের উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। বাংলাদেশকে আমরা বিশে^র উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এই দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত দেশ হবে ‘বাংলাদেশ’। সেই পরিকল্পনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা ২০২১, ২০৪১ এবং ২১০০ ডেল্টা প্লান হাতে নিয়েছি। এই প্লান নেদারল্যান্ডস সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে করব। যার ফলে বাংলাদেশের এই এগিয়ে যাওয়া আর কেউ থামাতে পারবে না। রফতানি খাতে ট্রফিপ্রাপ্তদের অভিনন্দন ও শুভ কামনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব থেকে বড় মূলধন হচ্ছে আমাদের জনশক্তি। আজকে পৃথিবীর অনেক দেশ কিন্তু বয়োবৃদ্ধদের দেশ হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখন আমাদের যুব সমাজ অত্যন্ত দক্ষ ও কর্মঠ। প্রশিক্ষিত ও দক্ষ যুব সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টিসহ শিক্ষাকে বহুমুখীকরণ করার বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা দারিদ্র্যের হার ২১ ভাগে নামিয়ে এনেছি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য অনেক দূরে যাওয়া। ২০২১ সালের মধ্যে অন্তত আরও চার/পাঁচ ভাগ কমিয়ে আনতে চাই। যেন বাংলাদেশকে আর কেউ দরিদ্র দেশ বলে কোন রকম অবহেলা করতে না পারে। তিনি বলেন, একটা সময় ছিল, আমি নিজেও বিদেশে ছিলাম। আর ১৯৭৫’র ১৫ আগস্টের পর থেকে ছয় বছর রিফিউজি হিসেবে বিদেশে আমাকে এবং আমার ছোট বোনকে থাকতে হয়েছিল। তার পরবর্তীতেও গিয়েছি। এক সময় বাংলাদেশ শুনলেই, মানুষ আগেই নাক সিঁটকাত। বাংলাদেশ মানে ঝড়, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, বাংলাদেশ মানে যেন একটা ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে যাচ্ছি। যেই জিনিসটা আমার খুব কষ্ট হতো, খারাপ লাগত। কারণ আমরা অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন করেছি। ছোটবেলা থেকে আমার বাবাকে দেখেছি, বার বার কারাগারে। বাংলাদেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের কথা যখনই বলেছেন তখনই তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর বাবা জেলে গেলে ছেলেমেয়েদের কি অবস্থা হতে হয়, সেটা হয়ত আপনাদের ধারণা নেই। আমরা কিন্তু ভুক্তভোগী। বঙ্গবন্ধু এই দেশের মানুষের জন্যই জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এত কষ্ট করে দেশটা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে যেখানে মর্যাদা পেতাম আর সেখানে আমাদের এ রকম অবহেলার চোখে দেখবে, এটা আমার কাছে কখনও গ্রহণযোগ্য ছিল না। যে কারণেই আমার প্রতিজ্ঞাই ছিল বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলব, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের একটি মানুষ গেলেও যেন তারা অবাক হয়ে তাকায়। সেভাবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব, তারা বলে যেন ‘বাংলাদেশ’। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। ইনশাল্লাহ, আমরা তা করতে পেরেছি। বাংলাদেশকে আর কেউ অবহেলার চোখে দেখে না। বাংলাদেশকে তারা উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবেই স্বীকৃতি দিয়েছে, সেটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।
×