ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘পার্বত্যাঞ্চলে সাধিত হয়েছে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ’

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮

 ‘পার্বত্যাঞ্চলে সাধিত হয়েছে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পার্বত্যাঞ্চলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ক্ষেত্র তৈরি করেছে পার্বত্য শান্তি চুক্তি। সমাপ্ত হয়েছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। একে অপরকে আঘাত করার পরিবর্তে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তোলার কাজে মনোনিবেশ করেছে পার্বত্যাঞ্চলবাসী। শান্তিচুক্তি পূর্ব ও পরবর্তী পাহাড়ী অঞ্চলের উন্নয়ন চিত্রে ধরা পড়বে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। পার্বত্যাঞ্চলে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ সাধিত হয়েছে। পাহাড়ের অলিগলিতে তৈরি হয়েছে নানা অবকাঠামো। বেড়েছে সাক্ষরতা ও উচ্চ শিক্ষিতের হার। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার উন্নয়নে কমেছে মৃত্যুহার। পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২১ বছর পূর্তি উপলক্ষে রবিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নূরুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কাজী গোলাম রহমান, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান (রাঙ্গামাটি) নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা প্রমুখ। শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপের খেলা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, এমন স্পর্শকাতর ও মানবিক বিষয় নিয়ে খেলার দরকার নেই। চুক্তির পর তিন পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি ফিরেছে- এটাই বাস্তবতা। এখন মান অভিমান করার সময় না। সমস্যা ছিল, রয়েছে। তবে সমস্যাসমূহ চিহিৃত করে সমাধানের উপায় বের করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। প্রতিমন্ত্রী বলেন, পাহাড়ী এলাকার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় দুয়ার খোলা রেখেছেন। রাস্তাঘাট ও অলিগলিতে সমালোচনা না করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেলেই সমস্যাসমূহের সমাধান হবে। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের খ-চিত্র তুলে ধরে বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে সরকার। শান্তিচুক্তির অধিকাংশ ধারাই ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সরকারী উদ্যোগগুলোর মধ্যে পৃথক মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন কমিটি, কমিশন ও টাস্কফোর্স গঠন, আইন প্রণয়ন, কিছুসংখ্যক সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার, ভারত প্রত্যাগত পরিবার এবং শান্তিবাহিনীর সদস্যদের পুনর্বাসন এবং চলমান আলোচনা উল্লেখযোগ্য। চুক্তির বাকি ধারা বাস্তবায়ন করতে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন গঠন করা হয়েছে। পার্বত্যাঞ্চলের লোক সরকারী চাকরি পেতে পারে, এ ক্ষেত্রে তাদের জন্য বিভিন্ন নীতি ও আইন শিথিল করা হয়েছে। ইউএনডিপি, ইউনিসেফ, এডিবি, ড্যানিডা, ইইউ, সিডা ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীর সহায়তায় পার্বত্যাঞ্চলের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন মেয়াদী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময় পার্বত্যাঞ্চলে সড়ক, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের মধ্য দিয়ে ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। শান্তি ও উন্নয়নের পথ কখনই মসৃণ নয়। সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পার্বত্য শান্তি চুক্তির অধিকাংশ ধারা পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং কয়েকটি ধারা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চুক্তির অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার চুক্তির শর্তগুলো বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখায়নি। ফলে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন স্তিমিত হয়ে পড়ে। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শান্তি চুক্তির অবাস্তবায়িত ধারাগুলো বাস্তবায়ন এবং পার্বত্য এলাকার সর্বস্তরের জনগণের উন্নয়নে নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। বর্তমান অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়নের চিত্রসমূহ দেশবাসীর সামনে ভালভাবে তুলে ধরার উদ্যোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দেন নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা।
×