ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশের ওপর লাগাতার হামলা চালানোর পরিকল্পনা শিবিরের

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮

  পুলিশের ওপর লাগাতার হামলা চালানোর পরিকল্পনা শিবিরের

শংকর কুমার দে ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারাভিযান জমে ওঠার পর বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করেছে জামায়াত-শিবির। পুলিশের ওপর লাগাতার হামলা চালাতে পারে বলে তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমনকি সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে আগের ধরন পাল্টে বর্তমানে তারা জঙ্গীদের অনুকরণে টেলিগ্রামের মতো নানা ধরনের এ্যাপস ব্যবহার করছে। সাম্প্রতিক শিবিরের বিভিন্ন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে এ সংক্রান্ত কিছু নথিপত্রও জব্দ করেছে পুলিশ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা কিংবা না করা দু’ব্যাপারেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে জামায়াত-শিবির। আর প্রস্তুতির পুরোটাই নাশকতানির্ভর। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে জামায়াত-শিবিরের বেশ কটি আস্তনায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারও করা হয়েছে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে গ্রেফতারী পরোয়ানা, মামলাসহ নাশকতা নৈরাজ্যের অভিযোগ। জব্দ করা হয়েছে শিবিরের সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। আর এসব নথিপত্রে উঠে এসেছে শিবিরের নির্বাচন কেন্দ্রিক নানা পরিকল্পনা। আগে মসজিদ, মেস কিংবা গোপন আস্তানায় তারা সংগঠিত হলেও এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিতে ব্যবহার করছে টেলিগ্রামসহ নানা ধরনের এ্যাপস। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্যই হামলার পরিকল্পনা করছে জামায়াত-শিবির। পুলিশের মনোবল ভাঙ্গলেই জনগণের মনোবল ভাঙ্গবে, সেই উদ্দেশেই তারা হামলার পরিকল্পনা করে একাদশ নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রাখছে। বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন যেসব এ্যাপস ব্যবহার করত, জামায়াত-শিবিরও সেসব এ্যাপস ব্যবহার করছে। মূলত নির্বাচনের আগে দেশকে অস্থিতিশীল করে ক্ষমতাসীন সরকারকে চাপের মুখে রাখার জন্য শিবির এ ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে। নির্বাচন উপলক্ষে দেশকে অস্থিতিশীল করা, জনগণকে আতঙ্কিত করা এবং নিজেদের অস্তিত্বকে জানান দিতে তারা হামলা চালাতে পারে। শিবিরের গোপন নথি অনুযায়ী, ডিসেম্বরে নির্বাচনী প্রচার জমে ওঠার পরই মাঠে নামবে তারা। এ অবস্থায় সক্রিয় জামায়াত-শিবির কর্মীদের তালিকা তৈরি করছে পুলিশ প্রশাসন। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, জামায়াত-শিবির কী ধরনের নাশকতা চালাতে পারে সে ধরনের প্রতিবেদন তৈরি করছে গোয়েন্দা সংস্থা। জামায়াত-শিবিরের সব ধরনের নাশকতা, নৈরাজ্য ঠেকাতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। শুরু করা হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হয়ে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ধানের শীষ মার্কা নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামছে জামায়াত-শিবির। আবারও ২০১৩-১৪ সালের ভয়ঙ্কর দিনগুলোতে যাতে জামায়াত-শিবির ফিরে গিয়ে নাশকতা- নৈরাজ্য চালাতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠন ছাত্র শিবিরকে রুখে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি বিল উত্থাপিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে। স্থিতিশীলতা ও ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের জন্য জামায়াত-শিবিরকে হুমকি উল্লেখ করে এমন আহ্বান জানানো হয়েছে বিলটিতে। জামায়াত ও ছাত্রশিবিরসহ উগ্র মৌলবাদী সংগঠনগুলোর সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ ক্ষুণœ করছে বলেও উল্লেখ করা হয় বিলে। কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাংকস ‘বাংলাদেশে সক্রিয় ধর্মরাষ্ট্রিক সংগঠনগুলোর সৃষ্ট গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি হুমকির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ’ শীর্ষক বিলটিতে বলেছেন, বিগত নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াত ও ছাত্রশিবির ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। মার্কিন কংগ্রেসের ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, গত ২০ নবেম্বর কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে বিলটি উত্থাপন করেছেন ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাংকস। আদালতের একটি আদেশ অনুযায়ী, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতের নিবন্ধন গত অক্টোবরে বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। তারও আগে ২০১৩ সালের আগস্টে একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট।
×