ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এক বছরেই শতভাগ মানুষ বিদ্যুত সংযোগের আওতায়

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮

  এক বছরেই শতভাগ মানুষ বিদ্যুত সংযোগের আওতায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী খাতের তুলনায় ১০ ভাগ বেশি বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের হাতে। বিদ্যুত খাত সংস্কার করে ১৯৯৬ সালে বেসরকারী উৎপাদনকারীদের কেন্দ্র নির্মাণের সুযোগ দেয় সরকার। বাইশ বছরে দেশের বিদ্যুত উৎপাদনের ৫৫ ভাগ রয়েছে বেসরকারী খাতে। অন্যদিকে বিদ্যুত উৎপাদনে ৪৩ বছরে সরকারী খাতের অংশগ্রহণ ৪৫ ভাগ। তবে বড় কেন্দ্র নির্মাণে বেসরকারী অংশগ্রহণ এখনও উল্লেখযোগ্য নয়। সরকার কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দিলেও উদ্যোক্তারা এক্ষেত্রে সফলতা দেখাতে পারেনি। বেসরকারী উৎপাদনকারীরা বলছে, বড় কেন্দ্র বিশেষ করে কয়লাচালিত কেন্দ্র নির্মাণের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে জমি। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এত জমির সংস্থান করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সরকার জমি অধিগ্রহণে সহায়তা করলে বড় কেন্দ্র নির্মাণে বেসরকারী অংশগ্রহণ সম্ভব। তবে সরকার বড় কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে জমি অধিগ্রহণ করে দেয় না। পিডিবি নিজেদের জমি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘমেয়াদী ইজারা দিয়ে আসছিল। কয়লাচালিত কেন্দ্র নির্মাণে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে সরকার জমি অধিগ্রহণ করছে না। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান স্থাপিত ক্ষমতার মধ্যে বেসরকারী খাতের কেন্দ্রগুলোর ক্ষমতা ১১ হাজার ৫৭ মেগাওয়াট যা মোট ক্ষমতার ৫৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বেসরকারী খাতের এই উৎপাদন ক্ষমতার মধ্যে ৩ হাজার মেগাওয়াট ক্যাপটিভ ও অল্প কিছু সৌরবিদ্যুত রয়েছে। অন্যদিকে প্রায় ২৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুতসহ সরকারী খাতের কেন্দ্রগুলোর বর্তমান স্থাপিত ক্ষমতা ৯ হাজার ২৮৬ মেগাওয়াট যা মোট উৎপাদন ক্ষমতার ৪৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই অগ্রগতি বিস্ময়কর। গত দশ বছরে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে প্রায় চার গুণ। সরকারী হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় ৫৫ শতাংশ বেসরকারী খাতের আওতায়। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে বিদ্যুত উৎপাদনের স্থাপিত ক্ষমতা ২০ হাজার ৩৪৩ মেগাওয়াট। দশ বছর আগে, ২০০৯ সালে স্থাপিত ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। বিদ্যুত উৎপাদনের স্থাপিত ক্ষমতা ২০ হাজার ৩৪৩ মেগাওয়াট হলেও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী দেশে দৈনিক বিদ্যুত উৎপাদনের গড় ১১ হাজার মেগাওয়াটের মতো। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুত উৎপাদনের রেকর্ড হচ্ছে ১১ হাজার ৬২৩ মেগাওয়াট। দশ বছর আগে, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় বসার সময় সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড ছিল ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট। পিডিবির সূত্র জানায়, গত দশ বছরে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা যেমন বেড়েছে তেমনি বিদ্যুত ব্যবহারকারী এবং মাথাপিছু ব্যবহারের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০০৯ সালে যেখানে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ছিল এক কোটি ৮ লাখ, সেখানে এখন তা তিন কোটি ১২ লাখে উঠেছে। ২০০৯ সালে দেশের মাত্র ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুত সংযোগের আওতায় ছিল। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯২ শতাংশ। সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে, আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুত সংযোগের আওতায় নিয়ে আসা। অর্থাৎ আগামী ১ বছরের মধ্যে দেশে সবার জন্য বিদ্যুত নিশ্চিত হচ্ছে। বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সরকারের একার পক্ষে বিদ্যুত উৎপাদনের পুরো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। এ খাতে বেসরকারী অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা হয়। এজন্য সরকার নানা রকম সুবিধাও দিয়ে থাকে। বেসরকারী খাতকে আরও বেশি এগিয়ে আসার জন্য আহ্বানও জানানো হয়েছে। দেশের বেসরকারী খাতের বিদ্যুত উৎপাদনকারীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসারস্ এ্যাসোসিয়েশন (বিইআইপিপিএ)-এর সূত্র জানায়, সরকারী খাতের তুলনায় বেসরকারী কেন্দ্র নির্মাণের জন্য কম সময়ের প্রয়োজন হয়। এর আগেও জরুরী বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ২০০৮ সালে সরকার একবার আহ্বান জানায়। ওই সময়ে বিদ্যুত উৎপাদনে বেসরকারী অংশগ্রহণ সৃষ্টি হয়। আবার ২০১৫ সালে আরও একবার সরকার বেসরকারী উৎপাদনকারীদের আহ্বান জানায়। তখনও বেসরকারী উৎপাদনকারীরা সরকারের আহ্বানে সাড়া দেয়। যদিও বেসরকারী উৎপাদনকারীরা শুধু গ্যাস এবং তরল জ¦ালানিতে বিদ্যুত উৎপাদন করছে। এর বাইরে কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের তিনটি কাজ পেলেও শুরু করতে পারেনি উদ্যোক্তারা। সরকার ইতোমধ্যে এসব উৎপাদনকারীদের সতর্র্ক করে চিঠি দিয়েছে। বিইআইপিপিএ এর সভাপতি মুহম্মদ লতিফ খান জনকণ্ঠকে বলেন, কয়লাচালিত কেন্দ্র নির্মাণের সব থেকে বড় সমস্যা জমির সংস্থান করা। উদ্যোক্তারা এত বড় জমির সংস্থান না করতে পারার কারণে কেন্দ্রগুলো নির্মাণ দেরি হচ্ছে। তবে আমদানিকৃত এলএনজিতে কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কোন কোন কোম্পানি ইতোমধ্যে সমঝোতা স্মারকও সই করছে। আশা করা হচ্ছে এসব কেন্দ্র নির্দিষ্ট সময়ে উৎপাদনে আসবে।
×