ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইসির সঙ্গে বৈঠকের পর এইচটি ইমাম

বিএনপির দাবি মানতে হলে পুরো সরকার বদল করতে হয়

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮

 বিএনপির দাবি মানতে হলে পুরো সরকার বদল করতে হয়

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, বিএনপি তো মেনেই নিয়েছে যে, এ সরকার ও প্রশাসনের অধীনেই নির্বাচন করবে। এখন তো রদবদলের দাবি অবান্তর। বিএনপি প্রশাসনের রদবদলের নামে যে দাবি করেছে, তা পালন করতে গেলে একেবারে পুরো সরকারকেই ওলট-পালট করতে হয়। পুরো সরকারই বদল করতে হয়। সরকারকে মেনেই তো তারা নির্বাচনে এসেছে। এখন তো এই প্রশ্ন আমি মনে করি অবান্তর। দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, এর মধ্য দিয়ে সবার জন্য আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত হয়েছে। রিটানিং কর্মকর্তাদের এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকারও প্রমাণ মিলেছে। রবিবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তারা এসব কথা বলেন। সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছেন এইচ টি ইমাম। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকে আমরা শুনলাম মির্জা ফখরুল সৈয়দপুর বিমানবন্দরে একটি সমাবেশ করেছেন। যেটি একবারে নির্বাচনী আচরণবিধির সুষ্পট লঙ্ঘন। এখন তো সমাবেশ করার কথা না। সমাবেশ যেই করুক না কেন, আমাদের কেউ করলেও সেটি যেমন শাস্তিযোগ্য অপরাধ, অন্যদের বেলাও সেটি প্রযোজ্য। আমরা এখানে এসেছি, আমরা চাই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, যে কথা বলছি- সেটা মনেপ্রাণে আমরা বিশ্বাস করি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন কী বলেছেন- এই প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, তারা ব্যবস্থা নেবেন। আমরা সবসময় বলছি, আইন সবার জন্য সমান। আপানারা জানেন বিএনপির কোন কোন নেতা বিভিন্ন ধরনের কথা বলেছেন। যেমন তারা বলছে নির্বাচন কমিশন ৩০ ডিসেম্বরের পর কোথায় থাকে আমরা দেখব। কিংবা আওয়ামী লীগ নেতারা কোথায় থাকে আমরা দেখ। তার মানে কী ? এগুলো নির্বাচন কমিশনের কাছে বলেছি। এ বিষয়ে কমিশনকে সুষ্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিতে বলেছি। ‘সবার জন্য সমান সুযোগ নেই’-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নির্বাচন কমিশনে এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, মওদুদ আহমদ বললেই কী বেদবাক্য হয়ে গেল, তাতো নয়। তারা দিন-রাত মিথ্যা কথা বলেন। অনবরতই মিথ্যা কথা বলেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র তথা সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে লক্ষ্য করে বিভিন্নভাবে চারদিক থেকে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করা উচিত। আমরা আগেও বলেছি নির্বাচন কমিশনকে যদি সত্যিই আমরা শক্তিশালী করতে চাই, যদি মনে করি নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করবে- অবশ্যই নির্বাচন কমিশন তা করতে পারবে। এবার নির্বাচনে একটা অভূতপূর্ব জিনিস হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়ে তার সরকারের সময়ে সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। এমন অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেখানে প্রত্যেকেরই সমর্থন দরকার। সহযোগিতা প্রয়োজন এবং সহনশীলতা প্রয়োজন। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ থেকে আমরা কখনই কোন উস্কানিমূলক বক্তব্য দেইনি। আমরা নির্বাচন কমিশনকে কতগুলো বিষয় বলেছি। যেমন আজকাল অনেকগুলো অনলাইন আছে, তাদের কোনরকম নিবন্ধন নেই এবং স্থানীয়ভাবে অনেক লোকাল টেলিভিশনও গজিয়ে উঠেছে। এগুলো সম্পর্কেও আমাদের সচেতন হওয়া দরকার। যাতে কেউ কোনরকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারে। কেউ যাতে অপপ্রচার না করে। আর সব থেকে বড় জিনিস জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় যাতে না দিতে পারে। এইচ টি ইমাম বলেন, লন্ডনে সম্প্রতি ডেইলি টেলিগ্রাফ এবং ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় এসেছে সেখানে ব্যাংকিং আইনে দন্ডিত একজন ব্যক্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। সেখানে তাকে এক মিলিয়ন পাউন্ড দ-িত করা হয়েছে। তারপরও সেই ব্যক্তি এখানে (বাংলাদেশে) পালিয়ে এসে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন। এ বিষয়টিও আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরেছি। নির্বাচনে বিদেশী পর্যবেক্ষক নিয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, এমনিতেই নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের সংখ্যা অনেক। ১১৮টির বেশি এনজিও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। এদের সদস্য সংখ্যাও কয়েক লাখ। এর ওপরে আবার বিদেশ থেকে আমরা আহ্বান করতে থাকি, তাহলে এদের দেখাশোনা করতেই আমাদের সিকিউরিটির অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। বিদেশী পর্যবেক্ষকরা যেন নির্বাচনের বিধিমালা মেনে চলেন সে বিষয়ে নজর দিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, বিদেশী পর্যবেক্ষক আসা আমরা নিরুৎসাহিত করছি না। তবে যারা আসেন, তারা যেন নিয়ম মেনে চলেন। এটা আমাদের সার্বভৌমত্বের ব্যাপার। দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত হয়ে কারাগারে থাকা খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল প্রসঙ্গে প্রতিনিধি দলের সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, এটাই লেভেল প্লেইং গ্রাউন্ড। আইন সকলের জন্য এক। কোন একটি দলের প্রধান হলেই তার জন্য তো আইন অন্য রকম হবে না এতে প্রমাণিত হয় যে, বাংলাদেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে। আর সকলের জন্য আইন একই রকম। কেউ বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে, আমরা মানুষকে সাহায্য করেছি, এটা তো লেভেল প্লেইং ফিল্ড হতে পারে না। লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ড কথাটি আসে আইনের ক্ষেত্রে। আজকে প্রমাণিত হলো, আইনের ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ড আছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে অন্যান্য কমিশনাররা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এইচ টি ইমাম ও ফারুক খান ছাড়াও আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. মশিউর রহমান, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রকৌশলী আবদুস সবুর, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, এস এম কামাল হোসেন, এ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাউসার, ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি এমপি, ড. সেলিম মাহমুদ, মারুফা আক্তার পপি, কান্তারা খান প্রমুখ।
×