ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চেতনার রং পোশাকে

জাতীয় পতাকার লাল সবুজ, যুদ্ধ জয়ের গৌরবগাথা

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮

জাতীয় পতাকার লাল সবুজ, যুদ্ধ জয়ের গৌরবগাথা

মোরসালিন মিজান ॥ ডিসেম্বর এলে চারপাশের রংটা কেমন বদলে যেতে থাকে। সবখানেই লাল-সবুজ। ক্রমে দৃশ্যমান হয়। পোশাকের বেলায় আরও বেশি। এখন বিজয় দিবস মানেই লাল-সবুজে সেজে বের হওয়া। ফ্যাশন ভাবনা এখানে কাজ করে বৈকি। প্রাধান্য পায় ইতিহাস চেতনা। মুক্তিযুদ্ধ। দেশপ্রেম আর বাঙালিত্বের বোধ। তাই তরুণ তরুণীদের পাশাপাশি বড়রাও অভিন্ন রং বেছে নেয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি মাথায় রেখে দেশী ডিজাইনাররা শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, টি-শার্ট, চাদর ইত্যাদি তৈরি করেন। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ডিসেম্বর শুরু হতে না হতেই মার্কেট, শপিংমলের রং মোটামুটি বদলে গেছে। যেটুকু বাকি, দেখতে দেখতে বদলে যাবে। ১৬ ডিসেম্বর এই রং ছড়িয়ে পড়বে শহর ঢাকার প্রতি প্রান্তে। বলার অপেক্ষা রাখে না, লাল-সবুজ রঙের উৎস বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পাওয়া পতাকা বাঙালীর আত্মপরিচয়কে স্বতন্ত্র মহিমায় তুলে ধরে। বিজয়ের মাসে চেতনার এই রংটুকু ধারণ করেছে পোশাক। বরাবরের মতোই দেশী বুটিক, বাটিক ও ফ্যাশন হাউসগুলো এ ধারার কাজ বেশি করেছে। মাত্র দুটি রঙের কত রকম ব্যবহার! দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। নিজেদের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে তরুণ ডিজাইনাররা দেশাত্মবোধকে জাগ্রত করার চেষ্টা করেছেন। শুধু আনন্দ উৎসব নয়, একটা ভাবগাম্ভীর্যও পোশাকে ফুটিয়ে তুলেছেন তারা। বিজয় দিবসের পোশাকের বড় প্রদর্শনী চলছে আজিজ সুপার মার্কেটে। রবিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ শোরুমে লাল-সবুজের সমারোহ। যোগী নামের একটি বুটিক হাউসের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তো চোখ আটকে গেল। সুতি সবুজ কাপড় দিয়ে থ্রিপিস, পাঞ্জাবি, ফতুয়া ইত্যাদি বানানো হয়েছে। হাত, গলা বা বুকের দিকটায় ব্যবহার করা হয়েছে লাল রং। কোন কোন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় সঙ্গীতের পঙ্ক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে বড়দের জামাকাপড় তো আছেই। একেবারে ছোটদের জন্যও চমৎকার সব ডিজাইন করা হয়েছে। স্বত্বাধিকারী শেখ মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ জানান, গোটা পরিবারের জন্য বিজয় দিবসের পোশাক করেছেন তারা। বাবা-মা, ছেলেমেয়ে একই রকমের পোশাক পরে বিজয় দিবস উদ্যাপন করতে পারবেন। বিসর্গ নামের একটি শোরুমে শাড়ির সংগ্রহ। এখানে অন্য শাড়িও আছে। তবে লাল-সবুজ রঙের শাড়িগুলো রাখা হয়েছে একেবারে চোখের সামনে। ফ্যাশন হাউসের মালিক স্বপন সিকদার জানান, সুতি ও হাফসিল্কের শাড়িতে ব্লক প্রিন্ট করেছেন তারা। কারচুপির কাজ করেছেন। লাল-সবুজ রঙের সঙ্গে মিলিয়ে সব কাজ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। মেঘ নামের আরেকটি বুটিক শপে মূলত ছোটদের জামা। বিজয় দিবস সামনে রেখে বানানো হয়েছে। ‘নন্দন কুটির’ ফ্যাশন হাউসটি বেশ পরিচিত। নান্দনিক কাজ করে শৌখিন ক্রেতার মন জয় করে নিয়েছে। বিজয় দিবস সামনে রেখে তারা এবার এনেছে আকর্ষণীয় থ্রিপিস। ডিজাইনার তানিয়া চমৎকার কিছু এপ্লিকের কাজ করেছেন। লাল-সবুজ রঙের ওপর জরি বসিয়ে উৎসবের আনন্দটা প্রকাশ করেছেন তিনি। নিচে পরার জন্য রেখেছেন ঢোল পাজামা। কাপড়-ই-বাংলা নামের বুটিক শপে প্রবেশ করতেই কানে এলো: মুক্তির মন্দির সোপান তলে/কত প্রাণ হল বলিদান/লেখা আছে অশ্রুজলে...। এমন আবেগঘন সুর মনটা প্রথমেই নরম করে দেয়। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ লক্ষ শহীদের কথা শুনতে শুনতেই পোশাক পছন্দ করা। এখানে পাঞ্জাবি থ্রিপিসের পাশাপাশি আছে চাদরও। খাদি কাপড়ে সুকান্ত’র কবিতা। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রকাশিত পত্রিকা শিরোনাম থেকে নেয়া মোটিফ। উত্তরীয়গুলোও লাল সবুজ। সেখানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। অবশ্য আজিজ মার্কেট টি-শার্টের জন্য বিশেষ আলোচিত। টি-শার্টেও এখন লাল-সবুজের প্রাধান্য। প্রায় সব দোকানেই আছে বিজয় দিবসের বিশেষ টি-শার্ট। নিত্য উপহার তো আছেই। অন্য অনেক শোরুমে জাতীয় পতাকার রঙে করা টি-শার্ট পাওয়া যাচ্ছে। মার্কেটেই কথা হলো সুমন নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বললেন, ‘ডিসেম্বর বা মার্চ মাসে এখানে এমনিতেই আসি। বিশেষ দিবসে পড়ার মতো পোশাক কিনতেই আসা। আজ এসেছি ‘বাংলাদেশ’ লেখা টি-শার্ট কিনতে।’ ১৬ ডিসেম্বরের আগে বিদেশে বড় ভাইয়ের কাছে এই টি-শার্ট পাঠাবেন বলে জানান তিনি। শিউলী ও রিনা এসেছিলেন বাসাবো থেকে। রিনা বললেন, ‘লাল এবং সবুজ রঙের মিশেল আছে এমন শাড়ি কিনতেই এতদূর এসেছি।’ কেন লাল-সবুজ? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো বাংলাদেশের রং। পতাকার রং থেকে এক ধরনের শক্তি পাওয়া যায়। বিশেষ আবেগ কাজ করে।’ সবারই এক রং হয়ে যাবে না? এমন প্রশ্নে দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দেন তিনি। বলেন, এক হওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্যই তো লাল-সবুজ! অবশ্য বিজয় দিবসের কেনাকাটা বলতে যা বোঝায়, তা এখনও পুরোপুরি শুরু হয়নি। অল্প স্বল্প বিক্রি হচ্ছে। বুটিক হাউস ঢাক-ঢোলের কর্ণধার রাজু বললেন, বিজয় দিবসের এখনও অনেক বাকি। এ কারণে পুরোদমে শুরু হয়নি বিক্রি। তবে কয়েকদিন পর ক্রেতার সমাগম বেড়ে যাবে। তখন ছবিটা হবে অন্যরকম। অন্যরকম ছবিটা দেখার জন্যই অপেক্ষা করে আছে বাংলাদেশ।
×