ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দীপক চৌধুরী

অভিমত ॥ তাদের এ কেমন অন্তজ্বালা!

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮

 অভিমত ॥ তাদের এ কেমন অন্তজ্বালা!

স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারপুত্র বা তাদের সহযোগীরা মনোনয়ন পেলে আপত্তি নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা যদি আব্দুর রহমান বদি বা আমানুর রহমান খান রানার পরিবার থেকে কাউকে মনোনয়ন দেন তাহলেই ‘অন্তর্জ্বালা’। কথাগুলো তো এই রকমই, নাকি? টেলিভিশনের টকশোর কিছু নির্দিষ্ট আলোচক কয়েকদিন ধরেই এই বার্তা দিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদের কাছেও এটি ‘আওয়ামী লীগের জাত’ যাওয়ার মতো বিষয়। লোকলজ্জা বা উদ্বেগের বিষয় তো হওয়ার কথা যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী অপরাধের সর্বোচ্চ দন্ডপ্রাপ্তদের আলোচিত সন্তানদের নিয়ে। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিতা করেছেন, ঘরবাড়ি জ্বালানো, সম্পদ লুট, সহিংসতা, ধর্ষণ-হত্যা করার অভিযোগে দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে ফাঁসিতে ঝুলেছেন তাদের বংশধররা রাজনীতিতে আসছেন। তাও আবার সেই আদর্শ নিয়েই। যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে বা আজীবনের জন্য কারাগারে আটক রয়েছেন তাদের লোকেরা রাজনীতিতে এলে এর গুণগতমান কতটা জঘন্য হয়ে উঠবে তা কী বলার অপেক্ষা রাখে? শুনেছি, মৃত্যুদ-প্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পুত্র বাবার আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবেন। জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর পুত্র পাবনা-১ (বড়া-সাঁথিয়া) ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দুই পুত্র নির্বাচন করবেন। পিরোজপুর-১ থেকে লড়বেন শামীম সাঈদী আর পিরোজপুর-২ থেকে লড়বেন মাসুম সাঈদী। সংসদ নির্বাচনের আলোচনার বাজারটি গরম করতে কক্সবাজার-৪ (টেকনাফ-উখিয়া) আসনে বদির স্ত্রী শাহীন আক্তার চৌধুরী ও টাঙ্গাইল-৪ (ঘাটাইল) আসনে রানার বাবা আতাউর রহমান খানকে নিয়ে কথার খৈ ফোটানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া নিয়ে আওয়ামী লীগকেই অপরাধী করা হচ্ছে। বদিকে নিয়ে কস্ট্রোভার্সি আছে, রানা সংসদ সদস্য হয়েও হত্যা মামলার অভিযোগে জেলে রয়েছেন, জামিনে নয়। অথচ এখন পর্যন্ত অভিযোগই প্রমাণ হয়নি। তাহলে আদালতের ওপর হস্তক্ষেপের প্রশ্ন আসে কেন? অথচ যারা দেশটাই চায়নি, স্বাধীনতা চায়নি, যারা দেশবিরোধী অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত তাদের সন্তানরা নির্বাচন করতে মনোনয়ন নিচ্ছেÑ এখানে তাদের কোন কথা নেই। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে পরিচিত মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরী, জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর পুত্র নজিব মোমেন ও দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদীর পুত্র শামীম সাঈদী ও মাসুদ সাঈদীর বিষয়ে কিন্তু প্রশ্ন শুনছি না! অথচ শুধু বাংলাদেশই নয়, পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি সাঈদীর চরমপন্থী মতবাদের জন্য ২০০৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেরোরিস্ট স্ক্রিনিং সেন্টার (টিএসসি) সাঈদীকে তাদের নো ফ্লাই তালিকায় যুক্ত করে অর্থাৎ এই তালিকার নাগরিকেরা কোন দেশ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে প্রবেশ করতে পারবেন না। গণতন্ত্র বলতে আমরা কি বুঝি? গণতন্ত্র মানে কি জঙ্গী সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক দলগুলোকে নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া? গণতন্ত্র মানে রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রিত্ব দেয়া? যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের গাড়িতে পতাকা আমরা দেখেছি বিএনপি-জামায়াতের সরকার আমলে। এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কী হতে পারে? ৩২০ জন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে কিন্তু ৩২০ ছাত্রদল শিবির ক্যাডার চাকরি করছেন এখনও। বিএনপি নেতাদের কি সেই খেয়াল আছে? তাদের স্মৃতিশক্তি কি হারিয়ে গেছে? তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে আইবিএ-এর মাধ্যমে তাদের পুনরায় পরীক্ষা নিয়ে অর্ধেকের বেশি লোককে বাদ দিয়েছিল। এটা কী ভুলে গেলেন বিএনপি নেতারা? রাজাকার যুদ্ধাপরাধীমুক্ত নির্বাচন করা সময়ের দাবি। আমরা অনেকেই জানি, বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নৌকা আর ধানের শীষ। অনেকেই হয়তো বলছেন, আওয়ামী লীগ বা বিএনপির অবস্থানগত পরিবর্তন কেবলই নির্বাচনী কৌশল। কিন্তু এটাই পরীক্ষিত সত্য, বিএনপি নির্বাচনী জোট গড়তে গিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের ও কট্টর সাম্প্রদায়িক দলগুলোর মিত্র হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিতি লাভ করেছে। লেখক : সাংবাদিক
×