ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্যমেলার স্থায়ী কেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮

 বাণিজ্যমেলার স্থায়ী কেন্দ্র

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে ২০১৯ সালের মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা নির্ধারিত সময় পহেলা জানুয়ারি শুরু হচ্ছে না। পরিবর্তিত সময়সূচী অনুযায়ী তা নয় জানুয়ারি শুরু হচ্ছে। তবে মেলা অয়োজনের কাজ অনেক আগেই শুরু হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি স্থায়ী মেলার মাঠ গড়ে ওঠেনি। মেলা আয়োজনে অস্থায়ী অবকাঠমো নির্মাণের ফলে প্রতিবছরই বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। ব্যবসায়ীদের অবকাঠামো নির্মাণের নানা প্রতিকূলতায় পড়তে হয়। স্থায়ী কাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা দুই দশক আগে নেয়া হলেও কাজে অগ্রগতি নেই। এসব বাধা ও বিশাল অঙ্কের অর্থের অপচয় ঠেকাতে ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি একটি স্থায়ী প্রদর্শনী কেন্দ্র স্থাপনের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চীনের সহায়তায় রাজধানীর পূর্বাচলে একটি স্থায়ী প্রদর্শনী কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়। এ জন্য প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়। তবে বছর বছর এই প্রকল্পের মেয়াদ ও অর্থ বরাদ্দ বাড়লেও কাজ শেষ হয় না। ২০১২ সালে নেয়া প্রকল্পের মেয়াদ ও অর্থ বরাদ্দ বাড়লেও কাজ শেষ হয়নি। ২০১৮ সালে স্থায়ী প্রদর্শনী কেন্দ্রে মেলার আয়োজন করার কথা থাকলেও তা এখন ২০২১ সালে গিয়ে ঠেকেছে। জটিলতার কারণ ভূমি অধিগ্রহণে ঝুট ঝামেলা। ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতায় বাংলাদেশ-চীন প্রদর্শনী কেন্দ্র নামের বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় প্রকল্প অনুমোদনের ছয় বছর পর। গত নয় বছরে প্রকল্পের আওতায় ভৌত অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ হয়েছে মাত্র ২৩ শতাংশ। প্রকল্পের ধীরগতি এবং প্রদর্শনী কেন্দ্রের বাড়তি জায়গার প্রয়োজনে প্রকল্পের মেয়াদ আরও আড়াই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় রাজউক পূর্বাচল উপশহরে মোট কুড়ি একর জমি বরাদ্দ দেয়। চীন কেন্দ্রের নকশা তৈরি করে দেয়। এক্ষেত্রে ব্যয় বাড়িয়ে ৭৯৬ কোটি টাকা ধরা হয়। এর মধ্যে চীনের অনুদান বেড়ে ৬২৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা ও সরকারী তহবিলের ব্যয় ১৩৮ কোটি এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো তথা ইপিবির নিজস্ব অর্থায়ন ধরা হয় ৩২ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন মেয়াদে নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কাজ না হওয়ায় প্রকল্প আবারও সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবে অতিরিক্ত ১৫ একর জমি কেনারও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন স্থাপনা নির্মাণ, প্রদর্শনী কেন্দ্রের পরিসর বৃদ্ধি এবং কেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য ব্যয় বৃদ্ধি পাবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। নয়া প্রস্তাবে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৩০৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এতে চীনের সহায়তার পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকছে। সরকারী তহবিলের অর্থ বেড়ে ৪৭৫ কোটি টাকা এবং সংস্থার অর্থায়ন বেড়ে হচ্ছে ২০৩ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের চীনের অংশের করা কাজের প্রায় ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্প পরিচালকের ভাষ্য স্পষ্ট করে প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের মধ্যে শেষ হচ্ছে না। বরং আরও দু’চার বছর সময় বেশি লেগে যেতে পারে। প্রদর্শনী কেন্দ্রকে আরও বিশ্বমানের করা হচ্ছে। পরিকল্পনার প্রায়শই পরিবর্তন আনা হচ্ছে, প্রথম পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালে প্রকল্প কাজ শেষ হওয়ার কথা। আর মন্ত্রণালয় চেয়েছিল ২০২০ সাল থেকে স্থায়ী প্রদর্শনী কেন্দ্র স্থাপন সম্পন্ন করা। এতদিন পর এসে মনে হয়েছে প্রকল্পটির মূল প্রদর্শনী কেন্দ্র নির্মাণের পর সামগ্রিক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য দাফতরিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রয়োজন হবে। অতিরিক্ত জনবলও প্রয়োজন হবে। তাই সংশোধনের প্রস্তাব আনা হয়েছে এতকাল পর। অথচ গোড়াতেই এই পরিকল্পনা নেয়া যেত। প্রতীয়মান হয় যে, কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। হলে প্রকল্প কাজ পূর্ণোদমে শুরু ও শেষ হতো এবং এত সংশোধনী আনার প্রয়োজন হতো না। গাফিলতি, ঔদাসীন্য, অবহেলা থাকুক আর নাই থাকুক, দ্রুত স্থায়ী কাঠামো নির্মাণ সম্পূর্ণ করার কাজে ব্রতী হওয়া সঙ্গত।
×