ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তারুণ্যের প্রথম ভোট

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮

তারুণ্যের প্রথম ভোট

জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বহু তরুণ প্রথমবারের মতো ভোট দেয়ার সুযোগ পান। এবার এমন তরুণ ভোটারের সংখ্যা পূর্বেকার নির্বাচনগুলোর তুলনায় একটু বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত দশ বছরে তরুণ ভোটার বেড়েছে সোয়া দুই কোটি। ১৮ থেকে ২২ বছরের মধ্যে বয়স এমন ভোটার দেশের মোট ভোটারের বাইশ শতাংশ। প্রায় ১ কোটি ২৩ লাখ এবারই প্রথম ভোট দেবেন। ফলে অনেক আসনেই প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন এই তরুণ ভোটাররাই। তারুণ্যের প্রথম ভোট হোক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেÑ এমন একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রচার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বলা বাহুল্য, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনকারী আমাদের দেশ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, অগ্রগতি, সমৃদ্ধির জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ শক্তির কোনটি রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকবে সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকলেই দেশের সত্যিকারের উন্নয়ন হয়, দেশের মানুষের প্রকৃত কল্যাণ হয়। তাই দেশের আগামী দিনের কর্ণধার তরুণ প্রজন্ম তথা তরুণ ভোটারদের সামনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরার বিষয়টি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। তাই তারুণ্যের প্রথম ভোট হোক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেÑ এমন আহ্বান যথার্থ এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। দেশে অল্প কিছুসংখ্যক স্বাধীনতাবিরোধী ছাড়া বাকি সবাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই। যারা স্বাধীনতাবিরোধী তারা জ্ঞানপাপী এবং বহু চেষ্টা করেও তারা এই দেশটাকে পাকিস্তান বানাতে সফলকাম হয়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে অবশ্য দেশের উল্টোমুখী যাত্রা শুরু করা হয়। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সামরিক শাসকরা, যাদের অন্তরে ছিল ‘পেয়ারা পাকিস্তান’, তারা দেশের সমৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট ছিল না। বরং দেশটাকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে বহির্বিশ্বে পরিচিত করাতে নানা ফন্দিফিকির এঁটেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। অবশ্য সেই সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় কিছুটা প্রতিবন্ধকতা আসে। যদিও সেটি ছিল সাময়িক বাধা। এরপর থেকে টানা দশ বছর দেশ পরিচালনায় বিশেষ গতি আনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বর্তমান সরকার। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বলা যায় বিশ্বের বিস্ময় হিসেবে আবির্ভূত হয় বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক অগ্রযাত্রা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। ফলে এটা পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারই দেশের সত্যিকারের মঙ্গল চায় এবং সুপরিকল্পনার মধ্য দিয়ে দেশকে যথার্থভাবে এগিয়ে নিয়ে যায়। জনকল্যাণে এই সরকারের কোন বিকল্প নেই। তাই এই সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা তথা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল এবং অর্থনৈতিকভাবে গতিশীল রাখার প্রয়োজনে নির্বাচনের আগে নতুন ভোটারদের সচেতন করা আবশ্যক। আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারি যে, তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেই অবস্থান গ্রহণ করে আছে এবং তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের বেলায়ও তার প্রতিফলন ঘটবে। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী চক্র অত্যন্ত ধুরন্ধর, কৌশলী এবং তৎপর। তারা কোমলমতি তরুণদের বিভ্রান্ত করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করবে, অপতৎপরতা চালাবে। তাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে। একই সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের কাছে এমন বার্তা বার বার পৌঁছে দিতে হবে যে, মাতৃভূমির উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রার্থী নয়, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রার্থীকেই জয়যুক্ত করা চাই। তারুণ্যের প্রথম ভোট হোক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে।
×