ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ এবার ভুল হলে ...

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮

 সিডনির মেলব্যাগ ॥ এবার ভুল হলে ...

উন্নয়ন হলেও সুশাসন নেই। এমন অভিযোগ মাঠে নিয়ে বাজার মাত করার চেষ্টা করছে ঐক্যফ্রন্ট। যখন এ লেখা লিখছি খবরে দেখলাম ড. কামাল হোসেন ভোটে প্রার্থী হবেন না। এতে অবশ্য একটা লাভ হবে তাঁর। জামানত বাজেয়াপ্ত বা বাজেভাবে হারার রেকর্ড থেকে বেঁচে গেলেন তিনি। অতীত বলে তিনি কখনই জিততে পারেননি ভালভাবে। তাঁর অবশ্য আরও একটা সুযোগ থেকে গেল। হয়ত সেটাই তাঁকে দেয়া প্রতিশ্রুতি। তারা জিতলে তিনিই হবেন প্রেসিডেন্ট। সে যাই হোক, আমাদের ভয় ও ভরসা দুটোই এখন ভয়ানক দোদুল্যমানতায় দুলছে। এদেশে যতবার ভোট হয়েছে ততবার মানুষের মনের ইচ্ছা প্রতিফলিত হলে একেকবার একেক ধরনের বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে জাতি। কখনও তা আনন্দের কখনও বিপদের। বিপদ কেন আসে তা আমাদের অজানা না। মূলত আওয়ামী লীগের শাসনামলে মানুষের উন্নতি বা অগ্রগতি হলেও সুশাসনের ব্যাপারে খটকা থেকে যায়। যার জন্য দায়ী কিছু মন্ত্রী বা নেতা। এদের বেপরোয়া আচরণ আর খাই খাই ভাব মানুষকে বিরক্ত করে তোলে। কিন্তু সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে আমাদের তুলনা অন্ধ বনাম ঝাপসা মানুষের ভেতর। যারা অন্ধ তারা যদি সরকার গঠন করতে পারে তো কি হতে পারে অনুমান করা কঠিন? তারা এবার রক্তগঙ্গা বইয়ে দেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের অস্তিত্ব ধরে টান দেবে। জানি না কেন খোলাখুলি কেউ লিখছেন না। সবাই জানেন তাদের ভেতর টগবগ করছে প্রতিশোধস্পৃহা। যার মূল কারণ গদি হারানো আর যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি। একসময় আমরা দালাল রাজাকারদের গাড়িতে পতাকা উড়তে দেখেছি। নিষ্ফল আক্রোশে মাথাকুটে মরা মানুষ কিছু করতে না পারলেও তাদের ভেতর ছিল দেশজ আবেগ। যা শেখ হাসিনা ব্যতিরেকে আর কারও হাতে সফল হতো না। তাই বিরোধী নামের একদল মানুষের যাবতীয় আক্রোশের শিকার বঙ্গবন্ধুকন্যা। আমি কথা বলে দেখেছি তারা কেন তাঁর বিরোধিতা করেন তার সুস্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা নেই। সব মিলিয়ে অপ্রমাণিত অভিযোগের মূল একটাই। কেন তিনি এভাবে কঠোর হাতে তাদের শাস্তি দিলেন। কেন তিনি দেশ ও জনগণের ভাল করার বিষয়ে এমন একরোখা। শেখ হাসিনা এখন প্রাজ্ঞ। তাঁর অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই কোথাও। এ কথা বলছি না তিনি সব ঠিক করেন। কিন্তু এটা সবাই মানেন তিনি ভুল করেছেন দু’একটা আর তাঁর পজেটিভ কাজের সংখ্যা গুণে শেষ করা যাবে না। তারপরও এরা যে কোন মূল্যে শেখ হাসিনাকে সরাতে বদ্ধপরিকর। এবারের নির্বাচন তাই সেদিক থেকে জীবনমরণ লড়াই। আর এই যুদ্ধে পরাজিত হলে বাঙালীর দেশ থাকবে বটে মাটি থাকবে না। মাটি থাকলেও তার পরিচয় থাকবে না। আমাদের অতীত ইতিহাস ঐতিহ্যকে এবার কাঁচকলা দেখানোর জন্য বিএনপি সঙ্গে নিয়েছে বেশকিছু ঝানু রাজনীতিবিদদের। যাঁদের এক সময়ের পরিচয় আওয়ামী লীগার। অথচ আপনি যদি একটু খবরও রাখেন বুঝবেন এদের আক্রোশের কারণ ব্যক্তিগত। একেক জনের একেক ধরনের আক্রোশ আর তা নিয়েই মাঠে আছেন তারা। এবারের নির্বাচন আরও একদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। দেশে যে উন্নয়ন চলছে সেখানে বাংলাদেশ একা নয়। আছে ভারত চীনসহ নানা শক্তি। তারা কোটি কোটি টাকা ঢেলেছেন। বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ কিভাবে সামলাবে নতুন জোট? তাদের সেই রূপরেখা কোথায়? চলতে চলতে যতদূর এসে গেছে দেশের সেখান থেকে ফেরার পথ নেই। যারা গণতন্ত্রের ধুয়ো তুলছেন তাদের চোখের সামনে অগণতান্ত্রিকতা আর একই ধরনের নিয়ম বা অনুসরণ তবু তারা একদিকে হেলে আছেন। আওয়ামী পোস্টারে যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনাও জয়ের ছবি বিএনপির কি তা নয়? সেখানে জেনারেল জিয়া খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। এবার আপনি এসব ছবিকে কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন তা আপনার মর্জি। বঙ্গবন্ধুর তুল্য কি জিয়া? শেখ হাসিনার বিপরীতে খালেদা জিয়া? সত্য জানার পরও কথিত গণতন্ত্রের নামে অন্যদিকে ঝুঁকে থাকা তাহলে কিসের ইঙ্গিত? নির্বাচন যত নিকটে আসছে তত শঙ্কা বাড়ছে। সত্যি কথা বলতে কি ভয়ও বাড়ছে। কারণ দেশের এক বিরাট অংশের ভোটার মূলত লেখাপড়া জানেন না। জানলেও তারা মনোজগতে এখনও এক অন্ধকার ভুবনে বসবাস করেন। সে ভুবনটা বড় বিচিত্র। তারা চিকিৎসার জন্য বিনোদনের জন্য বা বেড়ানোর জন্য পাশের দেশটিকে বেছে নিলেও তাদের ভোট মানেই ভারত বিরোধিতা। দেশের গিনিপিগ সম্প্রদায় সংখ্যালঘু। বেচারারা ভোট দিলেও মার খায় না দিলেও মার খায়। তাদের অপরাধ তারা নাকি নৌকার ভোটব্যাংক। গয়েশ্বর বাবু বা নিতাই রায় চৌধুরী একা নন। এখন জুটেছেন সুব্রত চৌধুরী। আছে নিপুন রায় চৌধুরীর মতো লাঠিয়াল মেয়েরা। তারপরও বিশ্বাস করে না আমজনতা। অথবা পাকিপ্রেমী রাজনীতি। আমি নিশ্চিত জানি মহাজোট হেরে গেলে হাজার মানুষকে আবার পালাতে হবে। রাতের অন্ধকারে তারা দেশ ছাড়বে ভয়ে। ভয় আর শঙ্কার চাদরে মোড়ানো কত নারীর ইজ্জত লুণ্ঠন হতে পারে তার কোন হিসাব নেবে না সমাজ। এই কি গণতন্ত্র? জানি অনেকে বলবেন বাড়াবাড়ি কিংবা আগ বাড়িয়ে বলা কেন? কি করব? এটাই যে ইতিহাস। আর এ থেকে মুক্তির কথা কি বলছে কেউ? কেউ কি দিয়েছেন সে গ্যারান্টি? পাহাড়ের আদিবাসী বাঙালী কিংবা রোহিঙ্গায় যে সমস্যা তার সমাধান কোথায়? সত্যি বলতে কি ভেবেছিলাম এবার সব জোটই এ নিয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেবে। কেউ তার পরোয়া করেনি এখন অবধি। একমাত্র ভরসা এখনও শেখ হাসিনাই। তিনি না থাকলে যে কি হবে সেটা ভাবতেই আমাদের শরীর হিম হয়ে আসে। সংস্কৃতি যে খুব ভাল আছে তা না হলেও তার ওপর কোন জগদ্দল পাথর চেপে বসতে পারেনি। কে না জানে বিকৃত ইতিহাস আর আফগানী বিপ্লবের খোয়াবনামা সরকারে আসতে পারলে সংস্কৃতির চেহারা কি হতে পারে? সে চেহারা যদি আমাদের অচেনা হতো তাহলে কথা ছিল না। আমরা তা দেখেছি। অতিকষ্টে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মোটামুটি বেরিয়ে এলেও পরিত্রাণ মেলেনি। একবার ফিরে আসতে পারলে আমাদের দেশ ও সমাজকে সে গিলে খাবে। সন্দেহ নেই এক শ’ বছর পিছিয়ে পড়ব আমরা। কোন অন্যায় বা একতরফা কিছু মেনে নেয়ার কথা বলছি না একবারও। বরং বলছি যারা মন্দের ভাল যারা আমাদের বিশ্বাসে এখনও টিমটিম করে জ্বলছে তাদের বাধ্য করতে। যাতে তাদের আচরণ বদলায়। যাতে তাদের চোখ খোলে। তেমন পাঠ দিতে পারলে বলার কিছু নেই। আর যদি রাগ করে নাক কেটে যাত্রা ভঙ্গ করি তাহলে নিঃশ্বাস নেয়ার নাসিকাও থাকবে না আর। দালাল রাজাকার ঘাতকের পুত্র-কন্যারা মনোনয়ন পাচ্ছেন। এতে ঝামেলা আছে। এর ভেতর বিপদের আভাস আছে। শুরুতে যে বলছিলাম প্রতিশোধ নেয়ার কথা এ তারই প্রমাণ। তাদের সন্তানরা ভোটে জিতলে কি করবে তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন পড়ে না। বরং বলব তারা জিতলে আমাদের ইতিহাস পালিয়ে বাঁচার পথ পাবে না। অসম্মান ও লজ্জায় মুখ লুকাবে মুক্তিযুদ্ধ। আমরা কি তা চাই? এসব বিষয়ের মীমাংসা হবে এবারের নির্বাচনে। জনগণ আর যাই করুক এবার যেন ভুল না করে। যে ভুল আমাদের পিছিয়ে দেবে যে, ভুল আমাদের দেশের অস্তিত্বকে সঙ্কটময় করবে সে ভুল করার চেয়ে বাড়িতে নিদ্র যাওয়া হবে উত্তম। ভোটে আসুন। মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে আবার নিজের মতো করে জাগিয়ে তুলুন। এর কোন বিকল্প নেই। [email protected]
×