ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইসিকে ব্যর্থ করাই বিএনপির প্রধান লক্ষ্য!

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮

ইসিকে ব্যর্থ করাই বিএনপির প্রধান লক্ষ্য!

বিএনপির মির্জা ফখরুল কি এবার খালেদা, তারেকের স্থলে অশুভ কৌশল গ্রহণ করে এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ও ব্যর্থ বলে নির্বাচনের ফলকে যা তাদের পক্ষে না যাবার সম্ভাবনা খুব বেশি, সে ফলকে প্রত্যাখ্যান করার পটভূমি তৈরিতে দিনরাত ব্যস্ত রয়েছে কি? জাতি দেখেছে বিএনপি শুধু যে বঙ্গবন্ধু, চার জাতীয় নেতার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের নেতা জিয়ার দ্বারা বিশেষ দুটি উদ্দেশ্য- বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ও ’৭১-এর খুনীদের রক্ষা করেছিল তা নয়, একটি দীর্ঘ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ দলটি গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে এর চিরকালীন শত্রু গণ্য করেছে। এ দলটির প্রধান দুই নেতাÑনেত্রী, দেশের রাজনীতির খলনায়ক ও খলনায়িকা যখন মুক্ত অবস্থায় নেই তাদের চিরকালীন পারিবারিক বৈশিষ্ট্য হত্যা, নাশকতা, দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদশালী হওয়া- এসব কারণে বিচারের দীর্ঘ হাত দীর্ঘদিন এড়িয়ে থাকতে পারলেও শেষপর্যন্ত দন্ডিত হয়েছে। সেই পটভূমিতে মির্জা ফখরুল গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চায় এগিয়ে আসবে এটাই জাতি আশা করেছিল। কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর তিনি যেন অন্য এক তারেকে রূপান্তরিত হলেন! দেখা যাক, তার তারেকীয় বক্তব্য, মন্তব্যগুলো- ১. ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পরও সে অব্যাহতভাবে বলে চলেছে বিএনপি নির্বাচনে যোগ দেবে কি-না এখনও ঠিক হয়নি! ২. তাদের সঙ্গে তাল দেয়া সুশীলদের বিএনপির অপরাজনীতিকে মেনে নিয়ে রাজনীতি করা রাজনীতিকদের মুখে লেগে থাকা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নাই’, সর্বাধিক উচ্চরিত প্রিয় বাক্যের দোহাই দিয়ে যেন এখুনি বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। ড. কামাল ঐক্যফ্রন্টের নেতা হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন না, তাই বা কি করে হয়, সেটিও অনেকের ভাবনা-চিন্তায় আছে। তবে সব শেষে, সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সাংবাদিক পক্ষ ফখরুলের এই দ্বৈতনীতি পরিহার করে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি-না তার স্পষ্ট জবাব চাওয়ার ফলে মির্জা ফখরুল একরকম বাধ্য হয়ে সর্বসমক্ষে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে এই সিদ্ধান্ত জানান। যদিও এরপর জাতি ভুলতে পারে না, ’৮৬ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার সঙ্গে একমত হয়ে নির্বাচনের আগের দিন রাতে এরশাদের অধীনে নির্বাচন না করার আকস্মিক সিদ্ধান্ত নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে, জাতির সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল! ২০১৬ সালের মেয়র নির্বাচন থেকে আকস্মিকভাবে বেলা ১১টার দিকে খালেদাÑতারেকের নির্দেশে বিএনপির উত্তর সিটির মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেয়ার ফলে প্রয়াত আনিসুল হকের পক্ষে মেয়র নির্বাচিত হওয়া সহজসাধ্য হয়েছিল! এর আগের ২০১৪-১৫-এর নির্বাচনে অংশ না নিয়ে সারাদেশে বিপুল নাশকতাÑতা-ব সংঘটন, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, ভোট কেন্দ্র ধ্বংস, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, এমনকি রিটার্নিং অফিসার পর্যন্ত হত্যার এবং সর্বোপরি পেট্রোলবোমা হামলা দ্বারা শত শত বাস, ট্রাক চালক ও যাত্রী হত্যা করার স্মৃতি এখনও বিএনপি দলটিকে শুদ্ধ রাজনীতির দলের চরিত্র দিতে পারেনি! দলটি সম্পর্কে একটি পুরো জাতির মনে চরম অনিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এ দলের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে। খালেদা, তারেক যে কোন সময়, যেমন ২০১৪-তে তারানকোর মধ্যস্থতায় যখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সিনিয়র নেতারা একটি ঐকমত্যে পৌঁছেছিল তখন শেষ মুহূর্তে তারেকের লন্ডন থেকে পাঠানো নির্দেশে এ সংলাপকে ব্যর্থ করে ওইসব নাশকতামূলক কর্মকান্ড বিএনপি পরিচালনা করে! একটা কথা সত্য, বিএনপি দলীয় নির্বাচন কমিশন এবং দলীয় সরকার না পেলে নির্বাচনে যায় না। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে, সে নির্বাচনের ফলকে দলের অনুকূলে আনার সুযোগ না থাকলে সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না! কেননা সুষ্ঠু নির্বাচন খালেদা, তারেকের কাছে কাক্সিক্ষত নয়! বর্তমান পরিবেশে যখন কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা, সঙ্কট নেই, তখন বারবার ফখরুলের মুখে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের’ নামে নির্বাচন কমিশনকে অকার্যকর, পক্ষপাতমূলক প্রমাণ করাটা হয়ে উঠেছে প্রধান কাজ, যাতে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করা বিএনপির পক্ষে সহজ হয়! এই প্রসঙ্গে জাতি শঙ্কিত- যখন ফখরুল এবং বিএনপি কর্তৃক ৭০-৯০ জন নানা পর্যায়ের অফিসার কর্মকর্তাকে বদলির জন্য তালিকা দেয়া হয়, তখন সন্দেহ হয় যে, লতিফুর রহমানের মতো মুক্তিযুদ্ধপন্থী কর্মকর্তাদের বদলির জন্য তারা আবেদন জানাচ্ছে কি-না! কারণ, সরকারী প্রশাসনে যারা নির্বাচনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করবে তারা অধিকাংশ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী হওয়ার কথা, তাদেরকে তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে বিশ্বাস থাকা বা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়া অপরাধ গণ্য করছে বিএনপির নেতা-নেত্রীরা। এই দলের জন্মদাতা জিয়া, পরের নেত্রীÑনেতা খালেদা ও তারেক যে যুদ্ধাপরাধীদের মিত্র, জঙ্গীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা সেটি তো বারবার তারাই প্রমাণ করেছে! তাহলে ড. কামাল, ফখরুল, মওদুদ প্রমুখ নেতা দৈনিক যে পত্রগুলো নির্বাচন কমিশনকে অভিযোগ করে দিচ্ছে, সেগুলোর স্বাক্ষরদাতা হিসেবে তারাই আছেন। তাহলে তারা কি যুদ্ধাপরাধীপন্থী, জামায়াতÑবিএনপি-শিবিরের আদর্শে বিশ্বাসীদের নির্বাচন পরিচালনার কাজে রাখার পক্ষে ওকালতি ও তদ্বির করছেন? তারেকের নির্দেশ মেনেই যদি মির্জা ফখরুল সব কাজ করেন, পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, তাহলে কিন্তু ৭০-৮০ জন প্রিসাইডিং, রিটার্নিং অফিসার নিশ্চয়ই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী হবেন না এতে কোন সন্দেহ নেই! খালেদাÑতারেক কাকে অপছন্দ করে, হত্যা করতে জঙ্গী লেলিয়ে দেয় তা তো জাতি দেখেছে- তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা অথবা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী অথবা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তারা যাদের চাইবে তারা হবে যুদ্ধাপরাধী, যুদ্ধাপরাধীর সন্তান যারা পিতার আদর্শ অনুসরণ করে এবং ভয়নকভাবে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী! এখন কথা হচ্ছে- নির্বাচন সংঘটিত হয় ভোটকেন্দ্রে, দীর্ঘ সারি বেঁধে নির্বিঘেœ ভোটাররা ভোট দেবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে, ব্যালট বাক্স আগেই সব দলের পোলিং এজেন্টরা দেখে নেবে, ভোট শেষে নিয়ম থাকবে ভোট গণনা হয়ে ফল প্রকাশের আগে কোন দলের পোলিং এজেন্ট ওই কেন্দ্র ত্যাগ করতে পারবে না, সে নিয়মে সব দলের পোলিং এজেন্টের সামনে ভোট গণনা শেষ হয়ে অনানুষ্ঠানিক চূড়ান্ত ফল তৈরি হবে, যা পাঠানো হবে প্রত্যেক উপজেলা, জেলার কেন্দ্রীয় ভোটের চূড়ান্ত যোগফল তৈরি করার নির্বাচনী অফিসে। এখান থেকেই প্রাপ্ত ফল ঢাকার কেন্দ্রীয় নির্বাচন অফিসে চলে যাবে। এরপর কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন অফিস সব ভোটকেন্দ্রের ভোট যোগ করে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করবে। এই প্রক্রিয়াটি যেহেতু বহু কর্মকর্তা ও দলীয় পোলিং এজেন্টের সামনে ভোটকেন্দ্র থেকে শুরু হয়ে কয়েকটি ধাপ পার হয়ে শেষ হয়, সেজন্য অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি হলো শুরুতে ভোটকেন্দ্রে দলীয় পোলিং এজেন্ট থাকা, ভোট গণনা পর্যন্ত পুরো সময়টিতে তার অবস্থান এবং শেষ স্তর- নির্বাচন কমিশনের কেন্দ্রীয় অফিসে কোন দলের কোন ব্যক্তি না থাকা, কোন বিদেশী মিশনের কেউ প্রবেশ না করা, নির্বাচনে অসম্পৃক্ত কোন প্রশাসক/আমলা প্রবেশ না করা! তাহলেই নির্বাচনী ফল সুষ্ঠু হতে কোন বাধা থাকে না। এখন প্রশ্ন হলো- বিএনপির পোলিং এজেন্টরা কেন্দ্র ত্যাগ করে, কেন্দ্রে উপস্থিত না হয়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে নিজেরাই প্রশ্নবিদ্ধ, নির্বাচনকে ব্যর্থ করার কু-নজিরটি আবারও ব্যবহার করবে কি-না? আর এভাবেই নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যাচ্ছে কি-না এটি এখন বড় প্রশ্ন। লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
×