ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুরে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি

মাহমুদুল্লাহর ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ২ ডিসেম্বর ২০১৮

মাহমুদুল্লাহর ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস

মোঃ মামুন রশীদ ॥ প্রথম সেঞ্চুরি থেকে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির ব্যবধান ছিল অনেক লম্বা। ৮ বছর ১০ মাসে ৬৮ ইনিংস অপেক্ষার পর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে গত মাসে মিরপুর টেস্টে পেয়েছিলেন সেঞ্চুরির দেখা। মাঝে বেশ কিছুদিন ব্যাটিং ব্যর্থতায় নিমজ্জিত অবস্থা থেকে নিজেকে ফিরে পেয়েছিলেন সেটার মাধ্যমে। সেটাই যেন মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাই হয়তো সেই একই ভেন্যুতে আবার জ্বলে উঠলেন। এবার মাঝে মাত্র এক টেস্টের দুই ইনিংস বিরতি দিয়েছেন। ৩ সপ্তাহ সময় পেরোনোর আগেই পেয়ে গেছেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি। শনিবার মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয়দিনে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেছেন ক্যারিয়ারসেরা ১৩৬ রানের ইনিংস। এই ভেন্যুতে টানা দুই টেস্টেই শতক পেয়ে গেলেন ৩২ বছর বয়সী মাহমুদুল্লাহ। ইনিংসের হিসেবে সর্বশেষ ৪ ইনিংসে দুটিতেই শতক পেয়েছেন। সেদিক থেকে বলা যেতে পারে টেস্টে অবশেষে ধারাবাহিক হয়ে উঠেছেন মাহমুদুল্লাহ। নিজের এই উন্নতির পেছনে তিনি দাবি করেন মানসিক পরিবর্তন আনার কারণেই সুফল পেয়েছেন। ৯ বছর আগে টেস্ট ক্যারিয়ারে যাত্রা শুরু হয়েছিল বাজেভাবেই। অভিষেকে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টে নিজের পঞ্চম ইনিংসে ৬৯ ও পরের টেস্টে অপরাজিত ৯৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। সেঞ্চুরি হাতছাড়া হওয়ার আক্ষেপটা ভুলতেও বিলম্ব হয়নি, পরের টেস্টেই ১১৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে হ্যামিল্টনে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। কিন্তু এরপর আরেকটি টেস্ট সেঞ্চুরির জন্য মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৬৮ ইনিংস ও ৮ বছর ১০ মাস। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে মিরপুরে ১১ নবেম্বর শুরু হওয়া দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে দলের বিপর্যয়ে হাল ধরে অপরাজিত ১০১ রান করেন এ মিডলঅর্ডার ৬ নম্বরে নেমে। অধিনায়কোচিত এ ইনিংসটি তার ব্যর্থতাও ঢেকে দিয়েছিল। এই টেস্টের আগে ৯ ইনিংসে চরমভাবে ব্যর্থ ছিলেন ১০.৭৫ গড়ে মাত্র ৮৬ রান করে। দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান হিসেবে যা দলের ওপরও প্রভাব ফেলেছিল প্রকটভাবে। টানা ৮ ইনিংস দলীয় রান ২০০ স্পর্শ করতে পারেনি। অথচ বিপর্যয়ের মুখে ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়া মাহমুদুল্লাহর মজ্জাগত স্বভাব। সেই স্বভাবটা যেন দেখাই যাচ্ছিল না। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে আবার সেই রূপ নিয়ে আবির্ভূত হতে পেরেছিলেন। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্টে আবারও হতাশ করেছেন দুই ইনিংসে ৩ ও ৩১ রান করে। যদিও সেটা প্রভাব ফেলেনি দলের ওপর, বাংলাদেশ জিতে যায় বেশ সহজ ব্যবধানে। মিরপুর টেস্টের প্রথমদিন শেষে ৫ উইকেটে ২৫৯ রান তোলে বাংলাদেশ। তবে বিপর্যয়ের শুরু হয়েছিল মাহমুদুল্লাহ উইকেটে আসার আগেই। ১৯০ রানের মধ্যেই ৫ উইকেট হারিয়েছিল দল। কিন্তু এরপর অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ৬৯ রানের জুটি গড়ে দলকে একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থানে রেখেই মাঠ ছেড়েছিলেন। সেখান থেকে দ্বিতীয়দিন শুরু করেছেন সাবলীল ভঙ্গিতে। টেস্টের প্রতিটি দিনের প্রথম সেশনটা বেশ বৈচিত্র্যময় হলেও এদিন প্রথম সেশনে ১২৮ রান তোলে বাংলাদেশ দল শুধু সাকিবের (৮০) উইকেটটি হারিয়ে। সেই জুটিতে ১১১ রান যোগ হওয়াতে ততক্ষণে বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে গেছে দল। আর ততক্ষণে অর্ধশতকও পেয়ে গেছেন মাহমুদুল্লাহ। মধ্যাহ্ন ভোজনের বিরতি শেষেই তার আরেকজন ভাল সঙ্গী লিটন দাস (৫৪) সাজঘরে ফেরেন। তবে এর আগেই সপ্তম উইকেটে তাকে নিয়ে ৯২ রানের জুটি গড়েছেন তিনি। লিটনের বিদায়ের পর থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নেন মাহমুদুল্লাহ। মেহেদী হাসান মিরাজও (১৮) দ্রুত ফিরে গেলে সেঞ্চুরি পাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে। কিন্তু দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। নবম উইকেটে তার সঙ্গে ৫৬ রানের জুটি গড়ার সময়েই ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক পেয়ে যান মাহমুদুল্লাহ। সর্বশেষ ৩ টেস্টে ২ সেঞ্চুরি পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে আমার মানসিকতায় অনেক পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করি। আগের চেয়ে নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাসও বেড়েছে। সে কারণেই হয়তো বড় ইনিংস খেলতে পেরেছি।’ ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে হ্যামিল্টন টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে। করেছিলেন ১১৫। দ্বিতীয় শতক হাঁকান গত মাসে মিরপুর টেস্টে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৬ নম্বরে নেমে। এবার করেন অপরাজিত ১০১। আর এবার ৭ নম্বরে নেমে পেলেন শতক। অথচ এই পজিশনে তিনি আগে মাত্র ৪ ইনিংস ব্যাট করেছিলেন। ইনিংসগুলো ছিল- ১৮, ১৭, ৩৬ ও ৩ রানের। এবার তিনি থেমেছেন ১৩৬ রানে। ২৪২ বলে ১০ চারে এ রান করেছেন। সর্বাধিকবার নেমেছেন তিনি ৪ নম্বরে। এ পজিশনে ২৫ ইনিংসে ৫টি অর্ধশতকসহ করেছেন ৩১.৮০ গড়ে ৭৯৫ রান। এরপর ১৮ ইনিংস ৮ নম্বরে নেমে ১টি শতক ও ৪টি অর্ধশতকে করেছেন ৪০.৭৫ গড়ে ৬৫২ রান। ৫ নম্বর পজিশনে ১৭ ইনিংসে ৩ ফিফটিতে করেছেন ১৬.১৭ গড়ে ২৭৫। সবচেয়ে সফল তিনি ৬ নম্বরে ১১ ইনিংস ব্যাট করে ১ সেঞ্চুরি ও ৩ হাফ সেঞ্চুরিসহ ৪৬.৩১ গড়ে ৩৭১ রান করে। আর ৭ নম্বর পজিশনে ৫ ইনিংসে ৪২.০০ গড়ে ১ শতকে করেছেন মোট ২১০ রান। অবশ্য ওয়ানডেতে মাহমুদুল্লাহ সবচেয়ে বেশিবার নেমেছেন ৭ নম্বরে। এ পজিশনে ৭০ ইনিংস ব্যাট করে ৩৪.৪১ গড়ে ১৫৮৩ রান করলেও কোন শতক পাননি, ৮টি অর্ধশতক আছে শুধু। কিন্তু ৪ নম্বরে মাত্র ১৮ বার ব্যাট করতে নেমে ২টি সেঞ্চুরি, ৬ হাফ সেঞ্চুরিতে ৫০.২১ গড়ে ৭০৩ রান করেছেন। অর্থাৎ ওয়ানডেতে ওপরের দিকে বেশ সফল হলেও টেস্টে নিচের দিকেই বেশ কার্যকর মাহমুদুল্লাহ। ওয়ানডেতেও ৩ সেঞ্চুরি মাহমুদুল্লাহর (একটি করেছেন ৬ নম্বরে নেমে), টেস্টেও একই। টেস্টে সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে সেঞ্চুরির সংখ্যা ৫৪তে দাঁড়াল। সর্বাধিক ৮টি করে সেঞ্চুরি তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হকের। ৬টি করে শতক আছে মুশফিকুর রহীম ও মোহাম্মদ আশরাফুলের। ৫টি শতক পেয়েছেন সাকিব। আর ৩টি করে সেঞ্চুরি আছে মাহমুদুল্লাহ, ইমরুল কায়েস ও হাবিবুল বাশারের। ১২ জন পেয়েছেন একটি করে শতক।
×