ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুর টেস্টে জয়ের সুবাস পাচ্ছে টাইগাররা?, দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ৫০৮/১০, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭৫/৫

সাকিব-মিরাজের ঘূর্ণিতে বেসামাল উইন্ডিজ

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ২ ডিসেম্বর ২০১৮

সাকিব-মিরাজের ঘূর্ণিতে বেসামাল উইন্ডিজ

মিথুন আশরাফ ॥ নাটকীয় কিছু না ঘটলে মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশেরই জেতার কথা। জয়ের সুবাতাসই পাচ্ছে বাংলাদেশ। টেস্টের মাত্র দুইদিন গেল। হাতে আছে আরও তিনদিন। তবে দুইদিন যেতেই সাকিব ও মিরাজের ঘূর্ণি জাদুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে বেহাল দশা, তাতে টেস্ট বাঁচানো ক্যারিবীয়দের জন্য কঠিনই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয়দিনটিও নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৫০৮ রানের বিশাল স্কোর গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিপদেও ফেলে দিয়েছে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ক্যারিয়ারসেরা ১৩৬ রানের অসাধারণ ইনিংসে বড় স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয়দিন শেষ হওয়ার আগেই স্পিনারদের ফাঁদে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে। ৭৫ রান করেছে। তাতে করে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৪৩৩ রানেও এগিয়ে আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফলোঅন এড়াতেই এখনও লাগবে ২৩৪ রান। চার স্পিনার নিয়ে খেলছে বাংলাদেশ। দলে নেই কোন বিশেষজ্ঞ পেসার। স্বাভাবিকভাবেই ধারণা ছিল, শুরুতেই দুইদিক থেকে স্পিন বলই করা হবে। তাই হলো। একদিক থেকে সাকিব, আরেকদিক থেকে মিরাজ বোলিং করলেন। তবে প্রথম ওভারেই সাকিব উইকেট তুলে নিলেন। বাংলাদেশ স্পিনারদের যেন যমের মতো ভয় পেতে শুরু করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা। ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে যেমন সাকিবের ঘূর্ণি বলে বোল্ড হয়ে যান ক্রেইগ ব্রেথওয়েট। দলের স্কোরবোর্ডে কোন রান যোগ হওয়ার আগেই আউট হয়ে যান ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক। মিরাজ নিজের তৃতীয় ওভারেই আবার কাইরন পাওয়ালকে বোল্ড করে দিয়ে সাজঘরে ফেরান। তখন দলের স্কোরবোর্ডে মাত্র ৬ রান থাকে। এমনই অবস্থা হয়ে যায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা ব্যাট হাতে নামেন, অল্প সময় উইকেটে থাকেন; এরপর আউট হয়ে যান। আসা-যাওয়ার মিছিলেই যুক্ত হন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা। তা হওয়ারই কথা। সাকিব-মিরাজ মিলে যে আতঙ্ক তৈরি করে দেন। দলের ১৭ রান হতেই সুনীল এ্যামব্রিসকেও বোল্ড করে দেন সাকিব। কিছুক্ষণ আগেই যে উইকেটে ব্যাটিং করা বাংলাদেশের জন্য সহজ ছিল, সেই উইকেটেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের কাছে ব্যাটিং করাটা কত কঠিন হয়ে ওঠে। ৩ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হতেই এবার রোস্টন চেসকে আউট করে দেন মিরাজ। সাকিব-মিরাজ জুটি কি অসাধারণ স্পিন জাদু দেখাতে থাকেন। সাকিব এক উইকেট নিলে, পরক্ষণেই মিরাজও শিকারি হয়ে ওঠেন। দলের ২৯ রানের সময় হোপকেও (১০) বোল্ড করে দেন মিরাজ। এত দ্রুত ৫ উইকেট হারিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই বিপর্যয় অবশ্য হেটমায়ার (৩২*) ও ডওরিচ (১৭*) দূর করার চেষ্টা করছেন। দুইজন মিলে ষষ্ঠ উইকেটে এরই মধ্যে ৪৬ রানের জুটি গড়েছেন। আজ এই দুইজন তৃতীয়দিনে ব্যাট হাতে নামবেন। দলকে ফলোঅন থেকে বাঁচাতে নামবেন। তা কী পারবেন? তিন উইকেট নেয়া মিরাজ ও দুই উইকেট নেয়া সাকিবের সঙ্গে আজ যদি তাইজুল, নাঈমের বলগুলোও কার্যকর হতে শুরু করে; তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের কি বেহাল দশা হবে তাতো চট্টগ্রাম টেস্টেই দেখা গেছে। প্রথমদিন ৫ উইকেট হারিয়ে ২৫৯ রান করেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয়দিন এর সঙ্গে আরও ২৪৯ রান যোগ করে সাকিববাহিনী। দ্বিতীয়দিন ব্যাট হাতে যে ব্যাটসম্যানই নেমেছেন, নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। পুরোপুরি ব্যাটিং উইকেট হয়ে দাঁড়ায়। তাতে করে সাকিব প্রথমদিনের ৫৫ রানের সঙ্গে আর ২৫ রান যোগ করে আউট হয়ে যান। তবে ৩১ রানে অপরাজিত থাকা মাহমুদুল্লাহ শেষ পর্যন্ত উইকেট আঁকড়ে থাকেন। ২৪২ বলে ১০ চারে ১৩৬ রান করে আউট হন মাহমুদুল্লাহ। তিনি আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের ইনিংসও শেষ হয়। তবে এর আগে এক এক করে ব্যাটসম্যান আসেন, মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে বড় জুটি গড়ে যান। ষষ্ঠ উইকেটে সাকিব-মাহমুদুল্লাহ মিলে ১১১ রানের জুটি গড়েন। সাকিব আউটের পর লিটন কুমার দাস ব্যাট হাতে নামেন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টেস্টে বাদ পড়া লিটন ফিরেই ব্যাট হাতে উজ্জ্বলতা ছড়ান। উইকেটরক্ষক হিসেবে মুশফিকের ব্যাকআপ হিসেবে একাদশে সুযোগ পেয়ে লিটন ব্যাটিং দ্যুতি ছড়ান। তাতে আবারও দলে সুযোগ ধরে রাখার সম্ভাবনা জোরালো করেন। লিটন ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করতে থাকেন। একদিকে মাহমুদুল্লাহ উইকেট আঁকড়ে থাকেন। আরেকদিকে লিটন চার-ছক্কা হাঁকাতে থাকেন। লিটনের খেলা দেখে যেন টেস্ট নয়, নির্ধারিত ওভারের খেলা চলছে; তা মনে হয়েছে। সাকিব-মাহমুদুল্লাহ দলকে ৩০১ রানে নিয়ে যান। লিটনকে সঙ্গে নিয়ে এবার ৩৯৩ রানে যান মাহমুদুল্লাহ। ৯২ রানের জুটি গড়েন। এমন মুহূর্তে ৬২ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৫৪ রান করে ভুল শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান লিটন। লিটনের আউটের পর মিরাজ ব্যাট হাতে নেমে অবশ্য বহুদূর যেতে পারেননি। চার শ’ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হওয়ার পর আর ১৬ রান হতেই মিরাজ সাজঘরে ফেরেন। এরপরও ১৮ রান করে যান। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সব ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্কের বা তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছান। ব্যাটিংয়ে খুব জৌলুস না ছড়াতে পারলেও সেই মিছিলে মিরাজও থাকেন। মিরাজ আউট হওয়ার পর মনে হয় এবার ৫০০ রান করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। ব্যাটিংয়ে যে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে তাইজুল ও নাঈম থাকেন। কিন্তু তারাও যে ব্যাটিংটা ভালই করতে পারেন তা আবারও বুঝিয়ে দিলেন। দলের ব্যাটিংয়ের ভরসা তারাও হয়ে ওঠেন। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে তাইজুল ও নাঈম মিলে শেষ মুহূর্তে ঝলক দেখিয়েছিলেন। এবার মিরপুর টেস্টেও সেই ঝলকানি দেখা গেল। যেখানে দলের ৫০০ রান হওয়া কঠিন ছিল, সেখানে দল তা ছাড়িয়ে গেল। তা সম্ভব হলো মাহমুদুল্লাহর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের সঙ্গে তাইজুল ও নাঈমের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে। নবম উইকেটে গিয়ে তাইজুলের সঙ্গেতো মাহমুদুল্লাহ ৫৬ রানের বড় জুটিই গড়ে ফেলেন। মাহমুদুল্লাহও দেখতে দেখতে ২০৩ বলে সেঞ্চুরি করে ফেললেন। শেষ মুহূর্তে সেঞ্চুরি পেতে মাহমুদুল্লাহকে অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে ঠিক। ৯৮ রান হওয়ার পর একের পর এক বল খেলেই গেছেন। কিন্তু সেঞ্চুরি পেতে অপেক্ষা করেছেন। শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরি হয় মাহমুদুল্লাহর। তাইজুলও ধৈর্য ধরে এগিয়ে যেতে থাকেন। যখন দলের ৪৭২ রান হয়, তখন তাইজুল ৫৮ বলে ২৬ রান করে আউট হন। এরপর নাঈমকে নিয়ে মাহমুদুল্লাহ বাকিটা পথ পাড়ি দেন। ৫০৮ রান যখন হয়, মাহমুদুল্লাহর তখন ১৩৬ রান হয়। এমন সময়ে ওয়ারিক্যানের বলটি বুঝতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ। আউট হয়ে যান। তাতে বাংলাদেশের ইনিংসও শেষ হয়। নাঈম ১২ রানে থাকেন অপরাজিত। মাহমুদুল্লাহর সেঞ্চুরিতে যে বড় স্কোর দাঁড় করিয়েছে বাংলাদেশ, তাতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারোটা বেজে যাওয়ার কথা। তা বেজেছেও। এখন বিশেষ কোন অঘটন না ঘটলে, অতি মানবীয় কোন ইনিংস কোন ব্যাটসম্যান না খেলতে পারলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এ টেস্টেও হার নিয়তি হতে পারে। তাতে করে চট্টগ্রাম টেস্টে হারের পর মিরপুর টেস্টে হার হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হোয়াইটওয়াশ হবে। দেশের মাটিতে বড় কোন শক্তিশালী দলের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সেই সুখস্মৃতি মিলবে। দুইদিন শেষ হতেই জয়ের সুবাতাস পাচ্ছেও বাংলাদেশ।
×