সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দায়িত্ব এটা তাদেরই। অবশ্য এ জন্য বিধিবিধান প্রণয়ন করা যেত। নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি, তা স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখবে। এই মাধ্যম ব্যবহার করে গুজব, অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র চালানোর অজস্র ঘটনা রয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছু মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ হয়েছে ফেসবুকে। এমনকি একে কেন্দ্র করে গুজবের ডালপালাও ছড়ানো হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের নাম দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা না হলেও ফেসবুকের মাধ্যমে অনেকের নাম ছড়িয়ে পড়ে, যা বিভ্রান্তি সৃষ্টিতে সহায়ক হয়েছিল। দলের পক্ষ থেকে সবুজ সঙ্কেত মিলেছে এমন অসত্য ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। নিকট অতীতে গুজবের আধিক্য ও প্রাবল্য প্রত্যক্ষ করা গেছে। সহিংসতা যেমন ছড়ানো হয়েছে, তেমনি সরকার পতনের জন্য অসত্য অভব্য গুজবও প্রচার করা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সময় গুজব ছড়িয়ে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও সহায়তায় বানোয়াট ছবি এবং অসত্য ভুয়া খবর ফেসবুক লাইভ ও অন্যান্য মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সম্পূর্ণ বিপথে চালানোর হীন চেষ্টা হয়েছিল। গুজব রটনাকারীরা যে কত নিচে নামতে পারে তার নমুনাও দেখা গেছে। কোটাবিরোধী আন্দোলন জামায়াত-শিবিরের হাতে চলে যাওয়ার পর তারা অবাধে গুজব রটিয়েছে। উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়েছে। এরও আগে এই কুচক্রী মহল যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী অপরাধে আজীবন দ-প্রাপ্ত সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে বলে সচিত্র গুজব ছড়িয়ে সারাদেশে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ছড়িয়ে দিয়ে বেশ ক’জন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল ও ভ-ুল করার উদ্দেশ্যে আগুনবোমা, পেট্রোলবোমা হামলা চালিয়ে জীবন্ত মানুষকে হত্যা করেছে। ট্রেনে-বাসে অগ্নিসংযোগ করে অগণিত নিরীহ মানুষ হত্যা করা হয়েছে। সরকার পতন ঘটিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করার লক্ষ্য থেকে তারা কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। জঙ্গীবাদের হিংস কার্যক্রমটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে চালানো হয়েছে। জঙ্গী হামলার প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে এই ফেসবুক ব্যবহার করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনাশের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে বহুবার। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে নাজুক করে তোলা হয়েছে প্রায়শ। মাধ্যমটি যাতে ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার করা না হয় সে জন্য নিয়ন্ত্রণ জরুরী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত মদদপুষ্ট ফেসবুক ও অনলাইন এক্টিভিস্টরা আবারও তাদের হীনস্বার্থ উদ্ধারে লিপ্ত হবে, এমনটাই বাস্তব। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার পর তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত হয়েছে নয় সদস্যবিশিষ্ট গুজব শনাক্তকরণ সেল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ঠেকাতে এই সেল গঠন করেছে সরকার। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট নিয়ে প্রপাগা-া, গুজব, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ বা বানচাল করার উদ্দেশ্যে ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার রুখতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যক্রম শুরু করেছে।
ইসি কোনভাবেই সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করতে চায় না। ফেসবুকে প্রচারণার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ আচরণবিধির আওতায় নেই। কিন্তু ইসি পারতেন একটি আচরণবিধি নির্ধারণ করে দিতে। নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে যে আচরণবিধি রয়েছে তারই আলোকে ফেসবুক আচরণবিধি প্রণয়ন করা যায়। যেহেতু নজরদারি থাকছে, সেহেতু বিধিবিধান মেনে নিয়ে বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা যায়। সংশ্লিষ্ট সরকারী সংস্থাগুলোর সহায়তায় ইসি সামাজিক মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধির রূপরেখা ঘোষণা যদি করে, তবে ব্যবহারকারীরা সেই বিধি মেনে চলতে পারে। এই মাধ্যমের অপব্যবহার প্রার্থী, ভোটার, জনগণ ইসি কারোরই কাম্য নয়।
শীর্ষ সংবাদ: