ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিপুল অর্থ ব্যয়ে গড়ে উঠেছে সুন্দর হাউস

রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী সুন্দর জীবনের হাতছানি ভাসানচরে

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ২ ডিসেম্বর ২০১৮

রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী সুন্দর জীবনের হাতছানি ভাসানচরে

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ বর্বরোচিত সেনা অভিযানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ওরা মরেছে হাজারে হাজারে। ভাগ্য বিড়ম্বিত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে লাখে লাখে। ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলেও মিয়ানমার নানা ছলচাতুরিতে লিপ্ত। ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া গেছে থমকে। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে ৩০ শিবিরে ওরা এখন আশ্রিত। ত্রাণসহ সব ধরনের সুবিধা নিয়ে ওরা জীবনকে এগিয়ে নিচ্ছে। এরপরও তারা বাস্তুহারা। নিজ দেশে কখনও নির্বিঘেœ এবং নাগরিকত্বের অধিকার নিয়ে ফিরে যাবে এখনও তা অনিশ্চিত। এর মধ্যে নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপের ভাসানচরে ওদের জন্য নির্মিত হয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বাসস্থল। সরকারী বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয়ে ইতোমধ্যে ভাসানচরে গড়ে উঠেছে অনিন্দ্য সুন্দর হাউস। যেখানে ওরা বসবাস করতে পারবে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। সদিচ্ছা, ভিশন থাকলে যে কোন কঠিন কাজও যে সম্পন্ন করা যায় সম্প্রতি এর একটি অসাধারণ উদাহরণ সাগর বক্ষে জেগে ওঠা নোয়াখালী হাতিয়ার ভাসানচর। যে চরে ইতিপূর্বে কোন জনবসতি ছিল না। সে চরটি এখন বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার উপায়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বসবাস উপযোগী। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রায়ণ প্রকল্প-৩’র আওতায় ২৩শ’ কোটি টাকার বরাদ্দ নিয়ে ইতোমধ্যে ১৭শ’ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে লালটিনে আচ্ছাদিত পাকা দেয়ালের হাউস। যেখানে রয়েছে জীবন ধারণের সকল উপাদান। এ চরেই রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনায় সরকার এককভাবে নৌবাহিনীর সদস্যদের দিয়ে এই চরকে বসবাস উপযোগী করে তুলেছে। প্রায় ত্রিশ বছর আগে জেগে ওঠা এ চরটি শুধু গোচারণ ভূমি ছিল, সেখানে এখন মানুষের জীবন ধারণের সকল উপকরণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যা রীতিমতো বিস্ময়কর। ১৩ হাজার একর বিশিষ্ট এ চরের মাত্র ১৭০২ একর এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে এর অভ্যন্তরে নির্মিত হয়েছে জাতিসংঘ প্রদত্ত নিয়মনীতির চেয়েও বেশি উপকরণ সমৃদ্ধ বসতবাড়ি। গত ১৫ নবেম্বর মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের দিনে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাবে না বলে আওয়াজ তুললে পুরো প্রক্রিয়া থমকে যায়। এ প্রক্রিয়া কখন শুরু হবে তা এখনও অনিশ্চিত। আর মিয়ানমার আদৌ ভবিষ্যতে প্রত্যাবাসন শুরু করলে তা দিনে দেড় শ’ থেকে সর্বোচ্চ ৩শ’ হবে। সরকার পক্ষে বিষয়টি আগেভাগে আঁচ করতে পেরে জনমানবশূন্য ভাসানচরকে বসবাস উপযোগী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। যা আশ্রায়ণ প্রকল্পের অধীনে। অত্যন্ত দ্রুততম সময়ে এটি এখন প্রস্তুত। সংখ্যায় যাই হোক প্রথম পর্যায়ে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া রয়েছে। উন্নয়ন পরিকল্পনায় জড়িতদের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ভবিষ্যতে আরও ২ লাখ মানুষকে সেখানে স্থানান্তরের অবকাঠামোগত সুবিধা সৃষ্টি করার সুযোগ রয়েছে। পুরো দ্বীপটি যেখানে ১৩ হাজার একরের, সেখানে বিপুল পরিমাণ জমি এখনও ব্যবহারের সুবিধা রয়ে গেছে। সূত্র জানিয়েছে, সোলার সিস্টেমে নব নির্মিত বাড়িঘর বিদ্যুতায়িত হয়েছে। গবাদি পশুও সেখানে চাষ হচ্ছে। প্রতিটি হাউসের প্রতিটি কক্ষ স্ট্যান্ডার্ড সাইজের। যেখানে রয়েছে বাথরুম ও টয়লেট ফ্যাসিলিটিজ। সরকারের গৃহীত এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১৭শ’ কোটি টাকা। বরাদ্দের আরও ৬শ’ কোটি টাকা অবশিষ্ট রয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা রোহিঙ্গাদের কখন স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠিত স্থাপনাসমূহের কারুকাজ এবং সোলার সিস্টেমে রাতের বেলায় বিদ্যুতের আলো ঝলমলে পরিবেশ এদেশের সহায়-সম্বলহীন যে কোন মানুষকেও আকৃষ্ট যে করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। ফলে অস্থায়ীভাবে রোহিঙ্গাদের সেখানে পুনর্বাসন করা হলে উখিয়া টেকনাফের স্থায়ী বাসিন্দাদের কাঁধে ভর করে থাকা বিপর্যয় পরিস্থিতি কিছুটা অবসান ঘটবে। এদিকে, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থমকে গেছে। আর দেশে এসেছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনী ডামাডোলে প্রশাসনযন্ত্র যেমন ব্যাপক তৎপর, তেমনি এদেশের মানুষ রয়েছে এখন উৎসবমুখর পরিবেশে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের বাছাই করে উখিয়া টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম হয়ে বা অন্য কোন পথে সেখানে নেয়ার বিষয়টি কখন শুরু করা যাবে তা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন সুউচ্চ বেড়িবাঁধ, রয়েছে স্যুয়ারেজ সিস্টেমসহ অন্যান্য সুবিধা। যারা যাবে সেখানে তাদের জীবিকা নির্বাহের বিভিন্ন কর্মসূচীও নিয়েছে সরকার।
×