ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দণ্ড স্থগিত হলে ভোটে দাঁড়ানো যাবে আদেশের বিরুদ্ধে আজ আপীল শুনানি

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২ ডিসেম্বর ২০১৮

দণ্ড স্থগিত হলে ভোটে দাঁড়ানো যাবে আদেশের বিরুদ্ধে আজ আপীল শুনানি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিচারিক (নিম্ন) আদালতের দেয়া সাজা কিংবা দণ্ড স্থগিত হলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে বলে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেছে সুপ্রীমকোর্টের চেম্বার জজ আদালত। এর ফলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবিরা সুলতানা আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। একই সঙ্গে আজ রবিবার আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এই মামলার শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। শনিবার চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এই আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে সাবিরা সুলতানার পক্ষে শুনানি করেন এ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী ও আমিনুল ইসলাম। দুদকের পক্ষে এ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। আদেশের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালতে দণ্ডিতরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তিনি আরও বলেন , দণ্ডিতের সাজা স্থগিত হলে নির্বাচনে যেতে পারবেন- হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপীলে যাওয়া জরুরী ছিল। আর যে কারণে ছুটির দিনেও আদালতে যাওয়াও জরুরী ছিল। অন্যদিকে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বিচারকদের সব ধরনের ভয়ভীতির উর্ধে থেকে বিচার করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে নৈতিকস্খলনের কারণে কোন ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। তবে, বিচারিক আদালতের দ- আপীল বিভাগে চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে দণ্ডিত বলার কোন বিধান নেই। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, যশোর-২ আসন থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবিরা সুলতানাকে ঢাকার একটি বিশেষ আদালত দুদক আইনের দুটি ধারায় তিন বছর করে সাজা দিয়েছিল। সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করে তিনি হাইকোর্ট থেকে এর আগে জামিন নিয়েছিলেন। এরপর জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পুনরায় তিনি হাইকোর্টে আবেদন করে তার ওই দুর্নীতি মামলার সাজা ও দ- স্থগিত চেয়ে আবেদন জানান। পরে হাইকোর্টের একটি একক বেঞ্চ তার সাজা ও দ- স্থগিত করেন। এর বিরুদ্ধে আমরা চেম্বার জজ আদালতে আবেদন জানাই। এরও আগে হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ দ-িতরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে আদেশ দিয়েছিলেন। তাই আমরা হাইকোর্টের ওই একক বেঞ্চের আদেশের স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন জানাই। চেম্বার আদালত আমাদের (রাষ্ট্রপক্ষ) আবেদনের ওপর উভয় পক্ষের শুনানি শেষে সাবিরা সুলতানার সাজা ও দণ্ড স্থগিত করে হাইকোর্টের একক বেঞ্চের দেয়া আদেশ স্থগিত করেন এবং আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আজ রবিবার শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেন। ফলে, সাজা ও দ- স্থগিত করা হাইকোর্টের ওই একক বেঞ্চের আদেশ আর বহাল রইল না। আজ রবিবার সকাল সাড়ে ১১টায় বা তার আগে আমাদের এ আবেদনের ওপর শুনানি হবে।’ অন্যদিকে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, বিচারব্যবস্থাকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। সারাদেশের মানুষ উচ্চ আদালতের বিচারপতি এবং আইনজীবীদের দিকে তাকিয়ে আছে। বিচারবিভাগ জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল। তাই বিচারবিভাগের স্বাধীনতা না থাকলে গণতন্ত্র থাকবে না, আইনের শাসন থাকবে না এবং দেশের মানুষ সুবিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। আমরা আগেই বলেছিলাম বিচারবিভাগের স্বাধীনতা নেই, বিচারবিভাগ স্বাধীনভাবে বিচার করতে পারছে না। গত ২৯ নবেম্বর জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে ঝিকরগাছা উপজেলার চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানাকে বিচারিক আদালতের দেয়া সাজা ও দণ্ড স্থগিত করে বিচারপতি মোহাম্মদ রইস উদ্দিনের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশ দেন। পরে সাবিরা সুলতানার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম জানান, বিচারিক আদালতের দেয়া সাবিরা সুলতানার সাজা ও দণ্ড স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। এর ফলে এই আদেশের পর থেকে যারা নির্বাচনে অংশ নিতে চান তারা হাইকোর্টে সাজা বা দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন করে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তবে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছিলেন, সংবিধান অনুসারে ২ বছরের অধিক সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নির্বাচনে অংশ নিতে অযোগ্য হবেন। তাই হাইকোর্টের এই একক বেঞ্চের আদেশের বিরুদ্ধে আমরা আপীলে যাব। সাবিরা সুলতানার ওই মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের ২৪ মে সাবিরা সুলতানা তার ৫৫ লাখ ৭৮ হাজার ১৩৫ টাকা সম্পদের হিসাব জমা দেন দুদকে। পরবর্তী সময়ে দুককের অনুসন্ধানে দেখা যায় ৪৫ লাখ টাকার সম্পদের বিষয়ে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা তথ্য দেয়াসহ ১ কোটি ৭৮ হাজার ১৩৫ টাকার সম্পত্তি অসাধু উপায়ে অর্জন করেছেন সাবিরা সুলতানা। যা তার বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। ওই ঘটনায় গত ২০১০ সালের ২০ জুলাই সৈয়দ আহমেদ (দুদকের সহকারী পরিচালক) বাদী হয়ে ধানম-ি থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর ওই বছর ২৫ জুলাই ৯ জনকে সাক্ষী করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০১১ সালের ৯ নবেম্বর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। এদিকে এর আগে হাইকোর্টে দুটি বেঞ্চ ২৬ ও ২৭ নবেম্বর এ বিষয়ে আদেশ প্রদান করেছে। ২৬ নবেম্বর সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর রায় ফাঁসের মামলায় তার আইনজীবী দ-প্রাপ্ত ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের দ- স্থগিত চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ পর্যবেক্ষণসহ আদেশ দেন। সেখানে বলা হয়, বিচারিক (নিম্ন) আদালতের দ-ের বিরুদ্ধে করা আপীল আবেদন বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দ- স্থগিতের বিধান নেই। চাইলে আবেদনকারী আপীল বিভাগে যেতে পারে। আপীল বিভাগ এ ব্যাপারে একটি প্রিন্সিপাল সেটেল (নীতি নিষ্পত্তি) করতে পারে। পরবর্তীতে হাইকোর্ট তা অনুসরণ করতে পারে। অন্যদিকে ২৭ নবেম্বর বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমানসহ ৫ নেতা বিচারিক আদালতের দেয়া দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে আবেদন করলে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম পর্যবেক্ষণ দিয়ে আবেদন খারিজ করে দেন। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে বিচারিক আদালতে কোন ব্যক্তির দুই বছর বা তার বেশি মেয়াদে সাজা হলে ওই দ-ের বিরুদ্ধে আপীল চলাকালে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আপীলে সেই দণ্ড বাতিল বা স্থগিত হলেই কেবল সাজাপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বলেও জানিয়েছে আদালত। হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন আপীল করেন। ২৮ নবেম্বর বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ‘নো অর্ডার’ প্রদান করেন। এর ফলে হাইকোর্টের আদেশই বহাল রয়েছে।
×