স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরিবারের প্রধান হিসেবে নিজের আয় রোজগার যেমন বেশি থাকার কথা, তেমনি সম্পদও। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে স্ত্রীর নামে যদি বেশি সম্পদ থাকে তাহলে বিষয়টি আলোচনায় আসে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ তার স্ত্রী ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের তুলনায় কম। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের দাখিল করা হলফনামা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তবে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে গত পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা। এই বিবেচনায় সম্পদ বাড়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
হলফনামা অনুযায়ী, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্থাবর সম্পত্তির মূল্যমান ২ কোটি ৫০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বিপরীতে রওশন এরশাদের স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ৭ কোটি ৩১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ফলে এরশাদের তুলনায় তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পদ বেশি প্রায় ২ দশমিক ৯২ গুণ।
দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী, এরশাদের নিজের নামে ৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৮০ হাজার ২০০ টাকার ও তার স্ত্রীর নামে ৩৪ কোটি, ৭৯ লাখ, ৯১ হাজার ৭১৩ টাকার অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব রয়েছে। হলফনামায় বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছে, ১ কোটি ৮ লাখ ৪২ হাজার ২০৬ টাকা। একইসঙ্গে হলফনামায় এরশাদের ২ কোটি ৩২ লাখ ৪ হাজার ৬৩৫ টাকার দুইটি ব্যাংকে ঋণের কথাও বলা হয়েছে। ইউনিয়ন ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে এই ঋণ নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে এরশাদেরও স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে বনানী ইউআই শপিং কমপ্লেক্স এর দোকান, বারিধারার দূতাবাস রোডের ফ্ল্যাট, বনানীর ব্লক সি’তে ফ্ল্যাট, গুলশানের ফ্ল্যাট। অন্যদিকে স্ত্রী রওশন এরশাদের নামে রয়েছে পূর্বাচল, গুলশানে জমি, বসুন্ধরা ও গুলশানে একাধিক ফ্ল্যাট।
অন্যদিকে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি ৬টি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে ও চারটি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। এছাড়াও অতীতের ২৭টি মামলার কথাও জানিয়েছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। মামলাগুলোর কোনটিতে তিনি খালাস আবার কোনটিতে অব্যাহতি পেয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
টানা প্রায় নয় বছর দেশ শাসনের পর তীব্র গণআন্দোলনের মুখে এরশাদের পদত্যাগ করতে হয়েছিল। এরপর বিএনপির দেয়া মামলায় জেল খাটেন তিনি। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নানা নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন বারবার মত পাল্টানো নেতা এরশাদ। পাওয়া না পাওয়ার নানা অভিযোগের মধ্যে পাঁচ বছর অত্রিক্রম করেন তিনি। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে তিনি নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ান। দলের সকল নেতাকর্মীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন তিনি। এরপর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেন এরশাদ। এরপর তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূতের দায়িত্ব দেয়া হয়। আনুষ্ঠানিক কাজ না থাকলেও পাঁচ বছর বিশেষ দূতের সব রকমের সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন তিনি। বলা হয়, সবচেয়ে নিরাপদ সময় চলছে এরশাদের।
এরশাদ নিজেও বহুবার বলেছেন, সামরিক শাসক থেকে রাজনীতিতে এসে টিকে থাকার ইতিহাস পৃথিবীতে বিরল। তিনিই এই ইতিহাসের উজ্জ্বল সাক্ষী। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, মাটি মানুষের রাজনীতি করে জাতীয় পার্টি। তাই টিকে আছেন তিনি। কারণ দেশের মানুষ জাতীয় পার্টিকে ভালবাসে।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে ৭০টি আসন চায় জাপা। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪০টি আসন ছাড় দেয়া হতে পারে জাপার জন্য। বর্তমানে জাপার সংসদ সদস্য ৩৪। সংরক্ষিত মিলিয়ে ৪০ জন। অথচ দলের পক্ষ থেকে ২২০ প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে মনোনয়ন বঞ্চিতরা অনেকেই এরশাদসহ অনেকের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন। যদিও দলের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ঘরে বাইরে বেকায়দার আছে এরশাদের জাতীয় পার্টি।
মেননের স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ২২গুণ ॥ বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি এবং সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের আয় গত ১০ বছরে যেমন বেড়েছে, তেমনি তার স্ত্রীও হয়েছেন কোটিপতি। মেননের স্ত্রীর ১০ বছরে সম্পদ বেড়েছে ২২ গুণেরও বেশি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দাখিল করা হলফনামা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন, গত ১০ বছরে মেননের বার্ষিক আয় বেড়েছে নয় লাখ ৬৬ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ৫১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকার। অর্থাৎ ১০ বছরে তার বার্ষিক আয় প্রায় চারগুণ ও অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে তিনগুণের বেশি।
এদিকে, ১০ বছরে স্থাবর সম্পত্তির দিক থেকে তার স্ত্রী কোটিপতি হয়েছেন। নবম ও দশম নির্বাচনের হলফনামায় তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তি না থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ দেখানো হয়েছে এক কোটি ৪৯ লাখ ৮০ হাজার ২৪০ টাকা।
মন্ত্রী মেননের স্ত্রীর নামে একটি বাড়ি রয়েছে। যার মূল্য দেখানো হয়েছে এক কোটি ৪৯ লাখ ৮০ হাজার ২৪০ টাকা। আর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছিল- মেননের স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি ছিল দুই লাখ ৬৪ হাজার টাকা। এখন তা দেখানো হয়েছে ৫৯ লাখ ২৬ হাজার ৪৩০ টাকা।
এদিকে, গত ১০ বছরে রাশেদ খান মেননের যানবাহনের সংখ্যা কমেছে। এখন একটি টয়োটা জিপ প্রাডো গাড়ি রয়েছে। যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৬১ লাখ ৮৫ হাজার। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি মোট আয় দেখিয়েছিলেন তিন লাখ ২৫ হাজার ৭২৪ টাকা। আর স্থাবর সম্পত্তি না থাকলেও অস্থাবর সম্পত্তি দেখিয়েছিলেন ২৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার।
অন্যদিকে, তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় ছিল এক লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং তাদের অস্থাবর সম্পত্তি ছিল এক লাখ ৩৬ হাজার টাকা। ১০ বছর পর রাশেদ খান মেননের ওপর নির্ভরশীলদের আয় ও অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য শূন্যের ঘরে নেমে এসেছে।
নবম ও দশম নির্বাচনের সময় দেখানো হয়েছিল, ব্যবসা ও পত্রিকায় কলাম লিখে তিনি আয় করতেন লাখ টাকার ওপরে। বর্তমানে তিনি ব্যবসা থেকে আয় নেই বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। দশম সংসদ নির্বাচনের সময় রাশেদ খান মেননের হাতে নগদ অর্থ ছিল এক লাখ ৫০ হাজার এবং তার স্ত্রীর কাছে ছিল ৩০ হাজার টাকা। বর্তমানে তাদের হাতে যথাক্রমে সাত লাখ ৫৭ হাজার ১৪ টাকা এবং সাত লাখ ৯৬ হাজার ২২০ টাকা দেখানো হয়েছে।
আসন্ন সংসদ নির্বাচনে রাশেদ খান মেনন ঢাকা-৮ আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ ডিসেম্বর। আর প্রতীক বরাদ্দ ১০ ডিসেম্বর।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে মেননের দল ওয়ার্কার্স পার্টি। অর্থাৎ আদর্শিক রাজনৈতিক জোট ১৪ দলের শরিক হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় তার দল। তখন মহাজোটে নির্বাচন হয়। ২০১৪ সালে ১৪ দলের শরিক হিসেবে ফের নির্বাচনে অংশ নেয় ওয়ার্কার্স পার্টি। দু’বার মন্ত্রীর দফতর বদল হয় তার। প্রথমে বিমানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মেনন। তারপর সমাজকল্যাণমন্ত্রী করা হয় তাকে। সংরক্ষিত সহ বর্তমানে ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য সংখ্যা ৭। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটির দাবি ছিল ১০ জন সংসদ সদস্য দেয়ার। যদিও দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে ৩০ জনকে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন বণ্টন এখন চূড়ান্ত হয়নি। আলোচনা আছে গত বারের চেয়ে এবার ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ১৪ দলের শরিকদের আসন কমবে। কারণ মহাজোটের শরিক বেড়ে যাওয়ার কারণেই আসন কমতে পারে। শেষ পর্যন্ত ওয়ার্কার্স পার্টি ৪/৫টি আসন পেতে পারে। ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে মাশরাফির আসনটি ছাড় দেয়া হয়েছে। এই আসনে বর্তমান এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির।
শেষ পর্যন্ত ওয়ার্কার্স পার্টি কতটি আসন পাচ্ছে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত। অর্থাৎ নয় ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন।