ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এজতেমা মাঠ রণক্ষেত্র ॥ টঙ্গীতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত দু’শতাধিক

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২ ডিসেম্বর ২০১৮

এজতেমা মাঠ রণক্ষেত্র ॥ টঙ্গীতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত দু’শতাধিক

নিয়াজ আহমেদ লাবু/মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/নুরুল ইসলাম ॥ টঙ্গীতে জোড় এজতেমাকে কেন্দ্র করে বিশ্ব এজতেমা ময়দানে তবলীগ জামাতের দিল্লী মারকাজ সাদপন্থী এবং বাংলাদেশে মাওলানা জুবায়ের অনুসারীর মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। নিহত সাদপন্থীর অনুসারী। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। শনিবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত দুই পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় এজতেমা মাঠে থাকা প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। প্রায় ১১ ঘণ্টা বিমানবন্দর সড়কের একপাশে অবরোধের ফলে টঙ্গীমুখী অংশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সেখানে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন বিদেশগামী এবং দূর পাল্লার যাত্রীরা। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আগামী এক মাস টঙ্গী বিশ্ব এজতেমা মাঠ প্রশাসনের দখলে থাকবে। অপরদিকে নির্বাচন কমিশন শুক্রবার এক আদেশে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের আগে টঙ্গীর এজতেমা মাঠে সব ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত কয়েকদিন ধরে টঙ্গী বিশ্ব এজতেমা ময়দান দখল করে মাওলানা জুবায়েরপন্থীরা কোমলমতি মাদ্রাসার ছাত্রদের হাতে লাঠি দিয়ে সেখানে পাহারা বসায়। শনিবার ভোরেরদিকে সাদপন্থীরা জোড় করতে ময়দানে ঢুকতে গেলে দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় জুবায়েরপন্থী মাদ্রাসার ছাত্রদের লাঠির আঘাতে সাদপন্থীর এক অনুসারী নিহত হয়েছেন। টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, নিহত ইসমাইল হোসেনের (৭০) বাবার নাম মৃত খলিল ম-ল। গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুর-মুন্সীগঞ্জ জেলার মিলিয়াপাড়া গ্রামে। নিহত ইসমাইলের শরীরে ধারালো চাপাতির পাঁচটি কোপ রয়েছে। তিনি মাওলানা সাদ অনুসারী ছিলেন। ওসি জানান, আলোচনার মাধ্যমে বিকেল ৩টার দিকে এজতেমার মাঠ থেকে সাদপন্থীদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল অব্যাহত রয়েছে। এদিকে বিকেলে সাদপন্থী অনুসারীরা বিশ্ব এজতেমা ময়দান থেকে ফেরার পথে বিমানবন্দর চৌরাস্তার সড়কের পশ্চিম পাশের বাবুর সালাম মাদ্রাসা ছাত্রদের হাতে মারধরের শিকার হন। এই মাদ্রাসার জুবায়ের অনুসারী মাদ্রাসার ছাত্রদের পিটুনিতে সাদপন্থীর অনুসারী মিরপুরের মিজান (৫৫) নামে এক মুসল্লি গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক মনিরা বেগম বলেন, বিকেল পর্যন্ত প্রায় দেড়শ’ মুসল্লিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এখনও নতুন আসা আহতদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে গুরুতর আহত ২৫ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, কুর্মিটোলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত গুরুতর আহতরা হচ্ছেন, আব্দুর রাজ্জাক (৩০), আবু তালেব (৩৫), নূর হোসেন (১৫), মাওলানা মাসুদুর রহমান (৩৫), ইমরান (৩৫), সফিকুল ইসলাম (৩০), মোঃ শামীম মাতব্বর (৪৯), মোঃ শেখ আব্দুর রব (৮৪), রাসেদ (৩০), মোঃ জালাল খান (৫০), রুস্তম আলী (৪০), সোলায়মান আকন্দ (৫৫) প্রমুখ। স্থানীয় এমপি জাহিদ আহসান রাসেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এজতেমার মুসল্লিদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন। গুরুতর আহতদের টঙ্গী থেকে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও অন্যান্য উপজেলা থেকে আসা এ্যাম্বুলেন্স দিয়ে পাঠানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাওলানা সাদের অনুসারী তবলীগ জামাতের মুসল্লিরা শনিবার ফজরের নামাজের পর থেকে এজতেমা মাঠে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ সময় ভেতরে থাকা মাওলানা জুবায়েরের অনুসারী তবলীগ জামাতের মুসল্লি ও মাদ্রাসার ছাত্ররা তাদের ভেতের প্রবেশে বাধা দেয়। এতে সাদ অনুসারীরা টঙ্গী-কামারপাড়া সড়কে অবস্থান নিয়ে তাসবিহ তাহলিম ও বয়ান করছিলেন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা ভেতরে ঢুকে জুবায়ের অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। বেলা ১১টার দিকে এজতেমা মাঠের টয়লেটের ছাদ থেকে জুবায়ের অনুসারী ছাত্ররা বাইরে অবস্থান নেয়া সাদ অনুসারীদের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে সাদ অনুসারীরা তাদের ওপর নিক্ষেপ করা ইট পাটকেল দিয়ে পাল্টা জুবায়ের অনুসারীদের ওপর হামলা করে। এক পর্যায়ে সাদ অনুসারীরা এজতেমা মাঠে প্রবেশ করলে দু’পক্ষের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে মুসল্লি ও মাদ্রাসার ছাত্ররা আহত হয়। বিকেল ৩টার দিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা এজতেমা মাঠে অবস্থান করা সাদ অনুসারীদের মাঠ থেকে সরিয়ে দেন। ঢাকা মোহাম্মদপুরের বসিলা হাফেজি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নূর হোসেন (১৫) জানায়, সে গত বুধবার এজতেমা মাঠে আসে মাঠ তৈরির কাজ করতে। তার সঙ্গে আরও সহপাঠীও এজতেমা মাঠে জড়ো হয়। একই মাদ্রাসার মোঃ সিয়াম ও ওমর ফারুক জানায়, তারা আগে কোনদিন তবলীগ জামাতে অংশ নেননি। বুধবার এজতেমা মাঠে এসে এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। এ ব্যাপারে টঙ্গী কামারপাড়া রোডের চা বিক্রেতা সোহাগ ও রাকিব জানান, জোবায়েরপন্থী মুসল্লিরা বুধবার রাত থেকে এজতেমা ময়দানের ভেতরে অবস্থান নেয়। তারা শুক্রবার সকালে এজতেমা ময়দানে প্রবেশের সব গেট বন্ধ করে দেয়। বাইরের সাধারণ মুসল্লিদেরও তারা এজতেমা মাঠে জুমার নামাজ আদায় করতে দেয়নি। তারা জানান, শনিবার ফজরের নামাজের আগে থেকে মাওলানা সাদপন্থী মুসল্লিরা এজতেমা মাঠের চার দিকে টঙ্গী বাটা গেট ও কামাড়পাড়া রোডে তজবিহ ও কিতাব হাতে অবস্থান নেয়। পরে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে এজতেমা মাঠের ভেতর থেকে সাদপন্থী মুসল্লিদের উদ্দেশে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে ওই ইটপাটকেলগুলো সাদপন্থী মুসল্লিরা জোবায়েরপন্থী মুসল্লিদের ওপর নিক্ষেপ করে। এতে উভয় পক্ষের প্রায় শতাধিক মুসল্লির মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে আহত হয়। দিল্লী মারকাজের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা এর মধ্যেই পাঁচ দিনের জোড় এজতেমা করার ঘোষণা দিলে দেওবন্দপন্থী মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা দিন কয়েক আগে এতজেমা মাঠ দখল করে আশপাশে পাহারা বসায়। এ অবস্থায় মাওলানা সাদের অনুসারীরা শুক্রবার ময়দানে ঢুকতে না পেরে আশপাশের মসজিদে অবস্থান নেন। শনিবার ভোর থেকে সাদের অনুসারী শত শত মানুষ ঢাকার দিক থেকে টঙ্গীর পথে রওনা হলে পরিস্থিতি বিস্ফোরণোন্মুখ হয়ে ওঠে। বিমানবন্দর সড়কসহ টঙ্গীর পথের বিভিন্ন স্থানে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে বিমানবন্দর সড়কের এক দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা জোনের উপ-কমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল বলেন, বিমানবন্দর সড়কে ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথের একপাশে যান চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের সরিয়ে দিতে। মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর জোনের সহকারী কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, দুই পক্ষের লোকজন বিমানবন্দর গোল চত্বর ছাড়াও আবদুল্লাহপুর এলাকা ও আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কিছুটা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, স্লোগানও হয়েছে। দুই পক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা চলছে। সাদপন্থী হিসেবে পরিচিত তবলীগ জামাতের শূরা সদস্য মাওলানা সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বলেন, ওই পক্ষের লোকজন কয়েক দিন ধরে মাঠ দখল করে রেখেছে। ছোট ছোট ছেলেরা সেখানে আমাদের কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না। জোড় এজতেমায় যোগ দিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা ময়দানে যাওয়ার চেষ্টা করলে তারা বাধা দিচ্ছে। এ কারণে রাস্তায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে মাওলানা জুবায়েরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত তবলীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য মাওলানা আবদুল কুদ্দুস বলেন, বাচ্চারা না, ওখানে বড়রাই আছে। তারা বিশ্ব এজতেমার প্রস্তুতির জন্য কাজ করছে। সাদের পক্ষের লোকজন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য আজ সেখানে যেতে চাইছে। মাওলানা সাদের অনুসারী ও ঢাকার শান্তিনগরের মাওলানা রুহুল আমীন বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন জেলার মাননীয় জেলা প্রশাসকগণ দুই পক্ষকে জেলায় এবং ইজতেমা মাঠে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে দুই ভাগে জামাত আয়োজনের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। দেশের সব জেলায় এমনকি কাকরাইল মসজিদেও দুইভাগে কার্যক্রম চলছে। অথচ তারা সরকারের সিদ্ধান্ত না মেনে বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্রদের বিশ্ব এজতেমা মাঠে এনে সরকারী নির্দেশ অমান্য করছে। তারা সাদ অনুসারীদের এজতেমা মাঠে প্রবেশ করতে বাধা ও মাঠ থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। রুহুল আমীন বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও সাদ অনুসারীরা বিশ্ব এজতেমা শুরুর নির্ধারিত সময়ের আগে টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমা ময়দানে জোড় এজতেমা অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী ৩০ নবেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ দিনব্যাপী জোড় এজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু ৩০ নবেম্বর জোড় এজতেমায় যোগ দিতে আসা কয়েক হাজার মুসল্লি এজতেমা ময়দানে ঢুকতে গেলে মাওলানা জুবায়েরের অনুসারী বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্ররা বাধা দেন। গত কয়েকদিন ধরে কওমি মাদ্রাসা থেকে বিপুলসংখ্যক ছাত্র বিচ্ছিন্নভাবে এজতেমা ময়দানে অবস্থান নেয়। তারা সাদপন্থীদের কৌশলে মাঠ থেকে সরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। অপরদিকে প্রতিপক্ষের দেওবন্দ (জোবায়ের) কওমিপন্থী তবলীগ মুরব্বি মাওলানা শরীফুল ইসলাম জানান, ৭ থেকে ১১ ডিসেম্বর তারা জোড় এজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা দেন। এ ঘোষণা শুনে সাদপন্থীরা ৩০ নবেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ দিনব্যাপী জোড় এজতেমা অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিলে নিজ নিজ পক্ষের প্রতিনিধিদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডেকে নিয়ে নির্বাচনের আগে জোড় এজতেমা স্থগিত রাখার অনুরোধ জানানো হয়। সেখানে উভয় পক্ষই ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। তারপরও সাদ অনুসারী কয়েক হাজার তবলীগ মুসল্লি শনিবার ভোরে জোড় এজতেমা করার জন্য ময়দানে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ প্রসঙ্গে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের দক্ষিণ জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার থোয়াই অংপ্রু মারমা বলেন, এজতেমা ময়দানের বাইরে কয়েক হাজার মুসল্লি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেয়ায় যানবাহন চলাচল বিঘিœত হয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ থাকে। গাজীপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক একেএম কাওসার চৌধুরী জানান, সংঘর্ষের মধ্যে ইসমাইল মণ্ডল নামে মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তিনি সাদপন্থীর অনুসারী। সকালে সংঘর্ষ শুরুর পর দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই শতাধিক লোক টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে গেছেন জানিয়ে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মোঃ পারভেজ হোসেন বলেছেন, আহতদের মধ্যে ২০ জনকে তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তবলীগ জামাতের দুই পক্ষের নেতৃত্বের কোন্দলে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব গত মাসে স্থগিত করা হয়। দেওবন্দপন্থীদের আবেদনে নির্বাচন কমিশন শুক্রবার এক আদেশে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের আগে টঙ্গীর এজতেমা মাঠে সব ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করে একটি নির্দেশনা জারি করে। প্রশাসনের দখলে থাকবে এজতেমা মাঠ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ॥ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এবার টঙ্গীতে বিশ্ব এজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগে টঙ্গীর মাঠে কোন এজতেমা হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এখন থেকে এজতেমার মাঠ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সেখানে কাউকে অ্যালাউ করা হবে না। শনিবার বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তবলীগ জামাতের বিরোধী দুই গ্রুপের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে তিনি এই কথা বলেন। তিনি বলেন, সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, ৩০ তারিখে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগেও বলেছি আবারও বলছি নির্বাচনের আগে কোন ধরনের এজতেমা হবে না। আমরা সেটাকেই আবার রিপিট করেছি। ইলেকশন পর্যন্ত এজতেমার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সভা কিংবা জোড় এজতেমা কিংবা এজতেমার জন্য সব ধরনের কার্যকলাপ বন্ধ থাকবে, এটা দেশব্যাপী। ইলেকশনের পর এজতেমার তারিখের বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা আবারও রিপিট করছি, এজতেমার তারিখ বন্ধ হচ্ছে না। এজতেমার তারিখ শুধু শিফট হচ্ছে, ইলেকশনের পর যে কোন সময়ে এটা হবে। তিনি বলেন, এখন থেকে এজতেমার মাঠ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সেখানে কাউকে অ্যালাউ করা হবে না। শনিবারের ঘটনায় সবাই নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছেন। এ বিষয়ে ফৌজদারি মামলা হবে। ফৌজদারি মামলায় যেভাবে তদন্ত হয় সেভাবেই তদন্ত হবে। তদন্তে চিহ্নিত দোষী ব্যক্তিদের আইনানুযায়ী বিচার হবে। তিনি বলেন, টঙ্গীর মাঠ নিয়ে সংঘর্ষে একজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন। এর আগে আমরা সভা করেছিলাম, সেই সভায় কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছিল যারা যারা সেই সভায় ছিলেন সেই সভার বেশিরভাগ সদস্যই এই সভায় ছিলেন। এর আগে বিবদমান অবস্থানের মধ্যে তবলীগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এতে দিল্লী মারকাজের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভিপন্থী বাংলাদেশে তবলীগের শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিকুল ইসলাম এবং তাদের বিরোধী কওমিপন্থী মাওলানা জুবায়েরের পক্ষ থেকে তবলীগের উপদেষ্টা মাওলানা আশরাফ আলী ও আবদুল কুদ্দুসসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দুই পক্ষের বিবাদের কারণে পূর্ব ঘোষিত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব এজতেমা পেছানোর সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যেই শনিবার টঙ্গীতে পাঁচ দিনের জোড় এজতেমা নিয়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দফায় দফায় সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু ও অর্ধ শতাধিক মানুষ আহত হন। বৈঠকে পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়াসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসঊদ উপস্থিত রয়েছেন। বেলা ৩টায় বৈঠক শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তবলীগ জামাতের দুই পক্ষ আসতে দেরি করে। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সভাস্থলে আসেন সৈয়দ ওয়াসিকুল ইসলাম, মাওলানা জুবায়ের পক্ষ থেকে নেতারা বিকেল পৌনে ৫টায় আসলে বৈঠক শুরু হয়। মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা ৩০ নবেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ দিনের জোড় এজতেমা করার ঘোষণা দেন। জোবায়েরপন্থী মুসল্লিরা গত বুধবার রাত থেকে এজতেমা ময়দানের ভেতরে অবস্থান নেয়। তারা শুক্রবার সকালে এজতেমা ময়দানে ঢোকার সব গেট বন্ধ করে দেয়। বাইরের সাধারণ মুসল্লিদেরও এজতেমা মাঠে জুমার নামাজ আদায় করতে দেয়া হয়নি। শনিবার সাদপন্থী মুসল্লিরা এজতেমা মাঠে প্রবেশ করতে চাইলে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ৩০ ডিসেম্বরের আগে তবলীগ জামাতের যে কোন ধরনের অনুষ্ঠান না করার নির্দেশনা ॥ টঙ্গী ময়দানে ৩০ ডিসেম্বরের আগে তবলীগ জামাতের যে কোন ধরনের অনুষ্ঠান না করার নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসির যুগ্মসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান শুক্রবার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন। তবলীগ জামাত বাংলাদেশের একটি অংশের পক্ষ থেকে ২৪ নবেম্বর ইসিতে চিঠি দিয়ে টঙ্গীর এজতেমা মাঠে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘ভয়াবহ অবনতির শঙ্কা’ প্রকাশ করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন করা হয়। এ অবস্থায় পুলিশকে দেয়া ইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে- একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটের তারিখ ৩০ ডিসেম্বরের আগে ওই মাঠে সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।
×