ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম দিন বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১ ডিসেম্বর ২০১৮

প্রথম দিন বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শুক্রবার মিরপুর টেস্টে খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা ওপেনার সাদমান ইসলাম ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে প্রথমদিনটি নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। সাদমানের ৭৬ ও সাকিবের অপরাজিত ৫৫ রানে প্রথমদিনই ৫ উইকেট হারিয়ে ২৫৯ রান করে ফেলেছে। সঙ্গে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও দেখান ব্যাটিং ঝলক। তিনি ৩১ রান করে সাকিবের সঙ্গে অপরাজিত আছেন। আজ দ্বিতীয়দিনে সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ ব্যাট হাতে নামবেন। অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমেই ঝলক দেখালেন সাদমান ইসলাম। প্রথম ইনিংসেই ১৯৯ বলে ৬ চারে ৭৬ রান করেন। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানটিও এখন সাদমানের। নতুন রেকর্ড গড়েছেন সাদমান। ২০০১ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ৬২ রান করেছিলেন জাভেদ ওমর। যা শুক্রবার পর্যন্ত এ রেকর্ডের খাতায় শীর্ষস্থানে ছিল। ১৭ বছর পর এসে সাদমান নিজেকে এ রেকর্ডে সবচেয়ে ওপরে নিয়ে গেলেন। সাদমানের এমন ব্যাটিং ঝলকানিতে বাংলাদেশও ভাল অবস্থানেই থাকে। দলের ১৬১ রানের সময় দেবেন্দ্র বিশুর স্পিন ঘূর্ণির মারপ্যাঁচ বুঝতে না পেরে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন সাদমান। তার আউটের সঙ্গে বাংলাদেশেরও চার উইকেটের পতন ঘটে। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে বড় জুটি গড়তে পারেননি সাদমান। ১০ রানের জুটি গড়েন। অধিনায়কের সঙ্গে বেশিক্ষণ উইকেটেও থাকতে পারেননি। তবে এর আগে তিনটি জুটিই মোটাতাজা হয়। সবকটি জুটিতেই থাকেন সাদমান। সৌম্য সরকার আবারও ব্যর্থ হন। ওপেনিং জুটি যে রান পাচ্ছিল না সেই খরাও কাটতে শুরু করে দেয়। বড় জুটির আশাও জাগে। কিন্তু সৌম্য কি আর বেশিদূর যেতে পারেন। পারেননি। দল যখন ৪২ রানে যায়, বাজে এক শটে সৌম্য (১৯) আউট হয়ে যান। স্পিনার চেসের বলে আউট হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন। এরপর সাদমান-মুমিনুল মিলে এগিয়ে যেতে থাকেন। মুমিনুলতো টেস্ট স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানই। সর্বশেষ টানা দুই টেস্টেই সেঞ্চুরি করেছেন। মুমিনুলের সঙ্গে সাদমানও যেভাবে স্বতস্ফূর্তভাবে খেলতে থাকেন, তাতে মনে হয় বড় জুটির দেখাই মিলতে যাচ্ছে। কিন্তু মুমিনুলও হঠাৎ করে থেমে গেলেন। উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসেন মুমিনুল। রোচের অফ স্টাম্পের বাইরের বল পুল করতে গিয়ে মিড অনে চেইসের হাতে ধরা পড়েন মুমিনুল (২৯)। দলের ৮৭ রানের সময় মুমিনুল আউট হওয়ায় সাদমান-মুমিনুল জুটি ৪৫ রানের বেশি স্কোরবোর্ডে জমা করতে পারেনি। মোহাম্মদ মিঠুন জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমে ঝলক দেখালেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬৪ রানে বাংলাদেশের জেতা চট্টগ্রাম টেস্টে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি। মিরপুর টেস্টে সেই খোলস থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। তাতে সুন্দর কাজও হচ্ছিল। পথটাও সুন্দর তৈরিও করে ফেলেন। সাদমানকে নিয়ে ১০০ রান অতিক্রম করে স্কোরবোর্ডকে ১৫০ রানেও নিয়ে যান। দুইজন মিলে ৫০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। যে দলের স্কোরবোর্ডে ১৫১ রান যোগ হয়, জুটিতে ৬৪ রান হয়; তখনই বিশুর বলে বোল্ড হয়ে যান মিঠুন (২৯)। ১০ রান পর সাদমানও বিশুর বলেই আউট হন। তখন স্কোরবোর্ড মজবুত থাকলেও রানের গতি কমে আসে। সাকিব-মুশফিকুর রহীম মিলে দলকে বড় কিছুই দেবেন, সেই আশা থাকে। সঙ্গে এও জানা থাকে, মুশফিক কী ঠিক তা করতে পারবেন? মিরপুর টেস্ট শুরু হওয়ার দুইদিন আগে যে আঙ্গুলে চোট পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় টেস্টেতো ব্যাটিং করতে নামেন। উইকেটকিপিংয়ের ভূমিকায় যে মুশফিককে থাকতে হবে না এ জন্য লিটন কুমার দাসকেও দলে রাখা হয়। কিন্তু ব্যাটিংটাই কী ঠিকঠাক করতে পারবেন মুশফিক? সেই প্রশ্ন জাগে। মুশফিক ভুল প্রমাণ করার পথে চলতে থাকেন। সাকিবের সঙ্গে দলের স্কোরও মোটাতাজা করতে থাকেন। কিন্তু ১৯০ রানে যেতেই মুশফিক (১৪) বোল্ড হয়ে যান। তখন প্রথমদিনই বড় স্কোর গড়া সম্ভবতো? সেই প্রশ্ন জাগে। প্রথমদিনই সুবিধাজনক স্থানে না যেতে পারলে প্রথম ইনিংসে বড় স্কোর না গড়া গেলে যে টেস্ট জেতা কঠিন হয়ে পড়বে। প্রথমদিন অন্তত ২৫০ রানের উপরেতো করতেই হবে। উইকেটও হাতে থাকতে হবে। সাকিব-মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ মিলে সেই কাজটাই অসাধারণভাবে করে দিলেন। দুইজন মিলে প্রথমদিন শেষ হওয়ার আগে দলকে ২৫৯ রানে নিয়ে গেলেন। হাতে ৫ উইকেটও এখনও আছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে সাকিব হাফ সেঞ্চুরি করলেন। খুব সাবধানে খেললেন। মাহমুদুল্লাহও ঝুঁকি নিলেন না। ধৈর্য ধরে ব্যাট করতে থাকলেন। সাকিব ৫৫ রানে ও মাহমুদুল্লাহ ৩১ রানে ব্যাট হাতে থাকলেন। দুইজন মিলে উইকেট পড়া থামালেন। ৬৯ রানের বড় জুটিও গড়লেন। আজ দ্বিতীয়দিন সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ মিলে দলকে আরও দূরে নিয়ে যেতে নামবেন। চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে ৬৪ রানে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার আশায় আছে বাংলাদেশ। মিরপুর টেস্টে জিতলেই সেই সাফল্য মিলে যাবে। টস জিতে যখন বাংলাদেশ দল আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখনই ম্যাচে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। এখন টেস্ট জেতার আশা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে স্পিন দিয়ে বধ করার পালা। বাংলাদেশে ২০১২ সালের পর, ছয় বছর পর আবার টেস্ট সিরিজ খেলতে এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এসে বাংলাদেশের নতুন চেহারাই দেখল। যে দলটিকে টানা ৭ টেস্টে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সেই দলটির কাছে চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে হেরেছে। এবার মিরপুর টেস্টেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানো গেলে হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিপদে ফেলার কাজ করেও ফেলছে বাংলাদেশ। প্রথমদিনই যে রান করেছে, এর সঙ্গে দ্বিতীয়দিনে আরও ১০০ রান যোগ করতে পারলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিপদেই পড়ে যাবে। তখন স্পিন দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে টেস্টও জেতার সম্ভাবনা থাকবে। প্রথমদিনটি বাংলাদেশ নিজেদের করে নিয়েছে। আজ দ্বিতীয়দিনটিও যদি নিজেদের করা যায়, তাহলেই মিরপুর টেস্টের ফলও বাংলাদেশের দিকেই ঝুঁকে থাকবে।
×