ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে ৩৩ ও ১১ হাজার কেভি সংযোগ লাইন

বিদ্যুত সচল রেখে স্টিলের পোল তুলে নিল ঠিকাদার!

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১ ডিসেম্বর ২০১৮

 বিদ্যুত সচল রেখে স্টিলের পোল তুলে নিল  ঠিকাদার!

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার কারণে সরকারী সম্পত্তিতে অবৈধ সংযোগ স্থাপন এখনও বন্ধ হয়নি। মালিকানার অস্তিত্ব না থাকার পরও কিভাবে থ্রি ফেজ সংযোগ দেয়া হয়েছে এ সম্পত্তিতে তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। খুলশী বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের আওতায় থাকা আকবরশাহ মাজারের পূর্ব দিকে খাজনা আদায় বন্ধ থাকা সরকার ঘোষিত পরিত্যক্ত জায়গায় এ ধরনের সংযোগ দেয়ায় বিতর্কিত হয়েছে বিউবোর প্রকৌশলী। জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিত্যক্ত ঘোষিত জায়গায় চট্টগ্রাম ওয়াসার অনুমতি না নিয়েই গভীর নলকূপ স্থাপন করা হচ্ছে। ভূমিদস্যু চক্র মোটা অঙ্কের বিনিময়ে পিডিবির খুলশীর বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের দাফতরিক অনুমতি না নিয়ে পিলার তুলে নেয়ার মতো অবৈধ কর্মকা- থেকেও পিছিয়ে নেই এ ধরনের অসাধু কর্মকর্তারা। খুলশী বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী আশীষ কুমার সেন’র অপতৎপরতায় জড়িত বলে স্বীকার করেছেন ঠিকাদার জনৈক মাখন। শুক্রবার সকালে প্রায় দু’ঘণ্টা ৩৩ হাজার কেভি ও ১১ হাজার কেভি বিদ্যুতের লাইন সচল থাকা অবস্থায় বিদ্যুতের একটি অব্যবহৃত একটি সাপোর্ট স্টিল পোল কোন ধরনের দাফতরিক অনুমতি ছাড়াই তুলে নিয়েছে ঠিকাদার জনৈক মাখন। সচল লাইনে ঘটে যেতে পারত মৃত্যুসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা। বিদ্যুত বিভাগের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকালে সচল লাইন বন্ধে কোন ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়নি। এমনকি সংযোগও বন্ধ করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, এই প্রকৌশলী সরকারী পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে অবৈধভাবে বিদ্যুত সংযোগ দিয়েছেন। আকবরশাহ মাজারের পূর্বপার্শ্বে থাকা একটি পিলারের সাপোর্ট পিলার তুলে নেয়ার জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেন করেছেন অবৈধ দখলদারদের সঙ্গে। কারণ এই সাপোর্ট পিলার তুলে নিলে অবৈধ ভাড়াঘরে যাওয়ার রাস্তায় কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। ৩৩ হাজার কেভি ও ১১ হাজার কেভি বিদ্যুত লাইন চালু রেখে এ ধরনের পিলার মাটির ওপর থেকে কেটে নেয়ায় ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছিল বিভিন্ন স্থাপনা ও পথচারী এমনকি ঠিকাদারের লোকজনের। প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে, আকবরশাহ মাজারের পূর্বপাশে থাকা একটি পোলের সাপোর্ট পিলার হিসেবে অব্যবহৃত একটি স্টিল পোল ব্যবহার করছিল পিডিবি। শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে ঠিকাদার মাখনের ৪ সদস্যের একটি দল মাত্র দুটি রসি দিয়ে পিলারটিকে বেঁধে সজোরে ধাক্কা দিয়ে উত্তর দিকে কাত করার চেষ্টা করে। কিন্তু এসময় পিলারটি পশ্চিম দিকে থাকা দোতলা ভবনের ওপর পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এক্ষেত্রে ভবন মালিক বাধা দিলে তাতে ঠিকাদারের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে পিডিবির প্রকৌশলী আশীষ কুমার সেনের কথা জানায়। কিন্তু ভবন মালিক পিলার উচ্ছেদে পিডিবির লিখিত অনুমতি রয়েছে কিনা দেখতে চাওয়া হলে দেখাতে পারেনি ঠিকাদার মাখন ও সঙ্গীরা। এ বিষয়ে ঠিকাদার জনৈক মাখন ঘটনাস্থলে জনকণ্ঠ প্রতিবেদককে জানান, এই পিলারটি উচ্ছেদ করতে প্রকৌশলী আশীষ কুমার বলেছেন। লিখিত অনুমতি রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মাখন বলেন, আমার কাছে কোন লিখিত নেই। আপনার প্রয়োজন হলে আমার মোবাইল থেকে কথা বলতে পারেন। এ ব্যাপারে পিডিবি’র খুলশী বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী আশীষ কুমার জনকণ্ঠকে দুবার দুধরনের কথা বলেন। সকাল ৯টায় বলেছেন, এ ধরনের পিলার উচ্ছেদের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এ ধরনের পিলার তুলে নিতে কোন অনুমতিও দেয়া হয়নি। কিন্তু সকাল ৯টা ৪৮ মিনিটে বলেছেন, আমার অনুমতি নিয়ে ঠিকাদার মাখন এই কাজ করছে। এতে কারও কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু দুপুর ১২টা ১৭ মিনিটে তিনি নিজেই মুঠোফোনে কল দিয়ে প্রতিবেদককে বলেছেন, ঠিকাদার মাখন অনেক দক্ষ। সন্দ্বীপে বিদ্যুত সংযোগের কাজও করেছে সে। পিলারটি তোলার অনুমতি না থাকলেও সেটি স্টোরে জমা দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে এই প্রকৌশলীকে এ ধরনের কোন প্রশ্ন না করার পরও তিনি কেন পিলারটি স্টোরে জমা দেয়ার কথা বলেছেন প্রতিবেদককে।
×