ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নীলফামারীতে হিমেল বাতাসে ভোটের উত্তাপ

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১ ডিসেম্বর ২০১৮

 নীলফামারীতে হিমেল বাতাসে ভোটের উত্তাপ

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী ॥ শীত এখনও তেমন জাঁকিয়ে না বসলেও সকাল-সন্ধ্যায় হিম হিম ভাব। এমন আবহাওয়ার মানেই হচ্ছে, ধোঁয়া ওঠা গরম পিঠা খাওয়ার সময়। জেলাজুড়ে সকালের কুয়াশা কিংবা সন্ধ্যার হিমেল বাতাসে কদর বেড়েছে ভাপা পিঠার। হাটবাজার বা পথের ধারে গরম গরম ভাপা পিঠার সঙ্গে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের উত্তাপ চলছে নীলফামারীর চারটি আসনে। চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা। মুখে গরম ভাপার সাধ নিয়ে কেমন হবে ভোটের পরিবেশ? ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, মহাজোট ও বিএনপির পক্ষে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন? কারা নির্বাচন অফিসে গিয়ে মনোনয়ন কিনেছেন? এমন অনেক আলোচনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ ভোটাররা। তৃণমূলেও চলছে প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে মনোনয়ন প্রতিযোগিতা নিয়ে নানা আলোচনা-পর্যালোচনা। কে হচ্ছেন নীলফামারীর চারটি আসনের প্রার্থী, কার জনসমর্থন কেমন? প্রার্থীদের মধ্যেও চলছে শেষ মুহূর্তের প্রতিযোগিতা। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা এখনও না হওয়ায় এলাকায় সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনী উত্তাপ বাড়ছে গরমভাপা পিঠের মতোই। সবার চাওয়া, পছন্দের প্রার্থীই যেন নৌকার মনোনয়ন পান। চেষ্টা করছেন নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে জোরালো অবস্থান নিতে। শুধু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই নয়, ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলীয় জোটের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোও। পাশাপাশি প্রকাশ্যে চলে এসেছে নির্বাচনের প্রস্তুতি বিএনপি ও তার শরিক দলগুলোর। ভোটের প্রস্তুতি স¤পর্কে নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নীলফামারী জেলার প্রতিটি ইউনিটে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। জনগণের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা দিয়েছে। নীলফামারী ১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের নৌকার মাঝি হতে চান যুব মহিলা লীগের সহশিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পাঠাগার স¤পাদক সরকার ফারহানা আক্তার সুমি। তিনি নীলফামারী-১ আসনে দলের প্রার্থিতার বিষয়ে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন এই আসনে যদি খালেদা জিয়াও এসে আমার সঙ্গে নির্বাচন করেন তাহলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। এই আসনে বর্তমান এমপি আফতাব উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ খোদ দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষজনের। তারা চায় নৌকার নতুন মুখ। আফতাব উদ্দিন সরকার তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন পুনরায় নৌকার মাঝি হতে আসনটি শেখ হাসিনাকে উপহার দেব। এই আসনে মহাজোটের প্রার্থী তালিকায় নাম উঠে এসেছে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এই আসনের সাবেক এমপি জাফর ইকবাল সিদ্দিক ও বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানীর। আসনটি ধরে রাখতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছে আমরা নৌকার মাঝি চাই। আর নৌকার মাঝি হিসেবে ফারহানা আক্তার সুমির বিকল্প নেই। তার জন্য এলাকার সাধারণ মানুষজন মসজিদে মসজিদে দোয়া ও রোজা রাখছে। একই অবস্থা জাতীয় পার্টির জাফর ইকবালের ক্ষেত্রেও তার সমর্থকরাও তার অপেক্ষা করছে। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে খালেদা জিয়ার দুলাভাই অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের নাম প্রচার পেয়েছে। জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে নাম এসেছে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুস সাত্তার। অপরদিকে ২০ দলের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে। ডিমলা উপজেলার ন্যাপের আহ্বায়ক শাহ আজিজ বলেন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে আমাদের দলের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানী প্রার্থী হলে আমরা আসনটি শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে সক্ষম হব।এই আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাইফুল ইসলাম প্রার্থী হচ্ছে বলে দলটি জানায়। নীলফামারী-২ (সদর) আসনে নৌকার মাঝি হচ্ছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের নাম। তিনি এই আসনে একাধারে তিনবারের এমপি। তার কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছে এলাকার সাধারণ ভোটারসহ দলের নেতাকর্মীরা। এই আসনে জাতীয় পার্টির কোন প্রার্থী হচ্ছে না। তবে নূরের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে বিএনপির পক্ষে দলটির জেলা সাধারণ সম্পাদক সামছুজ্জামান ও জামায়াতের নায়েবে আমির মনিরুজ্জামান মন্টু মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে। বিএনপির সামছুজ্জামান বলেন তিনি গ্রিন সিগনাল পেয়ে শনিবার তিনি জেলা নির্বাচন অফিস হতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এই আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর জহুরুল ইসলাম প্রার্থী হচ্ছে বলে দলটি জানায়। নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনে বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। আসনটি এবার মহাজোটের প্রার্থী হচ্ছে। এই আসনে জাপার পক্ষে প্রার্থীর তালিকায় রয়েছে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অবঃ) রানা মোঃ সোহেল ও সাবেক এমপি কাজী ফারুক কাদের। একাধারে দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান জামায়াত সমর্থক সৈয়দ আলী সম্প্রতি বিএনপিতে যোগদান করে বিএনপি হতে মনোনয়ন চেয়ে লাইম লাইটে এসেছেন। কিন্তু জামায়াত এই আসনে তাদের প্রার্থী হিসেবে অধ্যাপক আজিজুল ইসলামের নাম ঘোষণা করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে। এই আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমজাদ হোসেন প্রার্থী হচ্ছে বলে দলটি জানায়। নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরীগঞ্জ) আসনটির বর্তমান এমপি মহাজোটের জাতীয়পাটির শওকত চৌধুরী। আসনটিতে এবার নৌকার মাঝি হতে ১৭ জন দলীয় মনোনয়ন চেয়েছে। এদের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন কে পাচ্ছেন তা পরিষ্কার নয়। তবে আসনটি এবারও মহাজোটের জাতীয় পার্টির ঘরে থাকবে বলে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ পারভেজ নিশ্চিত করেছে। এই আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আলহাজ সহিদুল ইসলাম বিল্লাল প্রার্থী হচ্ছে বলে দলটি জানায়। এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ৬ জন হলেও তিনজনের নাম বেশি উচ্চারিত হয়েছে। এরা হলো কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, কেন্দ্রীয় নেতা বিলকিছ ইসলাম অথবা সৈয়দপুর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন সরকার। হিম হিম শীতের ভাবে গরম গরম ভাপা পিঠের সঙ্গে ভোটের সাত সতেরো ভাবনায় উত্তাপে সরগম হয়ে উঠেছে এ জেলার চারটি আসন।
×