ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মনোনয়নের ক্ষেত্রে রাজনীতিকরাই প্রাধান্য পেয়েছেন

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১ ডিসেম্বর ২০১৮

 মনোনয়নের ক্ষেত্রে রাজনীতিকরাই প্রাধান্য পেয়েছেন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ক্ষমতার দাপট আমরা কোন দিন দেখাইনি। আমাদের ভুলত্রুটি হতে পারে, এত বড় দল। আমরা ভুল হলে সংশোধন করেনি। ভুল হলে সংশোধনের সৎ সাহস শেখ হাসিনার আছে। শুক্রবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ছেড়ে যারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ভিড়েছেন, তাদের ভবিষ্যত পরিণতি শুভ হবে না। তারা তো জেনে-শুনে বিষ পান করেছেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। এটা তাদের দীর্ঘদিন তাড়িত করবে। তাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ থাকবে।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এবার দলের মনোনয়নের ক্ষেত্রে রাজনীতিকদের বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। গতবারের চেয়ে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে। সাবেক ছাত্রনেতা যারা তৃণমূল থেকে এসেছেন, তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মনোনয়ন দিয়েছি। মনোনয়ন পাওয়াদের মধ্যে ৪০ জন রয়েছেন যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। সর্বমোট আসন সংখ্যার মধ্যে ১৬ থেকে ১৭ জন ব্যবসায়ী মনোনয়ন পেয়েছেন। আর নতুন মুখ ৫০ এর কোটা ছুঁতে পারে। ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনীতি এখন মূল্যবোধ বিবর্জিত হয়ে গেছে। বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের সন্তান ও জঙ্গী অর্থায়নের সঙ্গে জড়িতদেরও মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি বলেন, জঙ্গী অর্থায়ন আর জঙ্গী তৎপরতার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কারণ জঙ্গীদের সাহায্য করা মানে জঙ্গীবাদকে সমর্থন করা। এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনের আগে নিশ্চিত করে বলা যাবে না, কে বিদ্রোহী প্রার্থী। তবে কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী হলে তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে মহাজোটে ক্ষোভ রয়েছে কিনা একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, কিছু ক্ষোভ তো থাকতেই পারে। এত বড় মহাজোট। এখানে তো ক্ষোভ-বিক্ষোভ কিছু হবেই। সেই ক্ষোভ প্রশমিতও আমরা করব। কিন্তু প্রত্যাহার পর্যন্ত যাদের ধৈর্য থাকবে না, তাদের জন্য ব্যবস্থা আছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা এতদিন ক্ষমতায় আছি, আমরা নির্ভূল, অভ্রান্ত দাবি করি না। আমাদের ভুল-ত্রুটি আছে। তারপরও এটা বলতে পারি, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। বিএনপির চেয়ে আমাদের সরকার বেটার সরকার। সেতুমন্ত্রী বলেন, আমাদের রাজনীতি বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের রাজনীতি। আমরা মানুষের মাঝে আছি। তাই ক্ষমতায় না থাকলেও পালিয়ে যাব না। এ দেশেই জন্ম, এ দেশেই আমরা মরব। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তখন তাঁকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কেউ জানত না। বঙ্গবন্ধু জেলখানা থেকে বাইরে পা দিয়ে কুয়াশা ভেজা সকালে একখ- মাটি কপালে ছুঁয়ে বলেছিলেন, এই দেশেতেই জন্ম আমার যেন এই দেশেতেই মরি। আমরাও এই মাটির সঙ্গেই আছি। বঙ্গবন্ধুও ছিলেন, তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাও আছেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা পর্যন্ত অপরাধ করে পার পাননি। আইনের আওতায় আনা হয়েছে। অনেকে কারাগারে আছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা উন্নয়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি উন্নয়ন উপহার দিয়েছি।’ তিনি বলেন, দুর্নীতি এখন সারা দুনিয়াতেই রয়েছে। এখন এটা ওয়ে অব লাইফ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা দুর্নীতিকে ছাড় দেইনি। এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে। তারা জামায়াতকে বেশি বেশি মনোনয়ন দেবে সেটাই স্বাভাবিক। এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। সরকারের বিভিন্ন অর্জন তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকলেও কোন মেগা প্রজেক্ট উপহার দিতে পারেনি; বরং অদূরদর্শীতায় দেশকে পিছিয়ে দিয়েছিল। ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনের মনোনয়ন পর্ব শেষে আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবে আওয়ামী লীগ। সম্ভবত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র কিংবা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ইশতেহার প্রকাশ হতে পারে। শুধু নির্বাচনকে সামনে রেখে নয়, আগামী প্রজন্মকে সামনে রেখে দেশের উন্নয়ন করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী ইশতেহারেও তা প্রতিফলিত হবে। নির্বাচনী ইশতেহারে ‘দিন বদলের অভিযান, অদম্য বাংলাদেশ’-শিরোনামে গ্রামীণ উন্নয়নগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন ও আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। হারার ভয়ে বিএনপির নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র ॥ এদিকে, বিকেলে ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সঙ্গে নির্বাচনী সংশ্লিষ্ট ১৫টি উপ-কমিটির মতবিনিময় শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়ে বিএনপি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। সরকার নয়, বিএনপির হাত ধরেই নির্বাচনী পরিবেশ নষ্টের সূচনা হয়েছে। অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের সিনিয়র লিডারের নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। অথচ বিএনপি এটা নিয়ে মিথ্যাচার করছে। আসলে কী তারা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়ে, নির্বাচন বানচালের বিভিন্নমুখী অজুহাত খুঁজছে? ‘নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করে সরকার সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে’ মর্মে বিএনপির অভিযোগের জবাবে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, পুলিশের ওপর হামলায় যারা জড়িত তারা কী নিরপরাধ? যাদের আটক করা হয়েছে পল্টনের ঘটনায়, তারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করলে কোন রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে-এটা কেন ভাবছেন? তাহলে কি তাদের দলে বেশিরভাগ নেতাকর্মীই সন্ত্রাসী? ক্রিমিনাল অফেন্ডারকে গ্রেফতার করতেই হবে। আমরা কী বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে তুলব? তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিএনপিকে অভিযোগ করার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশনের আইন, কোড অব কন্ডাক্ট স্পেসিফিক্যালি কোথায় ভঙ্গ করা হয়েছে তাদেরকে এগুলো তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বলতে হবে। আমি বিএনপিকে বলব তারা তথ্য প্রমাণসহ বলুক। বিএনপি প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে তিনি বলেন, এত বড় একটা নির্বাচন, ২৮ তারিখ শেষ দিনে নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন অনেকেই। কোথাও কী একটা ইনসিডেন্স ঘটেছে? আমাদের এখানে সুন্দর একটি নির্বাচনী পরিবেশ রয়েছে। যার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখানে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠানোর কোন প্রয়োজনীয়তা দেখছে না। শুধু বিএনপিই নির্বাচনী পরিবেশ দেখছে না। তিনি বলেন, আমরা চাই না বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে যাক। গতবারের মতো বিএনপি ভুয়া অভিযোগ দিয়ে নির্বাচন বয়কট করুক এটা আমরা চাই না। বিএনপি একটি বড় দল। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক আমরা এটাই চাই। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম, দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদসহ বিভিন্ন উপ-কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
×