ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গণভবনে বসে নির্বাচনী প্রচার চালানো যাবে না ॥ ইসি

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১ ডিসেম্বর ২০১৮

 গণভবনে বসে নির্বাচনী প্রচার চালানো যাবে না ॥ ইসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের বৈঠক কোন আচরণবিধি লঙ্ঘন নয়। তবে গণভবনে বসে নির্বাচনী প্রচার চালানো যাবে না। নির্বাচনী প্রচার চালালে সেটা আচরণবিধির লঙ্ঘন হবে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি তার বাসভবনে এই বৈঠক করেছেন। তিনি তো রাস্তায় দাঁড়িয়ে কারও সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন না। তাকে বাসভবনেই বৈঠক করতে হবে। এটাতে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়নি বলেও উল্লেখ করেন। শুক্রবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে এবারের নির্বাচনের বিভিন্ন দিক নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন। বলেন, একাদশ জতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় রাজনৈতিক দল, প্রশাসনসহ সকলকে ম্যানেজ করাটাই মূল চ্যালেঞ্জ। এটা এমন একটা বিষয় যেখানে কোন একটা বিষয় বাদ দিলেই তা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। নির্বাচনের বিষয়টাও একটা ইঞ্জিনের মতো। সেখানে একটা স্ক্রুও গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি সাবেক দেড় শ’ সেনাকর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করে এবারের নির্বাচনে তাদের সমর্থনের কথা ঘোষণা করেন। বিএনপির পক্ষ থেকে এটাকে আচরণবিধি লঙ্ঘন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আচরণবিধি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারী সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। সরকারের সব ধরনের সুবিধা নিয়ে রাষ্ট্রভবন গণভবনে বসে এ ধরনের কর্মকান্ডে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকে বিতর্কিত করে তুলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দেড় শ’ সেনা কর্মকর্তা যে নির্বাচনী ওয়াদা করেছে তা কি আচরণবিধি লঙ্ঘন নয় প্রশ্ন রাখেন। এ বিষযে রফিকুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে শেখ হাসিনা নির্বাচন করলেও লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি এক্ষেত্রে তার জন্য প্রযোজ্য হবে না। উনার বাসভবন ছেড়ে তো উনি যেতে পারবেন না। কারও সঙ্গে দেখা করতে গেলে কোথায় দেখা করবেন? রাস্তার মধ্যে এসে? উনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। দেখা করে তার নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন। এখানে আমি ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু আচরণ বিধিমালা বুঝি, আমার কাছে মনে হচ্ছে না যে, এটায় কোন ধরনের আচরণবিধি লঙ্ঘন হতে পারে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভাই, বাসভবন ওটা। গুলাইয়েন না কিন্তু। কেউ আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়, আমি কি রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখা করব? তারা আসছেন আমার বাসায়, আমাকে বাসাতেই দেখা করতে হবে। তবে গণভবনে প্রচার চালালে আচরণবিধি ভঙ্গ হবে উল্লেখ করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই কমিশনার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন দলের অভিযোগ, লেভের প্লেয়িং ফিল্ড, মাঠ প্রশাসনের বদলি, আচরণবিধি প্রতিপালন, নির্বাচনের সেনা মোতায়েনসহ বিভিন্ন বিষয নিয়ে কথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন নির্বাচন পরিচালনায় কমিশনের কাছে বিভিন্ন দল অভিযোগ, দাবি-দাওয়া নিয়ে আসেন। কিন্তু সব দাবি-দাওয়া পূরণ করা কমিশনের কাজ নয়। তদন্ত করে সে দাবি-দাওয়া যৌক্তিক বলে কমিশনের কছে প্রতিপালন হবে সেটাই কমিশন বিবেচনা করবে। বিএনপির একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা না নেয়া অভিযোগের বিষয়ে বলেন, এ বিষয়ে কোন কর্মকর্তার প্রতি সুনির্দিষ্ট পক্ষপাতিত্যে কোন অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার গাফলতির কারণে যারা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি, তারা নির্বাচন কমিশনের আবেদন করে প্রতীকার চাইতে পারেন। ভোটে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রস্তুতির বিষয়ে বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। মাঠ প্রশাসনে বিভিন্ন কর্মকর্তার বদলির বিষয়ে বলেন, সব ওসিকে, ডিসিকে বদলাতে বিশাল বাজেটের দরকার হবে। এতে সরকারের কার্যক্রম বিঘিœত হবে। সব ওলট-পালট করে কি তাদের মধ্যে পেশাদারিত্ব আনা যাবে। ইসি কিন্তু সরকার নই। আমরা নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকালীন হোক বা স্বাভাবিক সময়ে হোক একটা সরকার কিন্তু আছে। সেই সরকারের হাতেই কিন্তু নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত। উনাদের দায়িত্ব তো কমিশনের পালন করার কথা না। তারপরও নির্বাচনকালীন সময়ে কেউ নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা অবস্থায় গাফিলতি করলে তার বিরুদ্ধে কমিশন ব্যবস্থা নেবে। এ সময় তিনি আরও বলেন, নির্বাচনী প্রশাসন রাজনৈতিক দলসহ সকলকে কনভিন্স ও ম্যানেজ করাই এই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মূল চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন এমন একটা বিষয এখানে কোন একটা বিষয় বাদ দিলেই তা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। নির্বাচনে যা আছে প্রত্যেকটা জিনিসই গুরুত্বপূর্ণ। সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নির্বাচনী প্রশাসন। নির্বাচনী প্রশাসনের সঙ্গে বিশাল জনগোষ্ঠী জড়িত। পুরো এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে এক জায়গায় এনে, একই সুরে, একইভাবে কাজ করানো, এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। হিসেব করতে হচ্ছে রাজনৈতিক দল যে লোকটাকে পোলিং এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেবে, তার নিয়োগপত্রটাও কিন্তু আমাদের দেখতে হবে। এখানে কোন ব্যক্তি কমিশনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পেশাদারিত্ব। তিনি পেশাদারিত্ব নিয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। ওই পেশাদারিত্বে জায়গাটাকে ঠিক করতে চাইছি। সবকিছুকে ওলট-পালট করে দিয়ে এই পেশাদারিত্ব ঠিক করা যাবে না। কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যদি কেউ প্রভাব বিস্তার করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। তিনি সেক্রেটারিও যদি হন, আমরা ব্যবস্থা নেব। আইজিপি হলেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে বলেন, এক্ষেত্রে একমাত্র সুযোগ হচ্ছে পোস্টাল ব্যালট। যেদিন প্রার্থী চূড়ান্ত হবে, চেষ্টা করব যত দ্রুত সম্ভব পোস্টাল ব্যালট ছাপিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে দিতে। যিনি ভোট দিতে চাইবেন, তিনি রিটার্নিং অফিসারের কাছে আবেদন করবেন। তাৎক্ষণিকভাবে ঠিকানাসহ খাম পাঠিয়ে দিবেন। পোস্টাল ব্যালট পাঠানোর পরে ভোটার মার্কাটা চিহ্নিত করে পাঠাবেন। তিনি বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে কমিশন সন্তুষ্ট। যে কোন দেশের গণতন্ত্রের জন্য এটা সুখবর। নির্বাচনের প্রতি মানুষের আস্থা, নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ। আমি এটাকে স্বাগত জানাই এবং ভবিষ্যতে এর মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মাধ্যম আরও বেশি বিকশিত হবে বলে উল্লেখ করেন। কামরাঙ্গিরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার প্রত্যাহারে ইসিতে বিএনপি প্রার্থীর চিঠি ॥ এদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ এনে কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন ফকিরের প্রত্যাহার চেয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে বিএনপি প্রার্থী ব্যারিস্টার ইরফান আমান অমি। শুক্রবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বরাবর এ সংক্রান্ত চিঠি নির্বাচন ভবনে জমা দিয়েছেন তিনি। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি শাহীন ফকির সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার করছেন। এছাড়া তিনি প্রায় তিন বছর ধরে কামরাঙ্গীরচর থানায় অবস্থান করছেন। ওসি শাহীনের পক্ষপাতিত্বের প্রমাণসহ সিডিও সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে চিঠিতে। ভোট কক্ষে ভিডিও ধারণ অপরাধ ॥ ভোটের দিন ভোট কক্ষের ভেতর ভিডিও বা স্থিরচিত্র ধারণ করা অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। শুক্রবার নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইসির অতিরিক্ত সচিব মোঃ কামরুল হাসান অনুষ্ঠানে নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ভোট কক্ষে একজন ভোটার প্রবেশ করার পর প্রথমে তার পরিচয় নিশ্চিত হতে হবে। ভোটারের নাম সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোটার তালিকায় থাকলে ব্যালট পেপারের মুড়িতে তার আঙ্গুলের ছাপ রেখে ভোটারকে ব্যালট পেপার সরবরাহ করতে হবে। এরপর ভোটার গোপন কক্ষে গিয়ে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। গোপন কক্ষে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারাসহ অন্য কারোরই প্রবেশ অধিকার থাকবে না। কেবল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভোটারকে সহায়তার জন্য ভোটার তার পছন্দের একজনকে সঙ্গে রাখতে পারবেন। কেউ জাল ভোট দিলে বা দেয়ার চেষ্টা করলে প্রিসাইডিং বা সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের প্রথম কাজ হবে তাকে নিবৃত্ত করা। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে জাল ভোট প্রদানকারী ব্যক্তিকে দায়িত্বরত পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত ডেকে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ভোট কেন্দ্রে নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা এক স্থানে দীর্ঘক্ষণ থাকতে পারবেন না। পর্যবেক্ষকরা ভোট কেন্দ্রের গোপন কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। প্রিসাইডিং অফিসাররা পর্যবেক্ষকদের সাক্ষাতকার দিতে পারবেন না উল্লেখ করেন।
×