ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নির্বাচন সামনে রেখে অভিযোগের শেষ নেই বিএনপির

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১ ডিসেম্বর ২০১৮

 নির্বাচন সামনে রেখে অভিযোগের  শেষ নেই বিএনপির

শরীফুল ইসলাম ॥ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অভিযোগের শেষ নেই বিএনপির। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে অভিযোগের পর অভিযোগ। নির্বাচন কমিশনে গিয়ে করছে অভিযোগ, সংবাদ সম্মেলনে করছে অভিযোগ এমনকি বিবৃতি দিয়েও অভিযোগ করা হচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করায় সব দিক থেকে অধিক সুবিধা পাচ্ছে। আর বিএনপি বিরোধী দলে থাকায় এবং দলের অনেক নেতাকর্মীর নামে মামলা থাকায় বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া বিএনপি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে ৭ দফা দাবি দিয়েছিল তার একটিও মানা হয়নি। তাই শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হয় এ নিয়ে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যেই আশঙ্কা রয়েছে। উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই বিএনপি বিভিন্নভাবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে থাকে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে বসেও বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন তাদের দলের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক মামলা করে হয়রানি করা হচ্ছে। তখন প্রধানমন্ত্রী তাদের কাছে রাজনৈতিক মামলার তালিকা চান। পরে দ্বিতীয় দফায় সংলাপে গিয়ে এক হাজার মামলার একটি তালিকা জমা দেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। অবশ্য পরে আরও এক হাজার মামলার তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছে দেন। অনুরূপ তালিকা তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনেও জমা দেয় বিএনপি। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির দফায় দফায় অভিযোগ একটি রাজনৈতিক কৌশল। এ কৌশলের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে চাপে রেখে নির্বাচনের পরিবেশ নিজেদের অনুকূলে রাখতে চায় দলটি। তবে বিএনপি নেতারা মুখে বলার সময় যেভাবে অভিযোগের কথা বলে বাস্তবে নির্বাচন কমিশনে সুনির্দিষ্ট করে এত অভিযোগের কথা তুলে ধরতে পারছেন না। এর ফলে বিএনপির অভিযোগের বিষয়টি এখন ঠুনকো হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনের মতো শুক্রবারও পৃথক ৩টি অবস্থান থেকে বিএনপির সিনিয়র নেতারা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই বলে অভিযোগ করেছেন। বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে এখনও বিএনপি নেতাদের নামে গায়েবি মামলা ও গ্রেফতার অব্যাহত রাখা হয়েছে। এর আগে দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এখনও নির্বাচন কমিশন নয়, সরকারের কথায় চলছে পুলিশ। আর নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন সরকার একতরফা ও ভোটারশূন্য নির্বাচনের পথেই হাঁটছে। সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। কিন্তু এখনও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা হয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার আশ্বাস দেয়া হলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। গণভবনে অনুষ্ঠিত সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার করা হবে না বললেও তিনি তার সেই অঙ্গীকার রক্ষা করেননি। তফসিলের পরও সারাদেশে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এমনকি বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। সরকারকে উদ্দেশ করে ফখরুল বলেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দেয়া বন্ধ করুন, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার বন্ধ করুন, অন্যথায় পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য সরকারকে সব দায় দায়িত্ব বহন করতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। ইসি সরকারের নীলনক্সা বাস্তবায়ন করছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে কোন পদক্ষেপই নিচ্ছে না কমিশন। দুপুরে নাগরিক আন্দোলন নামক একটি সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ নির্বাচন কমিশনের কথায় চলার কথা থাকলেও এখনও সরকারের কথায়ই চলছে। তবে এবারের নির্বাচনে জনগণ ভোট কেন্দ্রে আসলে এই সরকারের অবশ্যই পতন হবে। মওদুদ বলেন, এবারের নির্বাচন ঐক্যফ্রন্টের জন্য, বিএনপির জন্য এবং সারাদেশের মানুষের জন্য একটি বিরাট ও শেষ সুযোগ। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য আর কোন দিন এ ধরনের সুযোগ আসবে কি-না আমি বলতে পারি না। তবে দলীয় সরকারে থেকে ইসির জন্য নিরপেক্ষ কাজ করা সম্ভব নয়। তাই এই ইসি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। মওদুদ বলেন, প্রতিটি জেলায় রিটার্নিং অফিসার একজন জেলা প্রশাসক। নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ঠিকই, কিন্তু তিনি তো নির্বাচন কমিশনের কোন কর্মকর্তা না। তিনি সরকারের কর্মকর্তা। তার সাধ্য নেই রিটার্নিং অফিসার হিসেবে সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া। কারণ তিনি জানেন, তার প্রমোশন, পোস্টিং সব নির্ভর করছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হাতে। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ইসি মুখে যত কথাই বলছেন তার একটা কথাও বিশ্বাস করবেন না। কারণ, তাদের মুখে এক কথা, মনের মধ্যে অন্য কিছু। দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে রিজভী অভিযোগ করেন গণভবনকে ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বিতর্কিত করে তুলেছেন। এতে প্রতীয়মান হয় সরকার একতরফা ও ভোটারশূন্য নির্বাচনের পথেই হাঁটছে। তিনি বলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে সশস্ত্রবাহিনীর দেড় শতাধিক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাঠে নামছেন। যাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী কর্মকর্তা। রিজভী বলেন, আচরণ বিধির ১৪ ধারায় বলা আছে, সরকারের সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তার সরকারী কর্মসূচীর সঙ্গে নির্বাচনী কর্মসূচী বা কর্মকান্ড যোগ করতে পারবেন না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দেড়শ’ সেনা কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনী কাজ করার যে অঙ্গীকার করেছেন তা কি আচরণবিধি ভঙ্গ নয়? কেননা সেদিনের অনুষ্ঠানটি সরকারী কোন কর্মসূচী ছিল না।
×