ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুর টেস্ট

সাদমান-সাকিবের নৈপুণ্যে উজ্জ্বল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১ ডিসেম্বর ২০১৮

 সাদমান-সাকিবের নৈপুণ্যে উজ্জ্বল বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ কথায় আছে, ‘টস জেতা মানে ম্যাচ জেতা’। টেস্টে এই কথাটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে স্পিন উইকেটে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেতো এই কথা বাণীর মতোই হতে চলেছে। মিরপুরে টেস্টে যে দল টস জিতে, সেই দলই যে ম্যাচে জিতে। ২০১৫ সাল থেকে এমনই হয়ে গেছে। তাহলেতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শুক্রবার শুরু হওয়া মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশেরই জয় হওয়ার কথা। বাংলাদেশ যে টসে জিতেছে। আগে ব্যাটিং করে অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা ওপেনার সাদমান ইসলাম (৭৬) ও সাকিব আল হাসানের (৫৫*) জোড়া হাফসেঞ্চুরিতে আবার উজ্জ্বল একটিদিনও কাটিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট হারিয়ে প্রথমদিনই ২৫৯ রান স্কোরবোর্ডে জমা করে ফেলেছে। আজ মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয়দিন। এই দিনটিতে প্রথমদিন ৫৫ রানে অপরাজিত থাকা সাকিবের সঙ্গে ৩১ রানে অপরাজিত থাকা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ব্যাট হাতে নামবেন। হাতে ৫ উইকেট আছে। যেভাবে সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ মিলে ধৈর্য ধরে এগিয়ে গিয়ে ৬৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছেন, তাতে আজও এই দুইজনের কাছ থেকে বড় কিছুই মেলার সম্ভাবনা থাকছে। সাকিব, মাহমুদুল্লাহর পর ব্যাটিংয়ে লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ রয়েছেন। নাঈম হাসান ও তাইজুল ইসলামও ব্যাটিংয়ে পারদর্শী। তাতে করে বাংলাদেশ যদি আর ১০০ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করে নিতে পারে তাহলে সাড়ে তিন শ’ রান জমা হয়ে যাবে। এই রান নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অনায়াসেই বিপদে ফেলা সম্ভব। চট্টগ্রাম টেস্টে যেভাবে স্পিন দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ঘায়েল করা গেছে, মিরপুর টেস্টেও তা সম্ভব। বাংলাদেশতো স্পিনার মজবুত করেই নেমেছে। এই প্রথমবারের মতো দলে কোন বিশেষজ্ঞ পেসার নেই। চার স্পেশালিস্ট স্পিনার নিয়ে খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটে যে কোন মুহূর্তে বিধ্বংসী স্পিন বল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে শুরুর দিকেই বোলিংয়ে স্পিনার নিয়ে এসেছে, তাতেও স্পিনবান্ধব উইকেটের আঁচ করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের যে ৫ উইকেটের পতন হয়েছে, তিনটিই ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্পিনাররা নিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্পিনাররাই যদি বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ভোগাতে পারেন, তাহলে অধিনায়ক সাকিব, তাইজুল, নাঈম, মিরাজদের মতো স্পিনাররা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের সামনে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন তা প্রথমদিনই বোঝা গেছে। সৌম্য সরকার (১৯), মুমিনুল হক (২৯), মোহাম্মদ মিঠুন (২৯) ব্যাটিংয়ে খুব আলো ছড়াতে পারেননি। দলের ১৫১ রানের মধ্যে তিনজন আউট হন। তবে অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসেই আলো ছড়ানো ওপেনার সাদমানের সঙ্গে তিনজনই ছোট্ট ছোট্ট মজবুত জুটি গড়েন। ওপেনিংয়ে সাদমান-সৌম্য ৪২ রানের, দ্বিতীয় উইকেটে সাদমান-মুমিনুল ৪৫ রানের, তৃতীয় উইকেটে সাদমান-মিঠুন ৬৪ রানের জুটি গড়েন। চতুর্থ উইকেটে গিয়ে আর নিজেকে সামলে নিতে পারেননি সাদমান। অধিনায়ক সাকিব উইকেটে আসার পর ১০ রানের বেশি জুটি গড়তে পারেননি। দলের ১৬১ রানের সময় ১৯৯ বল খেলে ৬ চারে ৭৬ রান করে আউট হন সাদমান। ততক্ষণে অবশ্য অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ স্কোর গড়ার রেকর্ড হয়ে যায় সাদমানের। সাদমান আউটের পর মুশফিকুর রহীমকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন সাকিব। কিন্তু খুব বেশিদূর যেতে পারেননি। দলের ১৯০ রানের সময় তামিম ইকবালের পর দেশের হয়ে চার হাজার রান করা মুশফিক (১৪) সাজঘরে ফেরেন। তখন একটু আতঙ্কও যেন ঘিরে ধরে। যদি কোনভাবে এখন ব্যাটিং ধস নামে। প্রথম সেশনে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেশনেও তাই। তৃতীয় সেশনে শুরুতেই আরেকটি উইকেট হারায়। দ্রুত যদি সাকিব অথবা মাহমুদুল্লাহও আউট হন তাহলে ধস নামতে পারে। সেই ভয় ছিল। কিন্তু সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ মিলে এতটাই ধৈর্য ধরে খেললেন। উইকেট আঁকড়ে খেললেন। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকেই দিন শেষ করলেন। ১১৩ বল খেলে মাত্র ১টি চার মেরে ৫৫ রান করেছেন সাকিব। আর ৫৯ বলে মাত্র ১টি চার হাঁকিয়ে ৩১ রান করেছেন মাহমুদুল্লাহ। আজও যদি এই দুইজন এমন ব্যাটিং করতে পারেন সঙ্গে লিটন, মিরাজ, নাঈম ও তাইজুল স্কোরবোর্ড মজবুত করে নিতে পারেন, তাহলে টেস্টের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরিই বাংলাদেশের হাতে চলে আসবে। আজই সব খোলাসা হয়ে যাবে। টেস্ট কোন দলের দিকে মোড় নিতে পারে তা আজই বোঝা হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশের দিকেই এখন আছে টেস্ট। বাংলাদেশ ২০১৪ সালের শেষদিক থেকেই অন্যরকম দলে পরিণত হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে মিরপুর স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করে কোন দল হারেনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা টস জিতে আগে ব্যাটিং করে জিতেছে। এছাড়া ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে টস জিতে আগে ব্যাটিং করে জিতেছে বাংলাদেশই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টেও টস জিতে ৬৪ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। এবারও টস জিতল বাংলাদেশ। তাহলে তো ম্যাচও জিতবে বাংলাদেশই। সেই সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। সাদমান-সাকিবের নৈপুণ্যে সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে। দুইজনের জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে প্রথমদিন যে স্কোর গড়েছে বাংলাদেশ, তাতেই সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
×