ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শীতকালীন পথনাটক প্রদর্শনী শুরু

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ১ ডিসেম্বর ২০১৮

 শীতকালীন পথনাটক প্রদর্শনী  শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কখনও আন্দোলন-সংগ্রামের রূপকার, কখনও বিদ্রোহের হাতিয়ার হয়েছে পথনাটক। এবার শহরে প্রান্তে প্রান্তে প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার প্রদর্শিত হবে সেই পথনাটক। আগামী পয়লা বৈশাখ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর, যাত্রাবাড়ি, উত্তরা, মিরপুর, দনিয়া, বাহাদুর শাহ পার্কসহ নগরের নানা পয়েন্টে চলবে এ প্রদর্শনী। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতা, রুখে দাও জনতা’ স্লোগানে শুরু হলো শীতকালীন মৌসুমী নিয়মিত পথনাটক প্রদর্শনী। বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ আয়োজিত ২৬ নিয়মিত প্রদর্শনীটির সূচনা হলো শুক্রবার। হেমন্তের বিকেলে উৎসুক দর্শকের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন হলো। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় নাট্যদল আরণ্যকের পথনাটক ‘মূর্খ লোকের মূর্খ কথা’ এবং সুবচনের পথনাটক ‘বোধোদয়’। শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পাঞ্জলির অর্পণের মাধ্যমে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর বহ্নিশিখার শিল্পীরা গেয়ে শোনায় জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ এবং গণসঙ্গীত ‘সোনা নয় যত খাঁটি তার চেয়ে খাঁটি বাংলাদেশের মাটি’। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। উদ্বোধনী আলোচনায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী লাকী ইনাম ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। আলোচনায় অংশ নেন জাপানের প্রগতি লেখক সঙ্ঘের সম্পাদক সমাজবাদী সাহিত্যিক নাওমি ওয়াতানাবে, পরিষদের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান, মোহাম্মদ বারী, পরিষদের সদস্য রতন সিদ্দিকী ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ গিয়াস। সভাপতিত্ব করেন পরিষদ সভাপতি মান্নান হীরা। উদ্বোধনী বক্তব্যে মামুনুর রশীদ বলেন, এদেশে আশির দশক থেকে বেগবান হয়েছে পথনাটকের চর্চা। সংস্কৃতিকর্মীদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পথনাটক। পেয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। প্রাসঙ্গিকভাবেই পথনাটক ব্যবহার হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। পথনাটকের মাধ্যমে খুব সহজেই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। এখন অনেকেই পথনাটক করছে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে উপস্থাপন ও বিষয়গতভাবে সেটা যেন স্থ’ূল না হয়। সেটা হলে আবেদন নষ্ট হয় শিল্প মাধ্যমটির। তাই ভাল পথনাটকের জন্য চর্চা ও অনুশীলনের প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে এই নাট্যজন বলেন, আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার আবার ক্ষমতায় আসুক। যেসব সমস্যা এখনও বিরাজমান সেসব সমস্যার সমাধান করুক তারা। মান্নান হীরা বলেন, ড. কামাল হোসেনের মতো একজন সংবিধানপ্রণেতা যখন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে হাত মেলায় তখন মনে হয় যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার হরিলুট হচ্ছে। তাই বলতে হয়, মুক্তিযুদ্ধ করলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করা যায় না। লাকী ইনাম বলেন, পথনাটক আমাদের ঐতিহ্য। পথনাটক আমাদের চিন্তার খোরাক জোগায়। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচনের মাধ্যমে আসবে নতুন সরকার। তাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলের কাছে আমাদের দাবি, তাদের ইশতেহারে যেন সংস্কৃতি খাতে মোট বাজেটের ১ শতাংশ বরাদ্দের কথা উল্লেখ করা হয়। প্রতিটি জেলা, উপজেলায় শিল্পকলা একাডেমি স্থাপনের পাশাপাশি সঙ্গীত ও নাট্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার অঙ্গীকার করতে হবে। সংস্কৃতিচর্চার বিকাশে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আধুনিক মিলনায়তন স্থাপন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সংস্কৃতিকর্মীরা কোন দল না করলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই হচ্ছে আমাদের আদর্শ। অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মূল নীতির বাস্তবায়ন করতে হবে। আলোচনা শেষে প্রদর্শিত হয় আরণ্যকের পথনাটক ‘মূর্খ লোকের মূর্খ কথা’। রচনার পাশাপাশি প্রযোজনাটির নির্দেশনাটি দিয়েছেন মান্নান হীরা। সাইফ আহমেদ রচিত সুবচন পরিবেশিত ‘বোধোদয়’ পথনাটকের নির্দেশনায় ছিলেন আহমেদ গিয়াস। আগামী ৭ ডিসেম্বর স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে ২৬তম আসরের দ্বিতীয় পথনাটক প্রদর্শনী। ২১ ডিসেম্বর উত্তরার রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে মৌসুমের তৃতীয় প্রদর্শনী।
×