ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব এইডস দিবস আজ

এইচআইভি সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ছে

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ১ ডিসেম্বর ২০১৮

 এইচআইভি সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ছে

নিখিল মানখিন ॥ ভয়াবহ হয়ে উঠছে নীরব ঘাতক এইচআইভি সংক্রমণের হার। এর দৃশ্যমান অবস্থা বর্তমানে সহনীয় পর্যায়ে হলেও আশঙ্কামুক্ত নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে দ্রুতহারে এইচআইভি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সমস্ত কারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ বিদ্যমান রয়েছে। সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় সেবাগুলো নিশ্চিত করা না গেলে সংক্রমণের এই হার ধরে রাখা সম্ভব নয়। গোপনে তা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। এইডস রোগীর মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দেশের অন্যত্র সংক্রমণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থা সামনে রেখে আজ শনিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব এইডস দিবস। এইডস প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এদিকে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ এইডসমুক্ত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, পোলিও ও ধনুষ্টঙ্কারমুক্ত হয়েছে দেশ। সংক্রামক রোগের হার অনেকগুণ কমে গেছে। বাঙালী সব সময় জয় করতে জানে। আমাদের প্রত্যয় আছে, আমরা জয় করব। দেশে এইডস রোগী ও এইচআইভি সংক্রমণের হারও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে অসচেতন হলে ও কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত না রাখলে দেশে দ্রুতহারে এইচআইভি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বার সমস্ত কারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ বিদ্যমান রয়েছে। এইডস প্রতিরোধে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগ অনেক কর্মসূচী চলমান রয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ সম্পর্কিত বিভিন্ন ভুল ধারণা এইডস রোগীদের ঘিরে অপবাদ ও বৈষম্য তৈরি করে। এসব দূর করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এইচআইভি পজিটিভ লোক, এইডস রোগী এবং এইডসজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। কয়েক হাজার মানুষ নিজের অজান্তে এইচআইভি জীবাণু বহন করছে এবং অন্যদের শরীরে ছড়াচ্ছে। দেশে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ২২১ জন, মারা গেছেন ৭৯৯ জন। তবে বেসরকারী হিসাবে এইচআইভি পজিটিভ লোক ও এইডস রোগীর সংখ্যা আরো বেশি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এইচআইভি সংক্রমণের এই নিম্নমাত্রা ধরে রাখা এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশসমূহের রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সম্পদের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি আছে সামাজিক কুসংস্কার। এইচআইভি শনাক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বিশেষজ্ঞরা জানান, একজন ব্যক্তি এইচআইভি আক্রান্ত কী না তা জানার একমাত্র উপায় হলো তার রক্ত পরীক্ষা করা। এইচআইভি-তে আক্রান্ত হলেও একজন ব্যক্তি বহুদিন সুস্থ ও সবলভাবে বেঁচে থাকে এবং নিয়মিত কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারেন। এইচআইভি সংক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে রোগের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। এভাবে পৃথিবীতে লাখ লাখ মানুষ নিজের অজান্তে এইচআইভি জীবাণু বহন করছে এবং অন্যের শরীরে এইচআইভি ছড়াচ্ছে। এ্ইচআইভি চিকিৎসা যত তাড়াতাড়ি শুরু করা যায় তত ভাল। দেরি করে চিকিৎসা শুরু করলে সেই চিকিৎসা কার্যকর হয় না। এ জন্য রক্ত পরীক্ষা করে দ্রুত এইচআইভি নির্ণয় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক ব্যক্তি, ধনী বা গরিব, বিবাহিত বা অবিবাহিত যে কেউ এইচআইভিতে আক্রান্ত হতে পারেন। কেউ যদি সঠিকভাবে কনডম ব্যবহার না করে অনেকের সঙ্গে যৌন মিলন করে থাকেন, অন্যের ব্যবহৃত সূঁচ বা সিরিঞ্জ ব্যবহার করে থাকেন অথবা এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়নি এমন রক্ত গ্রহণ করে থাকেন তাহলে তার এ্ইচআইভি তে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া, এইচআইভিতে আক্রান্ত মা থেকে তার সন্তানের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমিত হতে পারে। এ সব ক্ষেত্রে দ্রুত এইচআইভি পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, সাধারণ মেলামেশা (হাত মেলানো, কোলাকুলি করা, স্পর্শ করা বা চুমু খাওয়া) করলে এইডস ছড়ায় না। এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তির সেবাযত্ন করলে, তার সঙ্গে বসবাস করলেও এইডস ছড়ায় না। শরীর থেকে নির্গত বিভিন্ন তরল পদার্থ (ঘাম, মুখের লালা, বমি বা মলমূত্র প্রভৃতি স্পর্শ, একই বাসনে খাবার খেলে বা একই গ্লাসে পানীয় পান, এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তির সঙ্গে কাজ করলে এবং তার সঙ্গে একই ক্লাসে পড়াশোনা করলেও এইচআইভি ছড়ায় না। শুধু তাই নয়, একই পায়খানা ব্যবহার করলে, একই জলাশয়ে সাঁতার কাটলে বা একই পানির উৎস্য ব্যবহার করে গোসল করলে, মশা বা পোকা মাকড়ের মাধ্যমে এবং এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তির তৈরি করা খাবার খেলেও এইচআইভি ছড়ায় না বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে জানান, বাংলাদেশে গোপনে ছড়িয়ে পড়ছে এইচআইভি বা এইডসের মরণ বিষ। অপবাদ, বৈষম্য, কুসংস্কার ও অবহেলার আশঙ্কায় নিজেদের অবস্থা প্রকাশ করে না আক্রান্তরা। এতে আক্রান্তদের প্রকৃত সংখ্যা চিহ্নিতকরণ ও প্রতিরোধ কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কিন্তু থেমে নেই এইচআইভি বা এইডসের সংক্রমণ। এভাবে চলতে থাকলে আগামী এক যুগের মধ্যে এইডস ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। যা নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে উঠবে অসম্ভব। কেননা, বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমণের সব ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ ও উপাদান বিদ্যমান। সম্মিলিত ভাবে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। এর ভয়াবহতা আজ গোটা বিশ্ববাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিভিন্ন দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে এইডসের বিস্তার রোধে ব্যাপক জনসচেতনতা প্রয়োজন।
×