ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য

‘দুর্জয় দুর্গ’- স্বাধীনতার প্রবেশদ্বারে জাগ্রত চেতনা...

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ১ ডিসেম্বর ২০১৮

‘দুর্জয় দুর্গ’- স্বাধীনতার প্রবেশদ্বারে জাগ্রত চেতনা...

সাজেদ রহমান ॥ যশোরের চৌগাছায় বিশিষ্ট ভাস্কর আতিয়ার রহমানের তৈরি মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যটি উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। নান্দনিক এই ভাস্কর্য দেখে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রোমন্থন করেন অনেকে। প্রতিবছর জাতীয় দিবস এলেই ইতিহাস খচিত ‘দুর্জয় দুর্গ’ এই ভাস্কর্য ফুলে ফুলে ভরে যায়। স্বাধীনতার প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত চৌগাছা বাজারের প্রাণকেন্দ্রে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্যটি সকলের দৃষ্টি কাড়ে। দৃষ্টিনন্দন এই ভাস্কর্য আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নে দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্যই এটি নির্মিত। বিশ্ববরেণ্য শিল্পী এস এম সুলতানের ছাত্র শিল্পী আতিয়ার রহমান এই ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২২ নবেম্বর চৌগাছা প্রথম হানাদার মুক্ত হয় এবং এই পথ দিয়েই মিত্রবাহিনী প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশে প্রবেশ করে। নির্মাতা আতিয়ার রহমান জানান, ২০০৮ সালে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করি। প্রথমে ভাবনার প্রতিফলন ঘটাতে পেনসিলের স্কেচ করেছিলাম। সেই ভাস্কর্যের স্কেচ নিয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার কাছে বহুবার ধর্ণা দিয়েছি। সবাইকে বোঝনোর চেষ্টা করেছি চৌগাছার রক্তঝরা ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এখানে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা প্রয়োজন। কিন্তু সহযোগিতার পরিবর্তে ভর্ৎসনা জুটেছে কপালে। নিজের কাছে দগ্ধ হয়েছি বারবার। এরপর ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর মাটি খুঁড়ে ভাস্কর্য নির্মাণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবুর রহমান ও সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম সাখাওয়াৎ হোসেন। প্রথম পর্যায়ে ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য শিল্পীর সঙ্গে সাহসী ভূমিকা পালন করে চৌগাছা রিপোর্টার্স ক্লাব। ফান্ড গঠনের লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন লোকজনের কাছে গিয়ে টাকা সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এক পর্যায়ে টাকা সংগ্রহ করার প্রয়াস থমকে যায়। এই অবস্থায় সাবেক সংসদ সদস্য এবং তৎকালীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ ২০১১ সালে টিআর ও কাবিখার প্রকল্পের বরাদ্দ দেন। এছাড়া জেলা পরিষদও সহযোগিতা করে। ধীরে ধীরে কয়েক বছরের মধ্যে ভাস্কর্যটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। শুধু পানির ফোয়ারাটি এখনও নির্মাণ করা হয়নি। তারপরও জনগণের কথা চিন্তা করে এই ভাস্কর্যটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। শিল্পী আতিয়ার রহমান জানান, ভাস্কর্যটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। ভাস্কর্যটির উচ্চতা ৩০ ফুট। এটি তিন স্তরে ভাগ করা হয়েছে। মূলত ত্রিভুজ আকৃতির। বৃত্তাকার পানির ফোয়ারার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে ভাস্কর্যের মূল স্তম্ভ। ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রথম স্তরে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, যুদ্ধে গণহত্যার পৈশাচিকতার চিত্র এবং পাকিস্তানীদের পরাজয় দৃশ্য-আত্মসমার্পণ। দ্বিতীয় স্তরে ৭ জন বীর শ্রেষ্ঠের প্রতিকৃতি। শেষ স্তরে অর্থাৎ ওপরে আছে অসংখ্য জনতার প্রতীক একজন দুঃসাহসিক মুক্তিযোদ্ধা। যার এক হাতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা দেশপ্রেমের রাইফেল, অন্য হাতে শান্তির প্রতীক পায়রা। ভাস্কর্যের নান্দনিকতা এবং নানাদিক নিয়ে তিনি আরও বলেন, রক্তস্নাত গাথা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা কখনো মরে না। যুগেযুগে কালেকালে মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের চেতনায় বেঁচে থাকবেন। চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবুর রহমান বলেন, সরকারী ঘোষণার আগে থেকেই আমরা এই ভাস্কর্য নির্মাণের পরিকল্পনা করি। যেহেতু চৌগাছাকে স্বাধীনতার প্রবেশদ্বার বলা হয়। সেকারণে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমি শিল্পী আতিয়ার রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যটি নির্মাণের উদ্যোগ নেই। এ কারণে নানাভাবে টাকা জোগাড় করা হয়। ভাস্কর্যে পানির ফোয়ারা নির্মাণের অসম্পন্ন কাজও দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে।
×