ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যালয়ে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার ॥ নওগাঁর বালুভরা আরবি উচ্চ বিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১ ডিসেম্বর ২০১৮

 বিদ্যালয়ে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার ॥ নওগাঁর বালুভরা আরবি উচ্চ বিদ্যালয়

গ্রামীণ জনপদের কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এমন সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার চোখে পড়ে না। নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বালুভরা আর বি উচ্চ বিদ্যালয়ের সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারটি একদিকে বিদ্যালয়ের খ্যাতি যেমন বৃদ্ধি করেছে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের সুযোগ প্রসারিত করেছে। ১০৪ বছর বয়সের প্রাচীন এই বিদ্যালয়টি এলাকার শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এই বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র-ছাত্রী চিকিৎসক, প্রকৌশলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে জাতির নিরবচ্ছিন্ন সেবা করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি নিজ বিদ্যালয়টির উন্নয়ন, জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্র হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। তাঁদেরই একজন সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। বর্তমানে তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব পদে নিয়োজিত রয়েছেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় কেবলমাত্র বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে তাই নয়, এলাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কার, ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ ইত্যাদি কাজও সম্পাদন করেছেন। তাঁর প্রচেষ্টায় বালুভরা আর বি উচ্চ বিদ্যালয়ে গড়ে তোলা হয়েছে সবিতা চক্রবর্তী স্মৃতি গ্রন্থাগার। এই গ্রন্থাগারে মোট ৩ হাজার ৭শ’ ২৬টি বই রয়েছে। বইয়ের তালিকায় রয়েছে স্থানীয়, জাতীয় এবং বিশ্বখ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের জীবনী, শিল্পী সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, ক্রীড়াবিদ, রাজনীতিবিদ, চলচ্চিত্রকার, চলচ্চিত্র শিল্পী, ইতিহাসবিদদের জীবনী, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীসহ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন লেখা, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক নোভেল, কাব্যগ্রন্থ, রবীন্দ্র রচনাবলী, নজরুল রচনাবলী, ধর্মীয় গ্রন্থ সামগ্রী, গবেষণামূলক লেখা, শিশুতোষ লেখাসহ সাহিত্যের বিভিন্ন মাধ্যম এই গ্রন্থাগারটিকে করেছে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই গ্রন্থাগারের সহকারী গ্রন্থাগারিক মাসুদা আক্তার জানালেন, ছাত্রছাত্রীদের গ্রন্থাগারে এসে বই পড়ার আগ্রহ বেশ। সপ্তাহে ৫ দিন প্রতিদিন ১টি করে ৫টি ক্লাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ক্লাস রুটিনে। রুটিন মাফিক ক্লাসে এসে তারা তাদের চাহিদামত বই নিয়ে পড়াশোনা করতে পারে। এখানে বই পড়া শেষে পুনরায় বইটি ফেরত দিয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের বই এবং শিশুতোষ বই পড়তে বেশি আগ্রহী বলে মনে হয়। ওই বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র প্রীতম কুমার চক্রবর্তী ও ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী যূথি আক্তার তারা দু’জনেই এই লাইব্রেরির নিয়মিত পাঠক। তারা বেশির ভাগ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই পড়ে থাকে। তারা বলেছে, এই গ্রন্থাগারে বই পড়ে মুক্তিযুদ্ধ এবং জতির জনক বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সঠিক এবং বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোত্তালেব হোসেন বলেছেন, এরকম একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমি নিজেকে গর্বিত বোধ করছি। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুকমল কর্মকার বলেন, এই বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। একটি লাইব্রেরি এলাকার শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনে যথেষ্ট সহায়ক। কেবলমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা মানুষকে জ্ঞানী করে না। জ্ঞান অর্জনে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের পরিসংখ্যন ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, আমার পূর্বপুরুষ থেকেই এলাকার মানুষের কল্যাণমুখী কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। আমার দাদু (পিতামহ) বালুভরা আর বি উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি তারও আগে বর্তমান জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুরে অনুরুপ আরেকটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। যেখানে আমার কিছু করার সুযোগ বা সাধ্য রয়েছে, সেখানে কিছু করতে পারা গর্বের ব্যাপার। সৃষ্টিকর্তা আমাকে যে সুযোগ ও যোগ্যতা দিয়েছেন তার দায়বদ্ধতা থেকেই এলাকা এবং এলাকার মানুষের জন্য কিছু করতে পারা গৌরবের মনে করি। সেই চেতনা বোধ থেকেই আমি আমার গ্রাম, আমার এলাকা এবং আমার স্কুলের জন্য এসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×