ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিজয়ের মাস

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ১ ডিসেম্বর ২০১৮

বিজয়ের মাস

আজ ডিসেম্বরের প্রথম দিন। ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় ইতিহাসের উজ্জ্বলতম একটি মাস। এটি আমাদের বিজয়ের মাস। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে গৌরবজনক বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয়েছে এই বাংলাদেশ। এই স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীকে তাড়িয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করার শপথ নিয়েছিল দেশের বীর সন্তানরা, মুক্তিযোদ্ধারা। বিজয়ের মাসের সূচনার প্রথম দিনটিকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসেবে পালনের উদ্যোগ নেয়া হয় কয়েক বছর আগে। দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এই উদ্যোগ নেন। একটা সময় গেছে, যখন মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক তথ্য নতুন প্রজন্মকে জানানো হতো না। এজন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে। একাত্তর হঠাৎ করে আসেনি। হঠাৎ করে কোনকিছুই হয়নি। সুদীর্ঘ সময়ের আন্দোলন, সংগ্রামের পথ বেয়ে এমন এক পর্যায় এসেছিল, যেটা ছিল ঐ আন্দোলন-সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়। সেটাই একাত্তর। একাত্তরের ইতিহাস বলতে গেলে তার সঙ্গে আসে তার পূর্ববর্তী ইতিহাসও। প্রাথমিক পর্যায়ের সূচনাপর্বের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে ভাষা আন্দোলন। সেই ভাষা আন্দোলনের পর সংগ্রামের ধারাটি স্রেতের মতো বাহিত হয়ে পৌঁছেছিল একাত্তরে। এই পথের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে ছয় দফার আন্দোলন। এসব আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে রয়েছে এদেশের মানুষের বহু ত্যাগ, বহু অশ্রু, অনেক জীবনদানের ঘটনা। ছয় দফার আন্দোলনের সঙ্গে এক পর্যায়ে যুক্ত হয় এগারো দফার আন্দোলন। আর ১৯৭০ সাল। সে বছর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন এবং সে নির্বাচনে দেশের মানুষের বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের ঘটনা। তারপর একাত্তরের মার্চ। ১ মার্চ। এলো ৭ মার্চ। সেদিনের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এবং তাতে সুস্পষ্ট ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এলো ২৫ মার্চ। পাকিস্তানী বাহিনীর সুপরিকল্পিত সামগ্রিক আক্রমণ, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হলো পাকিস্তানে। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো প্রতিরোধ, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ। এই যুদ্ধে রুখে দাঁড়াল এ দেশের বীর সন্তানরা। এরাই দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘকাল সুকৌশলে এই যুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। সর্বাধিক দুঃখ এবং লজ্জার বিষয়, স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর নাম পর্যন্ত মুছে ফেলা হয় এসব তৈরি করা ইতিহাসে। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে, তার নামে হাতে তুলে নেন অস্ত্র, ঝাঁপিয়ে পড়েন দেশ থেকে শত্রু বিতাড়নের শপথ নিয়ে। ৯ মাসের যুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এলো ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ। নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করল হানাদাররা ঢাকানগরীর রেসকোর্স তথা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। দেশ শত্রুমুক্ত হলো। স্বাধীনতা নিরঙ্কুশ হলো। অর্জিত হলো মহান বিজয়। এসব গৌরবের ইতিহাসকে দীর্ঘদিন আড়াল করা হয়েছে, নবীন প্রজন্মকে জানতে দেয়া হয়নি। তাদের ভুল এবং বিকৃত ইতিহাস শোনানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সুখের বিষয়, সেইসব দিন পার হয়ে গেছে। আবার নবীন প্রজন্ম জানতে পারছে সঠিক ইতিহাস। গৌরবের অধ্যায় সৃষ্টির সেই মাস আজ শুরু হলো। এ মাসের প্রথম দিনটি মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসেবে পালনের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল সেটা ছিল সঠিক সিদ্ধান্ত। আরও ব্যাপকভাবে সরকারী উদ্যোগে এই দিবস প্রতিবছর পালন করার উদ্যোগ নেয়া হোক। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলো ধরে রাখার ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হোক। মুক্তিযোদ্ধাদের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে আরও উদ্যোগ নেয়া হোক। বিজয়ের মাসের প্রথম দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান।
×