ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জুবায়ের বারি

ডাইনোসর কি ফিরে আসবে?

প্রকাশিত: ০৭:২২, ৩০ নভেম্বর ২০১৮

ডাইনোসর কি ফিরে আসবে?

এই গ্রহের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বাসিন্দা ছিল ডাইনোসর। জুরাসিক পার্ক সিনেমায় দেখানো হয়েছে, এদের পুনরুত্থান হলে কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে পারে মানুষ। বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত এ বিষয়ে গবেষণা করছেন। ২০০ বছর আগে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াত বিশাল আকারের ডাইনোসর। এ কথা সবার জানা হলেও সেই সময়ের একটি বিশাল সরীসৃপের কথা জানতেন না কেউ। কিছুদিন আগে বিজ্ঞানীদের একটি দল এমনই এক প্রাণীর ফসিল খুঁজে পেয়েছেন। হাতির সমান ডাইনোসর পোল্যান্ডে বিজ্ঞানীরা ২০০ মিলিয়ন বছর পুরনো একটি সরীসৃপের ফসিল খুঁজে পেয়েছেন। ডাইনোসরের সমসাময়িক এই তৃণভোজী সরীসৃপটির আকার হাতির মতো। ‘সায়েন্স’ পত্রিকায় এই আবিষ্কারের খবর প্রকাশিত হলে জানা যায়, ডাইনোসর ছাড়াও ‘ট্রায়াসিক যুগ’-এ ছিল হাতির সমান একটি সরীসৃপও, যা দেখতে অনেকটা গ-ারের মতো। চার পা ওলা এই প্রাণীটির ফসিল বা জীবাশ্ম পাওয়া গেছে পোল্যান্ডের লিসোভিৎসে শহরের পাশে। তাই প্রাণীটির নাম ‘লিসোভিৎসিয়া বোজানি’ রাখা হয়েছে শহরের নামের সঙ্গে মিলিয়েই। সুইডেন ও পোল্যান্ডের বিজ্ঞানীদের এই দলটি জানিয়েছে, মূলত তৃণভোজী এই প্রাণীটির শরীর গ-ারের মতো হলেও ঠোঁট অবিকল কচ্ছপের মতো। এর আগে, ‘ডাইসাইনোডন্ট’ প্রজাতির প্রাণীদের কথা বৈজ্ঞানিক মহলে আলোচিত হয়েছে। ‘লিসোভিৎসিয়া’র মতো ডাইসাইনোডন্ট প্রজাতির সরীসৃপও তৃণভোজী ও অন্যান্য দিক দিয়ে স্তন্যপায়ী জীবের কাছাকাছি। কিন্তু আকারের হিসাবে লিসোভিৎসিয়া ডাইসাইনোডন্টের চেয়ে কয়েকগুণ বড়। বিজ্ঞানীরা বলেন, হাতির সমান লিসোভিৎসিয়া দৈর্ঘ্যে সাড়ে চার মিটার ও দশ টন ওজনের। বিপরীতে ডাইসাইনোডন্টের আকার ইঁদুর বা বড়জোর ষাঁড়ের সমান ছিল বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। কেন গুরুত্বপূর্ণ এই আবিষ্কার বিজ্ঞানী টমাস সুলেজের মতে, ‘এই আবিষ্কার নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী, কারণ, ডাইসাইনোডন্ট বিষয়ে বর্তমান গবেষণার ধারা বদলাতে পারে এই আবিষ্কার।’ ডায়নোসরের বিশাল আকার নিয়েও অনেক অজানা তথ্য জানাবে এই লিসোভিৎসিয়া, জানান সুলেজ। ২৫০ মিলিয়ন বছর আগের একটি মহামারী পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশ প্রজাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। কিন্তু নতুন এই ফসিল থেকে জানা গেছে যে, লিসোভিৎসিয়া প্রাণীটি এই মহামারীর বেশ পরে, আনুমানিক ২০৫ থেকে ২১০ মিলিয়ন বছর আগে ডায়নোসরের সঙ্গেই পৃথিবীতে আসে। সুতরাং, এতদিন ইতিহাসের যে অধ্যায়কে বিজ্ঞানীরা চিনতেন শুধু ডায়নোসরের সময় হিসাবেই, সেই ধারণাকে আমূল বদলাতে পারে পূর্ব ইউরোপের পোল্যান্ডে খুঁজে পাওয়া এই আশ্চর্য প্রাণীর ফসিল। আকাশে উড়ে বেড়ানো সরীসৃপ টেরোসর, আকাশে উড়তে পারা সবচেয়ে বড় প্রাণী। মৃদুমন্দ বাতাসে উড়ে বেড়াতে পারতো আকাশে। কিন্তু ঝোড়ো হাওয়ায় রক্ষা করতে পারতোনা নিজেকে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় প্রাচীন এই প্রাণীদের সম্পর্কে এমন ধারণাই দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের বিস্ময় এই প্রাণীটিকে ঘিরে, যে কিভাবে বিশালাকার শরীর নিয়ে সরীসৃপ এই প্রাণীটি আকাশে উড়তে পারত। ২২০ থেকে ৬৫ মিলিয়ন বছর আগের মেসোজয়িক যুগে বাস করতো টেরোসর প্রজাতি, যখন ডাইনোসরদেরও বিচরণক্ষেত্র ছিল এই পৃথিবী। টেরোসর টেরোডাকটাইলস নামেও পরিচিত। বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ এখন বলছেন এটি সম্ভবত উড়তে পারত না। তবে এ কথা ঠিক, বারো মিটার প্রশস্ত ডানা এবং দুইশ’ কিলো পর্যন্ত ভারি শরীর নিয়ে আকাশে উড়ে বেড়ানোটা রীতিমতো একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়। ব্রিটেনের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ এবং প্রকৌশলী কলিন পামার উড়ুক্কু প্রাণীদের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। টেরোসর নিয়ে তাঁর এই গবেষণার ফল প্রকাশিত হয় ব্রিটেনের একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে। পামারের গবেষণা বলছে, এই প্রাণী উড়তে পারত। টেরোসর এর জীবাশ্ম’র উপর ভিত্তি করে এর আদলে তিনি এই প্রাণীর পাখার মডেলও তৈরি করেন। আর সাম্প্রতিক এই গবেষণায় তিনি দেখার চেষ্টা করেন, পালের মতো পাখা ছড়িয়ে কীভাবে এরা উড়তে পারত। তিনি পরীক্ষা করে দেখেন, যে কৌশল বিবেচনায় রেখে বিমান প্রকৌশলীরা উড়োজাহাজের পাখা তৈরি করেন, একইভাবে টেরোসরও তার পাখার সাহায্যে উড়তে পারত। কেবল বয়স কিংবা ঝড়ো হাওয়াই কি এদের মৃত্যুর কারণ ছিল? বলা হয়, ডাইনোসর গোত্রীয় প্রাণী স্পিনোসর টেরোসরকে খেয়ে ফেলত। ‘নেচার’ পত্রিকার ২০০৪ সালের ১ জুলাই সংখ্যায় জীবাশ্মবিদ এরিক বাফেটাউট টেরোসরের জীবাশ্মর বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, টোরোসরের মেরুদ-ে স্পিনোসরের ভাঙ্গা দাঁতও পাওয়া গেছে। টেরোসর’এর বংশবৃদ্ধি প্রক্রিয়া সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে। এ পর্যন্ত টেরোসরের কেবল একটি ডিমই পাওয়া গেছে। ডিম থেকে বের হওয়ার পর ঠিক কতদিন এরা মায়ের ওপর নির্ভর করত তা জানা যায়নি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, জন্মের পরপরই এরা চাইলে উড়তে পারত। বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার বেনেট এবং ডেভিড আনউইন বলেন, বাচ্চা টেরোসর খুব কম সময়ই বাবা-মার ওপর নির্ভর করত। যতদিন না পর্যন্ত এদের পাখাগুলো আকাশে উড়ার মতো বড় না হতো এবং ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে নিজেদের রক্ষা করার মতো অবস্থায় তারা না পৌঁছাত ততদিন এরা বাবা-মার ওপর নির্ভর করত। পামারের সাম্প্রতিক গবেষণায় এই তথ্যটি বেরিয়ে আসে যে, এই প্রাণীটি পাহাড়ের পাশ দিয়ে এবং উপকূলীয় এলাকায় মৃদুমন্দ বাতাসে স্বচ্ছন্দে উড়তে পারত। ধীর গতিতে উড়ে বেড়াত এরা এবং এদের পাখার ধরন এমন ছিল যে, চাইলে সহজেই হালকাভাবে মাটিতে নামতে পারত। আর এতে তাদের নাজুক হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার ভয় ছিল না। পামার বলেন, ‘যেহেতু টেরোসরের হাড় পাতলা আবরণে ঢাকা এবং অনেক বেশি সংবেদনশীল ছিল, সেহেতু আস্তে আস্তে মাটিতে নেমে আসার ব্যাপারটা এদেরকে যে কোন আঘাতের হাত থেকে রক্ষা করত।’ পামারের পরীক্ষায় আরও দেখা যায়, প্রচ- ঝোড়ো হাওয়ায় এই প্রাণীটি অপেক্ষাকৃত দ্রুত মাটিতে নেমে আসত। ‘ঝড় এবং ঝড়ো হাওয়ায় টেরোসররা মাটিতে বা আকাশে যেখানেই থাকুক না কেন, সেই সময়গুলো ছিল এদের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ,’ বলেন পামার। টেরোসরের জীবাশ্ম প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৭৮৪ সালে। সেসময় ইটালির প্রাণীবিজ্ঞানী কসিমো কলিনির কাছ থেকে প্রথম বর্ণনা পাওয়া যায় এই প্রাণীটির। কিন্তু এটি আদৌ উড়তে পারত কিনা তা নিয়ে তখনও কারও ধারণা ছিল না। ১৮০১ সালে বিজ্ঞানী জর্জ কুভিয়ে সর্বপ্রথম বলেন, সরীসৃপ এই প্রাণীটি উড়তেও পারত। আর তখন থেকে টেরোসরের জীবাশ্ম নিয়ে চলছে একের পর এক গবেষণা। যেসব বিজ্ঞানী পুনরুত্থান নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁদের অধিকাংশেরই মতামত, মিলিয়ন বছর বয়সী কোন জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল থেকে প্রাণীর পুনরুত্থান সম্ভব নয়। সূত্র : বিবিসি
×