ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শীতে ফ্যাশনেবল ব্লেজার

প্রকাশিত: ০৭:২০, ৩০ নভেম্বর ২০১৮

শীতে ফ্যাশনেবল ব্লেজার

গাঢ় কুয়াশায় ডুবে আছে প্রকৃতি। দূরান্তের গোল মাঠ আর বাড়িঘর, গাছ, নদী যেন শীতের লাজুক ছোঁয়ায় কেমন নিমগ্ন হয়ে আছে। হাল্কা রোদের ঝিলিক দেয়া দিগন্ত তাই প্রত্যাশিত একটি বিষয়। হেমন্তের রং মুছে গিয়ে নিঃসর্গের পরতে পরতে বাসা বাঁধতে শুরু করেছে। শীতের ধূসর আবহ আর সেই সঙ্গে বদলে যাচ্ছে দৈনন্দিন জীবনের রুটিনগুলোও। প্রবল শীতে একটু উষ্ণতার জন্য তাই শরীরের প্রতিটি অঙ্গ হয়ে ওঠে দারুণ আকাক্সিক্ষত। উষ্ণতার এই আকাক্সক্ষা চাইলেই কি পূরণ হয়! কেননা শীতের বৈশিষ্ট্যই এমন যে হিমঝরা হাওয়ার সঙ্গে বসবাস। উত্তরের হিমেল বাতাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাটাই যেন উত্তম। আর তাই শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য রুটিনের সঙ্গে পাল্টে যায় পোশাকের ধরনও। দিনের তাপমাত্রার পাশাপাশি রাতের তাপমাত্রা যখন ক্রমশ কমতে থাকে তখন গরম কাপড়ের প্রয়োজনীয়তাও বেড়ে যায়। কোট-স্যুট, ব্লেজার, স্যুয়েটার, জ্যাকেট, শাল, চাদর, কার্ডিগান, জাম্পার, মাফলার, কানটুপিসহ গরম কাপড়ের সঙ্গে লেপ-কম্বলের ব্যবহারও বিপুলহারে শুরু হয়ে যায় দৈনন্দিন জীবনে। জীবনের প্রয়োজনেই শীতকালে তমুল ভাবে পোশাকের রূপবদলের সঙ্গে সঙ্গে পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনও পরিলক্ষিত হতে দেখা যায়। এই পরিবর্তন শুধু পোশাকে নয়। খাবার দাবারেও পরিবর্তনের ধারাটা বিশেষ দৃষ্টি কাড়ে। বিশেষ করে শাক, সবজিতে যেমন আসে নতুনত্ব, তেমনি চলমান জীবনে পিঠা- পায়েস- ক্ষিরসহ নানাবিধ আয়েশী খাবারের ধরনের ও শীতে একটা আলাদা আমেজ ফুটে ওঠে। বাঙালীর চিরায়ত ঋতু বৈচিত্র্যের আবহমান ধারাটা এমনভাবে জীবনের প্রতিটি ছন্দে স্পন্দিত হয়- যা মন ও শরীরকে দারুণভাবে আন্দোলিত করে। প্রতি ঋতুতেই তাই ভিন্ন ভিন্নভাবে সেজে ওঠে প্রকৃতি আর প্রকৃতির সঙ্গে সেজে ওঠে মানুষ ও পরিবেশ। হেমন্তের প্রস্থানের আগে ভাগেই শীতের উপস্থিতিটা একটু একটু করে প্রকৃতি জানান দিতে থাকে। আর এই জানান দিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বিপুল এক প্রস্তুতিপর্ব দৈনন্দিন জীবনকে যেন কিছুটা ব্যাতি ব্যস্ত করে তোলে আলমিরা, ওয়ারড্রোবের নির্জন ড্রয়ারে ভাঁজ হয়ে পড়ে থাকা গরম কাপড়ের হৃৎস্পন্দনে বেজে ওঠে নবীন সিম্ফনি। আর ওই সিম্ফনির আনন্দঘন-রেশ যেন লাগে এসে জীবনে। এভাবেই শীতকে বরণ করে নেয় মানুষ। ফ্যাশনেবল শীতের পোশাক শীতকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে আয়েশ করে উপভোগ করার পাশাপাশি নগর জীবনের সচ্ছল মানুষের জন্য তথা তরুণ-তরুণীদের জণ্যে বিশেষ আয়োজনও লক্ষ্যণীয় বিষয়। ঢাকার প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন হাউসগুলো শীতের আগে থেকেই নতুন ডিজাইনের ফ্যাশনেবল গরম কাপড়ের পোশাক তৈরির প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। এই প্রস্তুতির প্রধান ট্রেন্ড হলো টিন্এজার। আউটলেটগুলোতে তরুণদের জন্য ব্লেজার, ফুলসিøভ কটনের ডিজাইনকৃত গেঞ্জি, স্যুয়েটার, জ্যাকেট, জিন্স-কর্ডের শার্ট প্রভৃতি আর তরুণীদের জন্য শাল, কার্ডিগান, ফিমেল স্যুয়েটারসহ নানা আঙ্গিকের গরম কাপড়ের পোশাক সংগ্রহের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া বঙ্গবাজার, গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু এ্যাভেনিউ, বায়তুল মোকাররম, মতিঝিল, নয়াপল্টন, ফুলবাড়িয়া, নিউমার্কেটসহ ঢাকার বিভিন্ন ফুটপাথ থেকেও গরম কাপড় সংগ্রহ করা যায় প্রতি শীতেই যেহেতু সব বয়সের মানুষেরই গরম কাপড় অপরিহার্য হয়ে ওঠে শীতে-তাই সাদামাটা গরম কাপড়ের পাশাপাশি ফ্যাশনেবল শীতের পোশাকও অনেকেই পরিধান করেন স্ব-স্ব পছন্দ অনুযায়ী। বড়দের সঙ্গে সঙ্গে শিশু ও কিশোর- কিশোরীদের জন্যও শীতের পোশাকের বাজারগুলো সেজে ওঠে। নতুন আঙ্গিকে। নগরজীবনের এই ছবিটার সঙ্গে মফস্বল শহরের ছবিটাও যেন একটু মিলে যায়। কিন্তু গ্রামগঞ্জের শীতের রূপটা যেন আরও প্রাকৃতিক একটু অসচ্ছলও। নগর জীবন শীতটাকে পৌষ মানানো গেলেও গ্রামের শীতের তীব্রতা গ্রামীণ জনপদে হানা দেয় আরও তীব্রতা নিয়ে। পাতলা কাঁথা, সাধারণ চাদর আর ছেঁড়াখোঁড়া কম্বলে গ্রামের শীত যেন বাগে আসতেই চায় না। আর তাই গ্রামের শীতার্ত মানুষ কুয়াশাভরা আর সন্ধ্যায় ক্ষেতের কিনারে মাঠে, বাড়ির উঠোনে নাড়ার আগুন জ্বেলে সমবেত ভাবে আগুনের উত্তাপ গ্রহণ করে। তা শীতে কখনও কখনও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে শিশু আর বয়স্ক নারী-পুরুষরা শীতে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করে। যদিও শীতের স্থায়িত্বকাল খুব দীর্ঘ নয়। তারপরও শীত এলে একদিকে যেমন নতুন আমেজ, আন্দদের রেশ বেজে ওঠে। তেমনি জনজীবনে শীতের আবহ নাজুক প্রেক্ষিত ও রচনা করে দেয়। সবমিলিয়ে শীতে মানুষের মধ্যে এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়- যার সঙ্গে এই বাংলার প্রতিটি মানুষই পরিচিত। শীতে বেড়ানো, মেলা যাত্রাপালা প্রভৃতি শীতে প্রকৃতি রুক্ষ আর পথঘাট ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকলেও এই সব কিছু যেন মিলিয়ে যায় শীতের নানা উৎসব আয়োজনের অতলে। বিশেষ করে শীতেই গ্রামগঞ্জে উন্মুক্ত মেলা উৎসব শুরু হয়। সে সব মেলায় বাউল, কবিগানের আসর, যাত্রাপালা, পুতুল নাচ, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, খৈ, মুরলি, সন্দেশ আর ঢোল-বাদ্যি, আড়বাঁশির শব্দ আর মানুষের কোলাহল যেন শীতের সঙ্গে এক স–সুতোয় বাঁধা। গ্রামের শীত আনন্দ- নগর জীবনে একেবারেই অনুপস্থিত। হলুদ শর্ষে ফুলের শিশির ভেজা ঘ্রাণ প্রান্তর ছাপিয়ে গিয়ে যেন জীবনের প্রতিটি শীত মানুষঙ্গকে উদ্বেলিত করে তোলে। করে তোলে উৎসবমুখী। অন্যান্য সময়ের চেয়ে শীতে বেড়ানোটাও খুব মজার। ঝড়- বাদলের আশঙ্কামুক্ত শীত ঋতুতে তাই অনেকেই ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে। শীতে যেমন একটু উষ্ণততার ছোঁয়া পেতে সকলেই উন্মুখ হয়ে ওঠে-তেমনি নতুন চালের ভাঁপা পিঠা, পুলি, পাটি সাপটা, ক্ষীর-পায়েস। আর খেজুরের গুড়ের সুস্বাদু সুগন্ধিতে সিক্ত হয়ে উঠে শীতের প্রতিটি সকাল-দুপুর। ছবি : মার্সেল ও রানা মডেল : সজিব খান, দিবা, জুয়েল, লায়না ব্লেজার : ডিমান্ড
×