ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্মূল কমিটি ও ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলন

নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস রোধে তৎপর থাকার আহ্বান

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৩০ নভেম্বর ২০১৮

নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস রোধে তৎপর থাকার আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর আগের মতো দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনা যেন না ঘটে, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে তৎপর থাকার আহ্বান জানিয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্যপরিষদ ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান দুই সংগঠনের নেতারা। ঐক্যপরিষদ ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এই যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক জোট ও দলসমূহের কাছে আমাদের প্রত্যাশা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন- সম্মিলিত ইসলামি জোটের নেতা জিয়াউল হাসান, মহানগর পূজা কমিটির প্রধান পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী, দলিত হরিজন সম্প্রদায়ের নেত্রী সুচিত্রা রানী ভক্তসহ প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে সব রাজনৈতিক দলকে তাদের ইশতেহারে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ারসহ ১২ বিষয় যুক্ত করার আহ্বানও জানানো হয়। রানা দাশগুপ্ত বলেন, আমরা আশা করব, আগামী নির্বাচনে ২০০১ ও ২০১৪ সালের মতো সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের কোন ঘটনা ঘটবে না। এ বিষয়ে সকলেই আগে থেকে তৎপর হবেন এবং সন্ত্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই বলেও মনে করেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্যপরিষদের এই নেতা। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা যেন না ঘটে, সেজন্য সতর্ক থাকার কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দলগুলোর ইশতেহার প্রসঙ্গে রানা দাশগুপ্ত বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস কঠোরভাবে দমন করার অঙ্গীকার করতে হবে। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস রোধে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন, ‘জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন’ এবং ‘সংখ্যালঘু কল্যাণ মন্ত্রণালয়’ গঠনের দাবিও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করব, নির্বাচনী ইশতেহারে রাজনৈতিক দলগুলো এসব দাবি পূরণের ঘোষণা থাকবে।’ এছাড়া সরকারী চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য অন্তত ১৫ শতাংশ এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সন্তানদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী ৫ শতাংশ কোটা রাখার দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’, পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তিকরণ আইন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন আইন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিও দলগুলো ইশতেহারে রাখার আহ্বান জানানো হয়। রানা দাশগুপ্ত নারীর সমঅধিকার ও মর্যাদা রক্ষার জন্য যুগোপযোগী নারীনীতি প্রণয়ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সংস্কৃতি নীতি প্রণয়ন, মন্ত্রিপরিষদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতা অনুযায়ী সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে প্রতিনিধিত্ব রাখার দাবিও জানান। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান রাখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দুই বা ততোধিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ২০২৪ সালের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে গণহত্যাকারীদের সংগঠন এবং পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীকে জঙ্গী মৌলবাদীদের ‘গডফাদার’ দল অভিহিত করে দলটি নিষিদ্ধের দাবি জানান রানা দাশগুপ্ত। সংবাদ সম্মেলনে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, এসব দাবি নিয়ে আমরা দীর্ঘকাল ধরে আন্দোলন করে আসছি। বিভিন্ন সময় সরকারের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি, কাগজপত্র দিয়েছি। সরকার বলেছে এসব দাবির বিষয়ে বিবেচনা করবে; কিন্তু আমরা চাই এসব দাবি যেন নির্বাচনের ইশতেহারে থাকে।’ তিনি বলেন, ২৭ বছর ধরে আমরা বলছি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যারা একাত্তরে পাকিস্তানের সঙ্গে গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং যারা ধর্মের নামে রাজনীতি করে তাদের নিষিদ্ধ চাই। সংবাদ সম্মেলনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, সব দল যেন সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে।’ এ সময় তিনি নির্বাচনের সময় ধর্মীয় স্থানগুলো যেন নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করা না হয়, সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান।
×