ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আর বাকি ২৯ দিন, ইসির জোর প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৩০ নভেম্বর ২০১৮

আর বাকি ২৯ দিন, ইসির জোর প্রস্তুতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর বাকি আছে মাত্র ২৯ দিন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যে কমিশনের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতিও গুছিয়ে আনা হয়েছে। নির্বাচনে প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা সম্পন্ন করেছেন। আগামী ২ ডিসেম্বর রবিবার প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে কমিশনের ব্যস্ততা ততই বাড়ছে। কমিশন আশা করেছিল, এবারের নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক হবে। নির্বাচন সামনে রেখে কমিশনে এই দুই আশাই ইতোমধ্যে পূরণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। তিনি বলেন, সব দল নির্বাচনে অংশ নেয়ায় সারাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এদিকে ইসি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সব দলের প্রার্থীই এবারের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। তবে কোন দলের পক্ষেই তিন শ’ আসনে প্রার্থী দেয়া হয়নি। ২৬৫ আসনে আওয়ামী লীগ এবং ২৯৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন জমা পড়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ২৮৩ এবং বিএনপির ৬৯৬ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। এছাড়া জাতীয় পার্টির ২১০ আসনে প্রার্থিতা জমা পড়েছে ২৩৩ জনের। ইসি সচিব বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, মনোনয়নপত্র জমার সংখ্যা ১১টি বেড়ে মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৭ জনে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী রয়েছে ২ হাজার ৫৬৯। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৪৯৮ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ইসি সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ ইসির নিবন্ধিত ৩৯ দলই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। নির্বাচনে সব দল আসায় কমিশন যেমন আশা করছে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। গত ৮ নবেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকে মনোনয়নপত্র জমার শেষদিন পর্যন্ত নির্বাচন কেন্দ্র করে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এর বিপরীতে প্রার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা সম্পন্ন করেছেন। এ সময় দলের কর্মী-সমর্থকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মনোনয়নপত্র জমায় অংশ নিয়েছেন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে যেমন কোন সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি তেমনি কমিশনের বেঁধে দেয়া আচরণবিধিও কেউ লঙ্ঘন করেনি। এ কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা বলেছেন, বিশ্বাস করার সময় এসেছে যারা রাজনীতি করবেন, নির্বাচনে প্রার্থী হবেন তারা আচরণবিধি মেনে চলবেন। গত বুধবার সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এতে ৩শ’ আসনে ৩ হাজার ৫৬ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এবারই প্রথম অনলাইনে প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমায় সাড়া মেলেনি। প্রার্থীরা নিজে গিয়ে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমেই তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। পরিবেশ সুষ্ঠু থাকায় কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির আশঙ্কা না থাকায় প্রার্থীরা অনলাইনের ওপর নির্ভর না করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির হয়েই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ইসি সচিব জানান, এবার অনলাইনে মাত্র ৩৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এর মধ্যে ২৩টি মনোনয়নপত্র যথাযথভাবে দাখিল করা হয়েছে। আটটি মনোনয়নপত্র ব্লাঙ্ক জমা পড়েছে। এছাড়া আটটিতে শুধু বায়োডাটা জমা দেয়া হয়েছে। সারাদেশে ৩শ’ আসনের মধ্যে ঢাকার ১৭ আসনে সবচেয়ে বেশি ২৭ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কমিশনের পক্ষ থেকে একের পর এক উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কমিশনে ডেকে এনে আলাদা ব্রিফ করা হয়েছে। এ সময় দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনে যারা প্রিসাইডিং অফিসার থেকে শুরু করে ভোট গ্রহণের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবেন তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে প্রিসাইডিং অফিসারদের যারা প্রশিক্ষণ দেবেন সেই প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ। আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, কমিশন আশা করেছিল এবারের নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে। নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং প্রতিযোগতামূলক। কমিশনের দুই আশা ইতোমধ্যে পূরণ হয়েছে। তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ৩শ’ নির্বাচনী আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া প্রার্থীর কেউ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি। আগামী ৩০ ডিসেম্বর একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় সিইসি বলেন, এখন বিশ্বাস করার সুযোগ ও সময় এসেছে যে এ দেশে যারা রাজনীতি করেন, যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন তারা নির্বাচনের আইন, আচরণবিধি মেনে করবেন। আপনারা মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করবেন তাদের সাহায্য, সহযোগিতা করার মাধ্যমে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। বিশ্বাস করি এবং আস্থা রাখি সে রকম একটা পরিবেশ দেশে সৃষ্টি হয়েছে। সেটা সামনে রেখে আপনাদের কারণে তাদের আশা এবং প্রত্যাশা যাতে কখনও ব্যাহত না হয় সেদিকটা লক্ষ্য রেখে দায়িত্ব হবে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের জানানো এবং বোঝানো। তিনি তফসিল ঘোষণার পর থেকে মনোনয়নপত্র জমার শেষদিন পর্যন্ত নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। বলেন, অত্যন্ত প্রভাবশালী ও সম্মানী প্রার্থীরা বুধবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। টেলিভিশনে সেই দৃশ্য দেখেছেন। মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি। চারজন, পাঁচজন, সাতজনের বেশি লোক নিয়ে ভেতরে ঢোকেনি। বাইরে হয়ত সমর্থক কিছু বেশি ছিল। সেটা থাকতেই পারে। একজন প্রার্থী সমর্থক নিয়ে আসতেই পারেন। তাও সেটা মোটরশোভাযাত্রা বা গাড়ি শোভাযাত্রা বা শোডাউনের পর্যায়ে পড়ে না। সিইসি বলেন, সারা দেশে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে কোথাও কোন গ-গোল হয়নি। বাধা দেয়া হয়নি। একটি আনন্দঘন পরিবেশে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে বিভিন্ন দল-মতের লোকজনের মধ্যে যখন দেখা হয়েছে, নিজেদের সঙ্গে কোলাকুলি করেছে। এটাই হলো গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হল। প্রার্থিতা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপগুলোও এসব আচরণবিধি মেনে চললে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। এখন বিশ্বাস করার সুযোগ এসেছে, যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন, তারা নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে এবং নির্বাচনী কর্মকর্তারা যারা মাঠে কাজ করবেন তাদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। সেই পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ রাখার নির্দেশনা দিয়ে প্রশিক্ষণ সম্পর্কে সিইসি বলেন, প্রায় সাড়ে তিন হাজার লোককে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা হবে। এখন প্রশিক্ষণ যারা পাবেন তারা মাঠে গিয়ে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করলে নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। অবশ্যই নির্বাচনে ভোটারদের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। যারা প্রার্থী তাদের পরিচয় তারা শুধুই প্রার্থী। তাদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় বা ব্যক্তি পরিচয় থাকবে না। তিনি একটি প্রতীকের প্রার্থী হবেন। প্রার্থীদের সবার সঙ্গেই সমান আচরণ করতে হবে। সিইসির সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সাক্ষাত ॥ এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার এ্যালিসন ব্লেক। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাত শেষে দুপুর সোয়া ১২টায় ইসি থেকে বের হয়ে যান তিনি। তবে এ সময় মিডিয়ার সঙ্গে কোন কথা বলেননি ব্রিটিশ হাইকমিশনার। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন আগমী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে।
×