ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফের ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা ;###;মূল বিষয়সহ অগ্রাধিকার খাতগুলো থাকবে নির্বাচনী ইশতেহারে ;###;দশ মেগা প্রকল্প আরও বিস্তৃত করা হবে ;###;তরুণ সমাজকে কাজ দিতে কর্মসংস্থানমুখী প্রকল্প

দারিদ্র্যশূন্য দেশ ॥ প্রবৃদ্ধি দুই ডিজিটে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩০ নভেম্বর ২০১৮

দারিদ্র্যশূন্য দেশ ॥ প্রবৃদ্ধি দুই ডিজিটে

এম শাহজাহান ॥ আগামী নির্বাচনে আবার দায়িত্ব পেলে পাঁচ বছরে প্রবৃদ্ধি দুই ডিজিটে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই লক্ষ্য স্থির করেই দেশের পরবর্তী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। পরিকল্পনার মূল বিষয়সহ অগ্রাধিকার খাতগুলো থাকবে নির্বাচনী ইশতেহারে। দলের একাধিক সূত্রে এই পরিকল্পনার কথা জানা গেছে। আওয়ামী লীগের বিশতম জাতীয় সম্মেলনে দশটি খাত অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার পরিচালনার কর্মকৌশল গ্রহণ করা হয়েছিল। এর সঙ্গে গ্রহণ করা হয় আরও কিছু উন্নয়ন প্রকল্প। ভবিষ্যতে এসব প্রকল্প আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। দেশের তরুণ সমাজকে কাজ দিতে গ্রহণ করা হবে কর্মসংস্থানমুখী প্রকল্প। দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বেশকিছু কর্মসূচী গ্রহণ করবে তারা। গত দশ বছরের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। দশ বছরে দেশের সকল খাতে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ এখন বিশ্ববাসীর কাছে উন্নয়ন বিস্ময় হয়ে উঠেছে। নির্বাচনী প্রচারে সরকারের এই অর্জন তুলে ধরা হবে। এছাড়া অবকাঠামো উন্নয়নে দশ মেগা প্রকল্প এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দশ বিশেষ উদ্যোগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার কৌশল নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার চূড়ান্ত করে আনা হয়েছে। শীঘ্রই ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির আহ্বায়ক ও দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, নির্বাচনী ইশতেহারের মূল লক্ষ্য হবে উন্নয়নের মহাসড়কের গ আরও বেগবান ও ত্বরান্বত করা। গত দশ বছরে ধারাবাহিকতা থাকায় সরকারের অনেক অর্জন রয়েছে। তিনি বলেন, আগামীতে আমাদের চ্যালেঞ্জ হবে র্দুীবিষয়ে কী কৌশল হবে, আধুনক, জনবান্ধব পুলিশ কি ধরনের হবে, সেটা আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরার চষ্টা করব। এছাড়া দেশের তরুণ সমাজকে কাজ দিতে কর্মসংস্থানমুখী প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে মহাজোট সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে কি ধরনের চিন্তা-ভাবনা আছে সেগুলোও নির্বাচনী ইশতেহারে নিয়ে আসা হচ্ছে। জানা গেছে, সর্বস্তরে উন্নয়ন এবং সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার দশটি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে-সম্পূর্ণরূপে দারিদ্র্য বিমোচন এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অবসান, বিদ্যুত ও জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও আইসিটি খাত উন্নয়ন, দশ মেগা প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন, ব্লু-ইকোনমি-সমুদ্র সম্পদভিত্তিক উন্নয়ন, বেসরকারী খাত ও বাজার ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গণতন্ত্র ও কার্যকর সংসদ ও গণমুখী দক্ষ জনপ্রশাসন নিশ্চিত করা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার আশা করছে, এই দশ কর্মসূচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে ঘোষিত রূপকল্পের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। একই সঙ্গে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের রাষ্ট্রের কাতারে পৌঁছতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে দেশের সব উন্নয়ন হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় দক্ষিণ এশীয় টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সোনার বাংলা’ এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার অগ্রগতি অব্যাহত রাখা হবে। ‘রূপকল্প ২০২১’ সামনে রেখে ২০০৯ সালে উন্নয়নের যে অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল তার গতি ও পরিধি সরকারের তৃতীয় মেয়াদে আরও বেগবান করার কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জনকণ্ঠকে বলেন, গত ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পরই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল জনসেবা নিশ্চিত করা। এ কারণে জনসেবা নিশ্চিত করায় দেশের এত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের কাছ থেকে সেবা নিশ্চিত হওয়ার কারণে সাধারণ জনগণ এখন দেশের উন্নয়নে বড় অংশীদার হয়ে উঠছেন। সরকারের ধারবাহিকতা থাকলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতাও বজায় থাকবে। জানা গেছে, রূপকল্প-২১ এর ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেনÑ জাতিকে উপহার দেবেন একটি নতুন প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ‘রূপকল্প ২০৪১’। এ নতুন রূপকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও উন্নত জনপদ। বাঙালী হবে সারা বিশ্বের মাঝে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত জাতি। রূপকল্প-২১ এবং এসডিজি বাস্তবায়নের প্রয়াস সামনে রেখে উন্নয়ন ও সুশাসনের জন্য গৃহীত দশ অগ্রাধিকার খাত বাংলাদেশের ভবিষ্যত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচী প্রণয়ন সহায়ক হবে। দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান ॥ তরুণ সমাজকে চাকরি, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি এবং দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বেশকিছু কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নে দশ মেগা প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হলে বেসরকারী খাতে নতুন বিনিয়োগ বাড়বে। দেশে উদ্যোক্তা শ্রেণী তৈরি হবে, সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র। এ কারণে দেশে দ্রুত দশ মেগাপ্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচন করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো আওয়ামী লীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত লক্ষ্যের অন্যতম। এই লক্ষ্য অর্জনে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা এবং সমাজে ক্রমবর্ধমান আয়-বৈষম্য সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা আওয়ামী লীগের বিঘোষিত নীতি। ইতোমধ্যে হতদরিদ্রের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বিস্তৃত করা হয়েছে। ফলে দারিদ্র্য কমেছে ১০ শতাংশ। হতদরিদ্র, দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চলমান প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করা হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত প্রকল্প ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ আশ্রয়ন, গৃহায়ণ, আদর্শ গ্রাম ও ঘরে ফেরা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হবে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ॥ স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রোগমুক্ত জীবন যাপনের সুব্যবস্থা করা আওয়ামী লীগের ঘোষিত নীতি। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার কর্মসূচী আরও সুবিস্তৃত ও সুবিন্যস্ত করা হবে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা সার্ভিস প্রত্যন্ত গ্রাম, শহর, বস্তি ও নগরবাসীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হবে। এ জন্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন সহযোগী, এনজিও, বেসরকারী খাতসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে সাক্ষরতার হার শতভাগ করা হবে। ইতোমধ্যে শিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম অবকাঠামো প্রদান, শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, শিক্ষা ব্যবস্থার বিকেন্দ্রায়ণের লক্ষ্যে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে। সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদের অবসান ॥ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অর্জিত উন্নয়নের পথে এখন সবচেয়ে বড় বাধা আইনের শাসন, শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং জনজীবনের নিরাপত্তাবিনাশী বিএনপি-জামায়াত জোটের ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ। দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিএনপি-জামায়াত চক্র। গণতন্ত্রের নামে তারা অরাজকতা, পুড়িয়ে মানুষ হত্যাসহ শান্তি বিনাসী সকল অপকর্মে ইন্ধন যোগাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সুস্পষ্ট অবস্থান এসব সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আইনী পন্থায় যে কোন ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ কর্মকা- প্রতিহত করার জন্য আওয়ামী লীগ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধানের প্রাধান্য, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠন সুনিশ্চিত করা হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিনিয়োগ এবং জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখল, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হবে। বিদ্যুত ও জ্বালানি ॥ বিদ্যুত ও জ্বালানির ক্ষেত্রে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখা ও আরও দ্রুত করা হবে। বিদ্যুত ও জ্বালানি সমস্যা সমাধানে একটি দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত সার্বিক জ্বালানি নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে তেল, গ্যাস, কয়লা, জলবিদ্যুত, বায়োগ্যাস ও জৈবশক্তি, বায়ুশক্তি ও সৌরশক্তিসহ জ্বালানির প্রতিটি উৎসের অর্থনৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। আঞ্চলিক জ্বালানি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ইতোমধ্যে ক্র্যাশ প্রোগ্রামের আওতায় গৃহীত বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বেসরকারী খাতে বৃহৎ বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া পুরনো বিদ্যুতকেন্দ্র মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও ওভারহোলিংয়ের ব্যবস্থা করে বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ২০২১ সালে মাথাপিছু বিদ্যুত উৎপাদন ৫১৪ কিলোওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বর্তমানে ৩৭১ কিলোওয়াট। ২০২১ সালে বিদ্যুতের আওতা ৯৬ শতাংশে উন্নীত করা হবে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় ২০২১ সালে বিদ্যুত উৎপাদনে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার মেগাওয়াট। নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ভারত-বাংলাদেশে-মিয়ানমারের ত্রি-দেশীয় গ্যাস পাইপ লাইনে অংশগ্রহণ করা হবে। তথ্যপ্রযুক্তি সম্প্রসারণ ॥ শেখ হাসিনার অঙ্গীকার অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় দ্রুতগতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের শহরে গ্রামে ভূমিতে আকাশে অন্তরীক্ষে সর্বত্র ডিজিটাল প্রযুক্তি পৌঁছে গেছে এবং সম্প্রসারিত হচ্ছে। এর ফলে একদিকে যেমন মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ছে, তেমনই অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক অর্থনৈতিক, শিক্ষা-সংস্কৃতি সকল কর্মকা-ে এসেছে গতি, বাড়ছে দক্ষতা। আওয়ামী লীগ এ অভূতপূর্ব তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের সক্রিয় সাথী এবং এর উত্তরোত্তর সম্প্রসারণে দলীয়ভাবে সমর্থন অব্যাহত রাখবে। দশ প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন ॥ দেশের উন্নয়নের চাকায় নতুন গতি সঞ্চারের জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রকল্পের প্রয়োজন হয়। অর্থনীতির ভাষায় যাকে ‘সজোরে ধাক্কা’ (বিগপুশ) বলা হয়। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই দশটি অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ স্বপ্নের পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা দ্রুত গণপরিবহন, এলএনজি ফ্লোটিং স্টোরেজ এ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট, মাতারবাড়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ এবং চট্টগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৯.৫ কিমি রেললাইন স্থাপন। আওয়ামী লীগ এ সকল মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ ও ভূমিকা পালনে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। ব্লু-ইকোনমি-সমুদ্র সম্পদভিত্তিক উন্নয়ন ॥ শেখ হাসিনার কূটনেতিক সাফল্যের সুবর্ণ ফসল মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি। এর ফলে মিয়ানমারের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের ২০০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে সমুদয় অর্থনৈতিক অঞ্চল ও তার বাইরে মহাদেশীয় বেষ্টনী এবং একইভাবে ভারতের সঙ্গে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহাদেশীয় বেষ্টনীর মধ্যে সকল প্রকার সম্পদের ওপর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সমুদ্রখাত, যা ব্লু-ইকোনমি নামে অভিহিত, বাংলাদেশের উন্নয়নে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সমুদ্রবন্দর, জাহাজ নির্মাণ, নৌ চলাচল, সাগরে মৎস্য চাষ, জলজ উদ্ভিদ, তেল গ্যাস, খনিজ সম্পদ আহরণ, সমুদ্রে জেগে উঠা নতুন চর, সামুদ্রিক পর্যটন শিল্প ইত্যাদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। বেসরকারী খাত ও বাজার ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ॥ উন্নয়নের সক্রিয় অংশীদার হিসেবে বেসরকারী খাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিখাত যাতে নির্বিঘেœ ব্যবসা-বাণিজ্য ও পুঁজি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জন, আয়বর্ধন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে, সেজন্য আওয়ামী লীগ সবসময় নীতিগত সমর্থন ও পরামর্শ দিয়ে আসছে। বেসরকারী খাতের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার লাভের জন্য বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত ঋণদান, কর ও শুল্কনীতির প্রতি সমর্থন অব্যহত থাকবে। ইতোমধ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ, ও বিদ্যুত ব্যবস্থায় যে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে, তাকে আরও ত্বরান্বিত করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা ॥ সুশাসন প্রতিষ্ঠাই হবে আওয়ামী লীগের অন্যতম সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সুশাসন ছাড়া অর্থনৈতিক মুক্তি একেবারেই অসম্ভব। সুশাসন প্রতিষ্ঠার চারটি পূর্বশর্ত যার অন্যতম হচ্ছে দুর্নীতি দমন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এ বিষয়ে দলীয় কার্যক্রম ইতোমধ্যেই তুলে ধরা হয়েছে। অন্য তিনটি শর্ত হচ্ছে-আইনের শাসন ও ন্যায় বিচারের নিশ্চয়তা বিধান, রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে গণতন্ত্রচর্চা নিরঙ্কুশ করা এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধে জনহিতে নিবেদিত নির্বাহী বিভাগ প্রতিষ্ঠা এবং একটি জবাবদিহিতামূলক, পেশাদারি ও দক্ষ জনপ্রশাসন গড়ে তোলা। গণমুখী দক্ষ জনপ্রশাসন ॥ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাষ্ট্র পরিচালনার অন্তরায়সমূহ দূর করেছে। ইতোমধ্যে গণমুখী দক্ষ জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।
×