ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্মার্ট সিটি

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৩০ নভেম্বর ২০১৮

স্মার্ট সিটি

এনালগ জীবন ছেড়ে ডিজিটালে উন্নীত যখন জীবন, তখন সবকিছুতেই আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া আনাই সঙ্গত। জীবনযাপনে তাই নতুনত্ব এসে ধরা দিতে বাধ্য তখন। ভীত বাঙালী, অলস বাঙালী বলে যে নিন্দামন্দ এতদিন জুটে ছিল বাঙালীর কপালে, তা খসে পড়ে যাচ্ছে ক্রমশ। তথ্যপ্রযুুক্তির কল্যাণে সেই বাঙালী এখন বিশ্ব পরিম-লে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে পারছে সমৃদ্ধির সোপান ধরে। সবখানে প্রয়োজন এখন এনালগমুক্ত পথ ও পদ্ধতির সঙ্গে সমান্তরালে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যাভিসারী হওয়া। নগর জীবনে বসবাসরত বাঙালীর জীবন ধারায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডিজিটাল ব্যবস্থা। চলাফেরা, বসবাস, সৃজনশীলতা, সৃষ্টিশীলতার মধ্যে ডিজিটাল ব্যবস্থা এসে পাল্টে দিচ্ছে অতীতের প্রায় সবকিছু। আর এগিয়ে যাওয়ার পথ হচ্ছে ক্রমশ উজ্জ্বল। টেলিফোন তথা মোবাইল সেট থেকে টেলিভিশনÑ সবখানে এখন স্মার্ট হয়ে ওঠার প্রবণতা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। শহর, নগর, বন্দর ও গ্রামগঞ্জে তা প্রসারিত হয়ে বাঙালীর জীবন ধারায় আধুনিকতার পরশ ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু নগর যদি না হয় স্মার্ট, তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে স্মার্টনেস বিরূপতাকেই ধারণ করবে। সুতরাং নগর পরিকল্পনায় সর্বোত্তম প্রযুক্তির ব্যবহারের বিকল্প নেই। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মহানগর অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবহন সমস্যার শিকার হচ্ছে। এই সমস্যার অন্যতম কারণ অবশ্যই অপরিকল্পিত নগরায়ন, পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলা গেলে নাগরিক জীবন হতো আরও উন্নত এবং বিকাশমান। এ জন্য প্রয়োজন হচ্ছে ভৌগোলিক তথ্য পদ্ধতি বা জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন (জিআইএস) প্রযুক্তির ব্যবহার। নাগরিক সমস্যার সমাধানে ‘স্মার্ট সিটি’ গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা বলছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তারা মনে করেন, জিওস্প্যাশিয়াল প্রযুক্তির সর্বোত্তম প্রয়োগের মাধ্যমে নগর উন্নয়ন পরিকল্পনাকে স্মার্ট করার জন্য সমসাময়িক নগর সমস্যাগুলোর দিকে লক্ষ্যস্থির করার বিকল্প নেই। এই কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমেই পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট বহুবিধ সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এ ছাড়াও ঢাকা শহরের ক্ষেত্রে সিসিটিভি ফুটেজের জিআইএস বিশ্লেষণের মাধ্যমে অপরাধ দমনসহ নানাবিধ সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধান করার সম্ভাবনার বিষয়টি ইতোমধ্যে সামনে উঠে এসেছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম শহরের ভূমিকা সংবেদনশীলতা, মডেলিং এবং এর ঝুঁকি মূল্যায়ন, চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকায় ভূমিধস একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যার ফলে প্রতিবছর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে এলাকার ঝুঁকিপ্রবণ ওয়ার্ডগুলো জিআইএসের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে। গবেষণা থেকে উঠে এসেছে আঠারো ভাগ এলাকা উচ্চ ঝুঁকিপ্রবণের মধ্যে রয়েছে। জিআইএসভিত্তিক কৌশলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরের উপকূলীয় তটরেখার স্থানান্তর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বিগত চল্লিশ বছরে সময় ও অবস্থান সাপেক্ষে চট্টগ্রাম শহরের উপকূলীয় তটরেখা পরিবর্তন হয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, তটরেখা ক্রমান্বয়ে ভূমির দিকে সরে আসছে। এর পরিবর্তনের হার প্রতিবছরে উত্তর-দক্ষিণ মধ্য পার্শ্বে যথাক্রমে দুই দশমিক ৫৬ মিটার, ছয় দশমিক এক মিটার এবং চার দশমিক ৩৭ বর্গমিটার। সর্বোপরি মোট ১২ দশমিক ৬৬ বর্গমিটার ভূমি হারিয়েছে গত চল্লিশ বছরে। উপকূলীয় এলাকায় আরও ১১ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটার ভূমি হারাবে। এই অবস্থা রোধে দ্রুত পরিকল্পনা গ্রহণের বিকল্প নেই। নগরগুলোতে আবাসন খাতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার সুফল বয়ে আনার সম্ভাবনা অত্যধিক। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা তথা ড্যাপ থেকে শুরু করে সব মহাপরিকল্পনা ও ভূমির শ্রেণীবিন্যাস জিআইএসের মাধ্যমে হচ্ছে। এর মাধ্যমে কোন প্লট কি অবস্থায় আছে, তা মুহূর্তেই জানা যাচ্ছে। এর ফলে প্লট নিয়ে প্রতারণা বা জালিয়াতি বন্ধ হচ্ছে। স্মার্ট সিটির মূলে হচ্ছে প্রযুক্তি ও ডেটা। এক্ষেত্রে এ্যাপভিত্তিক পরিবহনের কথা বলা যায়। ঢাকা শহরে গাড়ি আগেও ছিল। এখন শুধু প্রযুক্তি ও ডেটার কারণে পরিবহন ব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। স্মার্ট সিটি গঠনে স্মার্ট জনসাধারণ কার্যকর ভূমিকা রাখবে- এই আশাবাদ তীব্র।
×