ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সব্যসাচী দাশ

শেখ হাসিনার কল্যাণে আমজাদ হোসেনের চিকিৎসা

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২৯ নভেম্বর ২০১৮

শেখ হাসিনার কল্যাণে আমজাদ হোসেনের চিকিৎসা

আমজাদ হোসেন। বেশ কয়েক দিন ধরে দেশের টিভি-পত্রপত্রিকায় নামটি বিভিন্ন শিরোনামে অনাবরত আসছে। এখন কথা হলো, যার খবর আমরা দেখছি বা পড়ছি সে কোন আমজাদ হোসেন। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে যে আমজাদ হোসেন! নাকি নন্দিত চলচ্চিত্র নির্মাতা, বরেণ্য লেখক আমজাদ হোসেন। নিশ্চয়ই নতুন প্রজন্মের অনেকই শিল্প-সংস্কৃতি ভুবনের এই গুণী মানুষটির অসামান্য অবদানের কথা পুরোপুরি ওয়াকিফহাল নয়। আমজাদ হোসেনের জন্ম ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট। জামালপুর শহরের উপকণ্ঠে। যদিও আমারা তাকে একজন চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে জানি। তবে তার শৈশবের পরিচয় কিন্তু অন্য আমজাদ হোসেনের সন্ধান দেয়। ছোট বেলা থেকে বইপড়া কবিতা লেখার প্রতি তার ছিল প্রবল অনুরাগ এমনটাই জানা যায় তার অতীত ঘেটে। ছোট্ট একটা স্মৃতিকথা উল্লেখ করা যাক। ১৯৬৫ সাল। মেট্রিক পাস করে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর কাউকে না জানিয়ে গোপনে কলকাতায় ‘দেশ’ পত্রিকায় একটি কবিতা লিখে পাঠান। কবিতা প্রকাশের আগেই দেশ পত্রিকা থেকে সম্পাদক সাগরময় ঘোষ আমজাদ হোসেনকে একটি চিঠি পাঠান যেখানে লেখা ছিল- ‘কল্যাণীয়েষু, পুনশ্চ, এই যে তুমি কেমন আছে, কী অবস্থায় আছ জানি না। তোমার কবিতা পেয়েছি। তোমার হাতে/ কলমে সরস্বতীর আশীর্বাদ আছে। আমার এই পত্র পাওয়া মাত্রই তুমি কলকাতায় চলিয়া আস। তোমার থাকা-খাওয়া-শিক্ষা সমস্ত কিছুর ভার আমার ওপরে। শুভেচ্ছান্তে সাগরময় ঘোষ।’ বয়সে ছোট আমজাদ হোসেন ভয়ে পরিবারকে বলতে পারেনি, সে কবি হতে, লেখক হতে কলকাতায় যাবে। সে দিন যদি আমজাদ হোসেন সাগরময় ঘোষের লেখা চিঠির কথা রাখতেন তাহলে আজ হয়ত তাকে অন্য শিরোনামে জানতে হতো। যাই হোক তিনি নিজেকে এবং তার জন্মভূমিকে নিরাস করেনি। তার বর্তমান দীর্ঘ ৭৬ বছরের জীবন আমাদের শিল্প-সাহিত্যে অনন্য অবদান রেখে চলেছে। সিনেমা, নাটক, অভিনয়, গান রচনা এবং সর্বোপরি স্বনামে খ্যাত একজন লেখক আমজাদ হোসনকে এ দেশের মানুষ খুব কাছ থেকে পেয়েছে। আমজাদ হোসেনও খুব কাছ থেকে এ দেশের মাটি মানুষকে গভীরভাবে অনুভব করেছেন। বিশেষ করে তার নির্মিত বেশিরভাগ চলচ্চিত্রে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই কিভাবে সময় এবং সত্যকে তিনি ক্যামেরাবন্দী করেছেন। ‘ভাত দে’ ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ‘দুই পয়সার আলতা’ ‘নয়নমণি’ ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’সহ প্রভৃতি সিনেমাগুলো তার নামকে মানুষের কাছে বড় আপন করে তুলেছে। সিনেমা পরিচালনার পাশাপাশি তার লেখা গান আজ এবং আগামী তাকে বাঁচিয়ে রাখবে। বিশেষ করে তার লেখা- আছেন আমার মোক্তার/ আছেন আমার ব্যারিস্টার, কোউ কোন দিন আমারে তো কথা দিল না, একবার যদি কেউ ভালবাসত, এমন তো প্রেম হয়, কত কাঁদলাম কত সাধলাম, বাবা বলে গেল... প্রভৃতি গানের কথা উল্লেখ করলে তাকে নিয়ে কেবল এই পরিচয়ে আলাদা লেখা লিখতে হবে। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার : একুশে পদক। কথাসাহিত্য অসামান্য অবদানের জন্য পেয়েছেন, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ কত না জাতীয় পুরস্কার। গত রবিবার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হলে অসুস্থ আমজাদ হোসেনের খবর আমরা জানতে পারি। কিন্তু আমরা তো এই আমজাদ হোসেনের খবর জানতে চাই না। আমরা তো ওপরে বর্ণিত নন্দিত মানুষটিকে চিনি এবং তাকেই ফিরে পেতে চাই। মানুষটির অসুখের খবর পেয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী তার দুই ছেলেকে ডেকে জানতে চান, আমজাদ ভাইয়ের কি অবস্থা? তার চিকিৎসার সব ব্যবস্থা আমরা করেছি। আমজাদ হোসেনের চিকিৎসা এবং প্লেন ভাড়া বাবদ ৪২ লাখ টাকা তার পরিবারের কাছে প্রদান করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অসুস্থ আমজাদ হোসেনের ডাক্তারি সব কাগজপত্র থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, তার অসুখ বর্ণনা করে। সেখানকার চিকিৎসকরা গ্রীন সিগনাল দিলেই তাকে নিয়ে যাওয়া হবে। ওই দূর দেশে। সবশেষে বলব, তার মতো একজন মানুষের অনুপস্থিতি আমাদের কাছে অপূরণীয় শূন্যতা। কারণ আমাদের চলচ্চিত্র তথা শিল্প জগতে এখন আর কোন আমজাদ হোসেন বর্তমান নেই। তাই তো বলি ফিরে আসুন- সবার প্রিয় আমজাদ হোসেন।
×