ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Hasina : A Daughters Tale;###;সাজ্জাদ কাদির

একটি হার না মানা জীবনের গল্প

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৯ নভেম্বর ২০১৮

একটি হার না মানা জীবনের গল্প

যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে- এ রকম একটি কথা প্রচলিত আছে আমাদের সমাজে। এই কথাটি শতভাগ প্রযোজ্য যার জন্য তিনি আর কেউ নন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একটি ডকু চলচ্চিত্রের দৃশ্য শুরু হয়েছে রান্নাঘর থেকে। আর এই রান্নাঘরে যিনি রাঁধুনী তিনি বাংলাদেশে এই মুহূর্তে বিকল্পহীন একজন মানুষ। সত্যিই তিনি রাঁধতেও জানেন এবং চুলও বাঁধতে জানেন। তারই জীবনের বয়ান ঐধংরহধ : অ উধঁমযঃবৎং ঞধষব. আজকে যাকে আমরা তাঁর বিকল্প হিসেবে খুঁজে পাচ্ছি না সেই মানুষটি হঠাৎ রাতারাতি গড়ে ওঠেননি। একটি দেশের স্থপতির সন্তান হিসেবে সবকিছু তৈরিও পেয়ে যাননি। তার বাবা জীবনের নানা পথ মাড়িয়ে যেভাবে আমাদের স্বাধীনতা উপহার দিয়েছেন ঠিক তেমনি একবারে শূন্য থেকে শুরু করে তিনিও আমাদের একটি উন্নত বাংলাদেশ উপহার দেয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। জীবনে নানা বাঁক পেরিয়ে তিন আজকের পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছেন। এই বাঁকপূর্ণ জীবনের গল্পই অসাধারণ মুন্সিয়ানায় ফুটে উঠেছে Hasina : A Daughters Tale ডকু চলচ্চিত্রে। ৭০ মিনিটের এই চলচ্চিত্রে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় দর্র্শককে আটকে রাখার এক আসাধারণ পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন নির্মাতা। দর্শক কখনও চোখের জলে ভেসেছে আবার কখনও ছোট বোন রেহানার কণ্ঠে হাসু আপার আলসেমির গল্প শুনে হেসেছে। আবার প্রেরণা পেয়েছে তরুণ বয়সের সেই আলসেমিতে ভরা হাসু আপা এখনকার একজন কর্মবীর এ কথা শুনে। দুই বোনের স্মৃতিচারণ এবং ওই সময়গুলোর ভিডিও ও স্টিল ফুটেজে জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছে প্রতিনিয়ত রং বদলানো এক জীবনের জার্নি। দৃশ্যায়নের সঙ্গে সঙ্গে শেখ রেহানার জবানীতে, ‘বাংলাদেশের বাঙালীরা আমার বাবাকে মারবে এটা আমাদের ধারণারও বাইরে ছিল।’ এই কথা শুনে আবেগ ধরে রাখা যায় না। চোখের জলে ভাসতে হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর শেখ হাসিনার যে কষ্টের জীবন তা সত্যিই আমাদের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম ট্র্যাজেডি। এই ট্রাজিক জীবনের কাহিনী সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে এই চলচ্চিত্রে। ডকু চলচ্চিত্রটিতে একজন শেখ হাসিনা কখনও কন্যা, কখনও বোন, কখনও মা, আবার কখনও নানি-দাদির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। আবার নির্যাতিত নিপীড়িত আমজনতার অবিসংবিদিত নেতা হিসেবেও তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়। রক্ত মাংসে গড়া একজন মানুষ হিসেবে পরিবারের সঙ্গে হাসি, আনন্দ, আড্ডা কিংবা খেলাধুলায় তাঁকে দেখা যায়। কখনও তিনি পুরো পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় হাজির হয়েছেন। ভ্যানে চড়ে নাতি-নাতনিদের সঙ্গে ঘুরতে দেখা যায়। আবার তাঁর জবানিতে এই উচ্চারণও শুনতে পাওয়া যায় যে, ‘কীভাবে ভ্যানে চড়তে হয় তা আমার জানা আছে।’ এই একটি বাক্যই প্রকাশ করে যে একজন শেখ হাসিনা কতটা মাটির কাছাকাছি মানুষ। টুঙ্গিপাড়ার স্মৃতিও বর্ণনা করেছেন শেখ হাসিনা। টুঙ্গিপাড়ার নয়নাভিরাম মায়াময় ছবির মতো দৃশ্য সীমিত আকারে তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। তিনি বলেছেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম জায়গা টুঙ্গিপাড়া এবং রাজনীতি থেকে অবসরের পর টুঙ্গিপাড়াতেই থাকতে চান। সব মিলিয়ে জীবনের পরতে পরতে বাঁকপূর্ণ জীবনের একটি অসাধারণ বয়ান ঐধংরহধ : অ উধঁমযঃবৎং ঞধষব. শুধু প্রশংসা নয়, একজন খুঁত খুঁতে দর্শক হিসেবে দু-একটি সমালোচনাও করতে চাই। পুরো ডকুমেন্টারিতে উপস্থাপিত শেখ হাসিনার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আগের ঘটনা পরে আবার পরের ঘটনা আগে উপস্থাপন করা হয়েছে। ঘটনাগুলো দৃশ্যায়নের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করলে আরও প্রাণবন্ত হতে পারত। শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ার যে অপরূপ সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন সেই সৌন্দর্য এবং ঝকঝকে আলোকিত টুঙ্গিপাড়াকে আমরা ডকুতে দেখতে পাইনি। একজন দর্শক হিসেবে এখানটাই হতাশ হয়েছি। টুঙ্গিপাড়াকে এই সময়ে এসে বৃষ্টিভেজা, অন্ধকার, কয়াশাচ্ছন্ন আমরা দেখতে চাই না। কারণ এখান থেকেই দেশের সবচেয়ে আলোকিত মানুষগুলোকে আমরা পেয়েছি। যদিও ডকু চলচ্চিত্রকে কোন ফ্রেমে বাঁধানো যায় না তার পরেও এটি দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে যেন এক উদ্দেশ্যহীন যাত্রা করেছেন নির্মাতা। নির্মাণ সময়ে নির্মাতা হয়ত কল্পনাও করতে পারেননি এটি কী হতে যাচ্ছে। নির্মাণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত পুরো টিমের এক আসাধারণ মেলবন্ধন চোখে পড়েছে ডকু চলচ্চিত্রটিতে। বিশেষ করে চলচ্চিত্রটির আবহ সঙ্গীত এক অন্য রকম মুগ্ধতায় আমাদের মন ভরে দেয়। এর সঙ্গীত পরিচালক সত্যিই বাঙালীর নানা টানাপোড়েনের জীবনে সাধ না মেটানো, আশা না পূরণ হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। সর্বোপরি ঐধংরহধ : অ উধঁমযঃবৎং ঞধষব আমাদের সবার জীবনে হার না মানা জীবনের এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
×