ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গোয়েন্দা রিপোর্টে আশঙ্কা

ভোটের প্রচার শুরু হলে জামায়াতের মদদে জঙ্গী তৎপরতা

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২৯ নভেম্বর ২০১৮

ভোটের প্রচার শুরু হলে জামায়াতের মদদে জঙ্গী তৎপরতা

শংকর কুমার দে ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রচারাভিযান শুরু হলে নাশকতা, নৈরাজ্যের সুযোগ নিতে পারে জঙ্গী গোষ্ঠী। জঙ্গীদের গোপনে এই সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে জামায়াত-শিবির। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সংগঠন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াতের সঙ্গে জঙ্গী সম্পৃক্ততা দীর্ঘদিনের। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি গণফোরাম, জাসদ, ঐক্য প্রক্রিয়া একই প্ল্যাট ফরমে, একই সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি সংশয়-সন্দেহে এখন প্রশ্নবিদ্ধ। এটা এক অশুভ আলামতের ইঙ্গিত বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ-আইসিজির এক প্রতিবেদনে এ ধরনের নির্বাচনী তৎপরতা সামনে রেখে নাশকতা, নৈরাজ্যসহ জঙ্গী গোষ্ঠীর তৎপরতা বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ-আইসিজির দেয়া প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনে জামায়াতের অংশগ্রহণে জঙ্গীদের তৎপরতায় এক রহস্যময় প্রশ্নের অবতারণা হওয়ার বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন আল-বদর, রাজাকার, আল-শামস একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির মানুষজনকে সামনে পেলেই হত্যা করত। অপরপক্ষে মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি নেতাকর্মীরা স্বাধীনতার যুদ্ধের সময়ে জামায়াতে ইসলামী ও তার নেতৃত্বাধীন আল-বদর, রাজাকার, আল-শামসসহ স্বাধীনতার শত্রুদের সামনে পেলেই হত্যা করার শপথ নিয়েছিল। এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে যেই জামায়াতের নেতাদের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে সেই স্বাধীনতার শত্রু জামায়াতের সঙ্গে একই প্লাট ফরমে একই সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, আ স ম রবের নেতৃত্বাধীন জাসদ, ঐক্য প্রক্রিয়ার মাহমুদুর রহমান মান্না, কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিরা। এখানেই গোয়েন্দা সংস্থার যত সন্দেহ, সংশয় ভরা নানা প্রশ্ন। নির্বাচনী প্রচারাভিযান জমে উঠলে জামায়াতের মদদে জঙ্গীদের তৎপরতা বেড়ে যেতে পারে। এমনকি নাশকতা, নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে জঙ্গী গোষ্ঠী এমনটাই মনে করা হচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ-আইসিজির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নির্বাচনে রাজনৈতিক মেরুকরণের ফলে জঙ্গীবাদের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত সংস্থাটির প্রতিবেদনে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক মেরুকরণে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে, ইসলামপন্থী জঙ্গীদের তার সুযোগ নেয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে গবেষণার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংঘাত ও তার নিরসনে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেয় আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি। আন্তর্জাতিক এই সংস্থটির বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও আনসার আল ইসলাম বর্তমানে এদেশের সবচেয়ে বড় জিহাদী সংগঠন। এই দুটি সংগঠন ২০১৩ সাল থেকে মুক্তমনা লেখক, বুদ্ধিজীবী, বিদেশী নাগরিক এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়েছে। অনেককে হুমকি দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর বৈরিতা বিশেষ করে জামায়াতের কার্যক্রম জঙ্গীদের জিহাদী তৎপরতার পরিচালনার ক্ষেত্র তৈরি করে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক সংঘাতের সুযোগ নিয়েছে জঙ্গীরা। যদিও ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চরমপন্থী ও জঙ্গীদের দমনে সফল অভিযান পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ। ‘কাউন্টারিং জিহাদিস্ট মিলিট্যান্সি ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের এই গবেষণায় বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সহিংসতার বিরতি ‘সাময়িক’ হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে। প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয় যে, ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈরিতার সুযোগ নিতে পারে জঙ্গীরা। তখন রাজনীতি আরও সহিংস ও বিষাক্ত হতে পারে। এমতাবস্থায় সরকারের উচিত হবে সন্ত্রাস দমনে কৌশল গ্রহণ করা। জঙ্গী হুমকি মোকাবেলায় সামাজিক ও রাজনৈতিক ঐকমত্য কিভাবে গঠন করা যায় সেদিকে সরকারের মন দেয়া উচিত বলে মনে করছে আইসিজি। জেএমবির একটি অংশের সঙ্গে আইএসের যোগাযোগ রয়েছে বলে ধারণা আইসিজির। আর আনসার আল-ইসলামকে আল-কায়েদার দক্ষিণ এশিয়া শাখা সংশ্লিষ্ট হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে সংস্থাটির প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়, জঙ্গীদের প্রথম দফা তৎপরতার সবচেয়ে বড় প্রকাশ ঘটে ২০০৫ সালে একযোগে ৬৩ জেলায় বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে। এরপরে সরকার জেএমবি নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু তারপরেও জঙ্গী গোষ্ঠীটি আবারও নতুন রূপে সংগঠিত হয়। অপর গোষ্ঠী আনসার-আল ইসলামের উত্থান ঘটে, এদিকে জেএমবির আরেকটি শাখার আত্মপ্রকাশ ঘটে, যাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘নিও জামায়াতুল মুজাহিদ’ (নব্য জেএমবি) বলেছে, তারা নিজেদের ইসলামিক স্টেট-বাংলাদেশ বলে পরিচয় দিয়েছে এবং সিরিয়া ও ইরাকে যোদ্ধা পাঠিয়েছে। দ্বিতীয় দফা জঙ্গীবাদের উত্থানের পেছনে রাজনৈতিক বিরোধ কাজ করেছে বলে মনে করে আইসিজি।
×