ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মালামাল উদ্ধার

পাকিস্তান হাইকমিশনে চুরির ঘটনায় গ্রেফতার ৬

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৯ নভেম্বর ২০১৮

পাকিস্তান হাইকমিশনে চুরির ঘটনায় গ্রেফতার ৬

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাকিস্তান হাইকমিশনের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে সেখানে চুরির ঘটনাটি ঘটেছিল। হাইকমিশন অফিসের পেছনের দেয়ালের কাছে থাকা ভাঙ্গা টিনের বেড়ার ফাঁক দিয়ে চোরেরা ঢুকে চুরির ঘটনাটি ঘটায়। চুরির সঙ্গে জড়িত ৬ জন গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের দুই দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে চুরি যাওয়া কম্পিউটারগুলো। কম্পিউটারে থাকা কোন তথ্য নষ্ট হয়নি বলে হাইকমিশন অফিসের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দাবি করেছে পুলিশ। ঘটনাটি নিছক চুরি। এমন চুরির পেছনে অন্যকোন কারণ নেই। যদিও পাকিস্তান হাইকমিশন অফিস দেশ-বিদেশে ঘটনাটি ভিন্নভাবে ইঙ্গিত করে তুলে ধরেছেন বলে দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। চুরির জন্য পাকিস্তান হাইকমিশন নানাভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে দোষারোপ করার চেষ্টা করেছে। চুরি যাওয়া মালামাল দ্রুততার সঙ্গে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হওয়ায় পুলিশের প্রশংসা করার পাশাপাশি তাদের আন্তরিকতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে পাকিস্তান হাইকমিশন কর্তৃপক্ষ। গত ২২ নবেম্বর পাকিস্তান হাইকমিশনের এসি, কম্পিউটারের সিপিইউসহ মালামাল চুরির ঘটনাটি ঘটে। ২৫ নবেম্বর পাকিস্তান হাইকমিশনের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে গুলশান মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এজাহারে বলা হয়, অজ্ঞাতনামা চোরেরা হাইকমিশনের এসি খুলে অফিসের ভেতরে ঢুকে তিনটি সিপিইউ, চারটি ইউপিএস, একটি এসিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায়। ঘটনাটি দেশ বিদেশে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার জন্ম দেয়। চোরদের গ্রেফতার করতে সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়। মঙ্গলবার রাতে গুলশান থানা পুলিশ রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোস্তাক (৩৫), দুলাল মিয়া (৩৪), সজল ওরফে কালু (২২), জাহাঙ্গীর আলম (৪৫), নিমাই বাবু (৪২) ও সেকুল ইসলাম (৩৫) নামের ছয় চোরকে গ্রেফতার করে। তাদের দেয়া তথ্য মোতাবেক উদ্ধার হয় চুরি করা তিনটি সিপিইউ, দুটি ইউপিএস, একটি মনিটর ও চুরির কাজে ব্যবহৃত একটি ভ্যানগাড়ি। বুধবার গুলশান মডেল থানায় ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার এসএম মোস্তাক আহমেদ খান সংবাদ সম্মেলনে জানান, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সজল ওরফে কালু মূলত টোকাই। সে ভ্যান নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে প্লাস্টিকের বোতল কুড়ায়। বোতল কুড়াতে কুড়াতে পাকিস্তান হাইকশিনের পেছনের দেয়ালের কাছে যায়। সেখানে একটি টিনের বেড়া দেখতে পায়। বেড়ার কাছে গিয়ে তা টান দিলে সেটি ফাঁকা হয়ে যায়। এরপর সে ভেতরে ঢুকে একটি নষ্ট এসি দেখতে পায়। এসিটি কোনমতে দেয়ালের মাঝখানে রাখা। এসিটি সেখান থেকে সরালে ভেতরে প্রবেশ করা যায়। সে ঘটনাটি মোস্তাক ও দুলাল মিয়াকে জানায়। পরে এ দু’জন ঘটনাস্থলটি ঘুরে দেখে। গত ২২ নবেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর টিনের বেড়া ফাঁক করে মোস্তাক ও দুলাল ঘরের ভেতরে ঢুকে কম্পিউটারগুলো চুরি করে। সেগুলো টিনের বেড়ার আড়ালে রেখে দেয়। সেখান থেকে তারা বেরিয়ে একটি সিএনজি ভাড়া করে। সিএনজিতে কম্পিউটারগুলো ওঠায়। কিন্তু এসিটি উঠছিল না। ওই সময় কালু ভ্যান নিয়ে সেখানে গেলে তার ভ্যানে এসিটি তুলে দেয়। পরবর্তীতে ওই এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করা হয়। তা বিশ্লেষণ করে চোরদের শনাক্ত করা হয়। প্রথমে কালুকে শনাক্ত করা হয়। একজন সুইপারের সহায়তায় কালুকে শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে সবাইকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়। জাহাঙ্গীর, নিমাই বাবু ও সেকুল ইসলাম চুরির মালামালগুলো কিনেছিল। এ্যালিফ্যান্ট রোডের একজন ব্যবসায়ী চুরি যাওয়া কিছু কম্পিউটার কিনেছিল। তাকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গুলশান মডেল থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক জনকণ্ঠকে জানান, গত ২২ নবেম্বর বৃহস্পতিবার হাইকমিশনের অধিকাংশ কর্মকর্তা কাজ শেষে অন্যত্র চলে যান। কারণ পরের দুই দিন ছুটি ছিল। ২৫ নবেম্বর রবিবার কর্মকর্তারা গিয়ে চুরির ঘটনাটি দেখেন। যে কক্ষে চুরি হয়, সেটি হচ্ছে হাইকমিশনের ডাটা রুম। অর্থাৎ হাইকমিশনের সমস্ত তথ্য ওই রুমে থাকা কম্পিউটারগুলোতে ছিল। এমন ঘটনার পর স্বাভাবিক কারণেই তিনিসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা হাইকমিশনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। হাইকমিশনের উর্ধতন কর্মকর্তারা সরাসরি না হলেও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বার বার চুরির ঘটনাটি পরিকল্পিত বলে ইঙ্গিত করেছেন। এমনকি এমন চুরির সঙ্গে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর যোগসূত্র আছে বলে নানাভাবে ইঙ্গিত করারও চেষ্টা করেছেন। এখানেই শেষ নয়, চুরির পর হাইকমিশনের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওইসব দেশকে তাদের হাইকমিশনের ডাটা রুমে ভয়াবহ চুরির ঘটনার বিষয়ে ইমেল দিয়ে জানায়। তাতে রুমে থাকা টাকা চুরি না হয়ে কম্পিউটার চুরির ঘটনাটি বিশেষভাবে ইঙ্গিত করে জানানো হয়। চুরির ঘটনাটি স্বাভাবিক নয় বলে, বিভিন্ন দেশকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। যদিও তাদের এমন ধারণা হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। কারণ যে রুমে চুরি হয়েছে, সেই রুমে থাকা একাধিক ড্রয়ারে প্রচুর টাকার বান্ডিল ছিল। সেসব টাকা খোয়া যায়নি। টাকা খোয়া না যাওয়ার ঘটনায়, হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের চুরির ঘটনাটি স্বাভাবিক নয় বলে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে। যদিও চোরদের গ্রেফতারের পর এবং চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধারের পর হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের ঘটনাটি নিছক চুরি বলে বিশ্বাস হয়েছে। হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ওসি জানিয়েছেন, তাদের কম্পিউটারগুলো অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। কোন কম্পিউটারেরই হার্ডডিস্ক খোয়া যায়নি। আর কমিম্পউারগুলো ডাটা পাসওয়ার্ড দিয়ে সুরক্ষিত। এজন্য ধারণা করা হচ্ছে, কোন তথ্যই খোয়া যায়নি বা নষ্ট হয়নি। পুলিশের তাৎক্ষণিক এমন তৎপরতায় পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মকর্তারা খুশি। স্বল্প সময়ের মধ্যেই তাদের ভিসা প্রসেসিং কার্যক্রম শুরু হবে। কারণ কম্পিউটার চুরি হওয়ার কারণে তাদের যাবতীয় কর্মকা- একপ্রকার বন্ধ ছিল।
×