ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী কানেকশন- সাকিলার সেই কাহিনী

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৯ নভেম্বর ২০১৮

জঙ্গী কানেকশন- সাকিলার সেই কাহিনী

শংকর কুমার দে ॥ জঙ্গী অর্থায়নের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সেই ব্যারিস্টার সাকিলা ফারজানাকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছে ঐক্য ফ্রন্টের অন্যতম দল বিএনপি। নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়েছে ফারজানা সাকিলাকে। জঙ্গী সংগঠন হামজা ব্রিগেডকে অর্থায়নের অভিযোগে রাজধানী ঢাকার ধানম-ি থেকে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী সাকিলা ও তার দুই সহকর্মী আইনজীবীকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট। ব্যারিস্টার সাকিলাকে গ্রেফতারের পর তাদের ওই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীর লটমনি পাহাড়ে জঙ্গী আস্তানা ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়া হয়। হাটহাজারী থানায় সন্ত্রাস ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের আরেকটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় তাদের। কয়েকদফা রিমান্ড শেষে সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে ২০১৬ সালের ৭ জুন কারাগার থেকে মুক্তি পান সাকিলা। জঙ্গীবাদে অর্থায়নকারী সেই ব্যারিস্টার সাকিলাকে ধানের শীষের মনোনয়ন দেয়ার পর রীতিমতো রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় ও হৈচৈ পড়ে গেছে। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার সাকিলা ফারজানা শহীদ হামজা ব্রিগেডের সংগঠক মনিরুজ্জামান ডনের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে এক কোটি আট লাখ টাকা দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছিলেন তার আইনজীবী। ওই অর্থ সানজিদা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে জমা করেছিলেন সাকিলা। তবে এ্যাকাউন্টটি যে মনিরুজ্জামান ডনের তা তার জানা ছিল না বলেছিলেন তার আইনজীবী। মনিরুজ্জামান ডন জবানবন্দীতে বলেছেন, সানজিদা এন্টারপ্রাইজের এ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে এবং এ টাকা দিয়ে বাঁশখালীতে জঙ্গী প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র কেনা হয়েছে। জঙ্গী গ্রুপকে অস্ত্র কেনার জন্য কোটি টাকা যোগান দেয়ার অভিযোগে র‌্যাবের হাতে আটক হওয়া ব্যারিস্টার ফারজানা সাকিলা বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার পর আবারও আলোচনায় ফিরে এসেছে জঙ্গীবাদের তৎপরতার বিষয়টি। ২০১৫ সালে ব্যারিস্টার ফারজানা সাকিলা গ্রেফতার হওয়ার পর দেশ-বিদেশে আলোড়ন তোলা সেই ঘটনার পর ফের আড়ালে চলে গিয়েছিল তার নাম। তবে মামলা থেকে জামিন নিয়ে নিজের এলাকা হাটহাজারীর রাজনৈতিক বলয়ে বিচরণ বেড়ে যায় ব্যারিস্টার সাকিলা ফারজানার। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম-সম্পাদক পদধারী এই নেত্রী এবার নির্বাচনে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে জঙ্গীবাদ থেকে তার নাম মুছতে প্রস্তুতি নিয়েছেন অনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক অভিষেকের। এজন্য ব্যাপক শোডাউনেরও প্রস্তুতি নিয়েছেন ব্যারিস্টার সাকিলা। ব্যারিস্টার সাকিলার রাজনৈতিক আত্মপ্রকাশকে নিরীক্ষা করা হচ্ছে। পিতার পথ ধরে যদি তিনি এলাকায় যথেষ্ট সাড়া জাগাতে পারেন তাহলে মনোনয়নের পাল্লা তার দিকে ঝুঁকবে। পরবর্তীতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী বা পুত্র উত্তর চট্টগ্রামের রাউজানের বিএনপির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পাবেন বলেও মনে করা হচ্ছে। সাকিলার বাবা প্রয়াত সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম এক সময় ওই আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন। সংসদে হুইপের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদেও ছিলেন তিনি। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, ব্যারিস্টার সাকিলা ফারজানা ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট আরও কয়েকজনের সঙ্গে ঢাকা থেকে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, হামজা ব্রিগেড নামে একটি জঙ্গী সংগঠনকে অস্ত্র কেনার জন্য এক কোটি ৮ লাখ টাকার যোগান দিয়েছিলেন তারা। ঘটনার পর তাদের বাঁশখালী ও হাটহাজারী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী ধারায় মামলা করে গ্রেফতার দেখানো হয়। শহীদ হামজা ব্রিগেডকে অর্থায়নের দায়ে গ্রেফতার ব্যারিস্টার সাকিলা ফারজানাসহ তিন আইনজীবীকে আরও একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‌্যাব। র‌্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ তখন বলেছিলেন, হাটহাজারী থেকে যারা গ্রেফতার হয়েছিল তাদের সঙ্গে তিন আইনজীবীর যোগাযোগের তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। ওই মামলায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। তাদের হাটহাজারী থানার মামলায় শ্যোন এ্যারেস্ট ও রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা পিপি আবুল হাসেম তখন বলেছিলেন, তিন আইনজীবীকে হাটহাজারীর মামলায় গ্রেফতার ও পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছে র‌্যাব। এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। প্রসঙ্গত, জঙ্গী কার্যক্রমে এক কোটি আট লাখ টাকা জোগান দেয়ার অভিযোগে সাবেক হুইপ এবং বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার সাকিলা ফারজানাসহ তিন আইনজীবী ১৮ আগস্ট গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ নিয়ে এসএইচবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ জঙ্গী সংগঠনটিকে কারা আর্থিক সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা করত সে ব্যাপারে অনুসন্ধান চালিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা। র‌্যাবের অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গী অর্থায়নে সহায়তা করছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। ব্যাংকটির মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিংয়ের সহায়তায় সারা দেশে জঙ্গী অর্থায়নের বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। র‌্যাবের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। এ ছাড়া র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার ব্যারিস্টার সাকিলা ফারজানা, এ্যাডভোকেট হাসানুজ্জামান লিটন ও এ্যাডভোকেট মাহফুজ চৌধুরী বাপনও এ ব্যাংকের মাধ্যমে জঙ্গী অর্থায়নে যুক্ত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
×